Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

‘আপনার মায়ের পা পাওয়া গিয়েছে, নিয়ে যান...’

শনাক্তকরণ বৃহস্পতিবার রাতে। শুক্রবার ভোরে মৃতদেহের সৎকারও শেষ। এই অবস্থায় মৃতার ছেলের কাছে পুলিশের ফোন: ‘আপনার মায়ের পা পাওয়া গিয়েছে। নিয়ে যান।’

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

শনাক্তকরণ বৃহস্পতিবার রাতে। শুক্রবার ভোরে মৃতদেহের সৎকারও শেষ। এই অবস্থায় মৃতার ছেলের কাছে পুলিশের ফোন: ‘আপনার মায়ের পা পাওয়া গিয়েছে। নিয়ে যান।’

শুনেই হতভম্ব হয়ে যান সঞ্জয় জোশী। বৃহস্পতিবার বিবেকানন্দ রোডে নির্মীয়মাণ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনায় আশা জোশী নামে এক বৃদ্ধার পা-কাটা মৃতদেহ পাঠানো হয়েছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। দেহটি শনাক্ত করেন তাঁর ছেলে সঞ্জয়। রাতে ময়না-তদন্তের পরে দেহটি তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ দিন মায়ের শেষকৃত্য করেছেন সঞ্জয়।

আরও পড়ুন: হাহুতাশ রক্ত চেয়ে, শিবির লুকিয়ে চুরিয়ে

তা হলে দুপুরে ওই ফোন কেন? পুলিশ কার পা উদ্ধারের কথা বলছে? এই প্রশ্ন উড়ে বেড়াচ্ছে মেডিক্যালে। সঞ্জয় এবং তাঁর পরিবারের প্রশ্ন, তাঁর মায়ের দেহ তো শুক্রবার ভোরেই সৎকার হয়ে গিয়েছে। তা হলে কীসের ভিত্তিতে প্রমাণিত হল যে, পরে পাওয়া পা-টি তাঁর মায়ের?

এই প্রশ্নের কোনও সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেননি হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। সুপার শিখা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্নটা শুনে বেশ কিছু ক্ষণ চুপ করে ছিলেন। তার পরে তাঁর জবাব, ‘‘ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে হয়তো প্রমাণ হবে। পা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে।’’

সঞ্জয়ের মায়ের দেহ থেকেও কি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল? ওই কাটা পা উদ্ধারের আগেই তো দেহ সৎকার হয়ে গিয়েছে। তা হলে?

এই প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি শিখাদেবীর কাছে। তিনি জানান, দেহ হোক বা কাটা অংশ, তা পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের। এটা তারাই বলতে পারবে।

কী বলছে পুলিশ?

পুলিশের বক্তব্য, হাসপাতাল তাদের জানিয়েছে, ওই কাটা পা আশা জোশীরই। হাসপাতালের বক্তব্যের ভিত্তিতেই তারা সেটি পরিবারের হাতে তুলে দিতে চেয়েছে। পা কার, তা মিলিয়ে দেখার দায়িত্ব তাদের নয়।

আপাতত কী করণীয়, ভেবে উঠতে পারছে না আশাদেবীর পরিবার। সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘কখনও যে এমন ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবিনি। মায়ের কাটা পা নিয়ে আবার দাহ করতে

যেতে হবে ভেবেই কেমন শিউরে উঠছি।’’ শুক্রবার রাতের বিমানে হায়দরাবাদে বড় ছেলের কাছে যাওয়ার কথা ছিল আশাদেবীর। ঠিক তার আগে, বৃহস্পতিবার যান বড়বাজারের কাছে একটি মন্দিরে পুজো দিতে। ফেরার পথে উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ওই ভয়াবহ ঘটনার শিকার হন বৃদ্ধা।

দুর্ঘটনায় আহতেরা কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ দিন দুপুরে মেডিক্যাল চত্বরে উদ্‌ভ্রান্তের মতো পায়চারি করছিলেন পরমাত্মা যাদব। তিনি মারোয়াড়ি রিলিফ সোসাইটি হাসপাতালের কর্মী। বৃহস্পতিবার দুপুরে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আচমকাই বুকটা কেঁপে উঠেছিল তাঁর। কিছু ক্ষণের মধ্যেই অপারেশন থিয়েটার থেকে খবর আসে, তাঁর স্ত্রী সবিতা ওই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে ভর্তি আছেন তাঁদের হাসপাতালেই। বৃহস্পতিবার মারোয়াড়ি রিলিফ সোসাইটিতেই ছিলেন সবিতা। শুক্রবার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মেডিক্যাল কলেজে। এখন আকণ্ঠ উদ্বেগ নিয়ে মেডিক্যালেই প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে পরমাত্মার। উড়ালপুলের নীচে ডিউটি করতে গিয়ে আহত হন জোড়াবাগান ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট সন্দীপ হালদার। মাথায় আঘাত লাগায় প্রথমে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে স্থানান্তরিত করা হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ-এ। তাঁর মাথার ভিতরে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে এখনও। কোনও কথা বলছেন না সন্দীপ। সারা দিন শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছেন সিলিংয়ের দিকে। আর সমানে কেঁপে চলেছে ডান হাত।

এই ‘ট্রমা’র ছবিই সর্বত্র। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অনিল সরকার বৃহস্পতিবার সারা রাত দু’‌চোখের পাতা এক করতে পারেননি।

ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পরেও ছটফট করেছেন সমানে। ওয়ার্ডের ডাক্তার-নার্সেরা জানান, ভর্তির পর থেকে একটা শব্দও উচ্চারণ করেননি তিনি। বছর চল্লিশের কচি দাস রাতে ঘুমোতে পেরেছেন ঠিকই। কিন্তু ঘুমের মধ্যেই বারবার চিৎকার করে উঠেছেন আতঙ্কে। শারীরিক চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ওই আহতকে মানসিক ভাবে স্থিতিশীল করাটা এই মুহূর্তে খুবই জরুরি বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

অন্য বিষয়গুলি:

flyover vivekananda flyover collaps
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE