মৃত মহম্মদ শাহিদের ছোট ছেলে মহম্মদ সাবির। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
এলাকার সব চেয়ে বড় মসজিদ। স্থানীয় বাসিন্দারা চেনেন জামা মসজিদ নামে। তারই পাথরে বাঁধানো সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সদ্য পিতৃহারা বিধ্বস্ত এক চেহারা। বললেন, ‘‘মেনে নিচ্ছি, সব দোষ আমাদের। ব্যাপারটা এত দূর গড়াবে, বুঝিনি!’’ আশপাশে দাঁড়ানো জনা পঞ্চাশের ভিড়টাও একসঙ্গে বলে উঠল, ‘‘দয়া করে সব ঠিক করুন। শাহিদ ভাই ফিরবেন না। কিন্তু এ জন্য আরও অনেক রোগী মারা যেতে পারেন!’’
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে মেরেকেটে দু’কিলোমিটার দূরে ট্যাংরার বিবিবাগান লেন। সেখানকারই গলি-তস্য গলি পেরিয়ে জামা মসজিদ লাগোয়া ঘরে দুই ছেলে ও এক বৌমাকে নিয়ে থাকতেন মহম্মদ শাহিদ। গত সোমবার এন আর এস হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু ও তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহেই এখন উত্তাল রাজ্য। রোগীর পরিজনেদের হাতে নিগৃহীত হওয়ার প্রতিবাদে চিকিৎসকেদের কর্মবিরতি ছড়িয়ে পড়েছে জেলায় জেলায়। চিকিৎসক অমিল বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও। যার জেরে রাজ্য জুড়েই স্বাস্থ্য পরিষেবা কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। এমনই পরিস্থিতির মধ্যে বৃহস্পতিবার যাওয়া হয়েছিল মৃত শাহিদের মহল্লায়।
শ্বশুরের খোঁজে আসা শুনেই কাঁদতে শুরু করলেন বিবিবাগান লেনে টালির চাল, সবুজ রঙা দেওয়ালের ঘরে বসা মৃতের পুত্রবধূ। শাহিদের বড় ছেলে মহম্মদ ইসরাইল স্থানীয় জামা মসজিদের ছোট ইমাম। এর পরে তাঁর সঙ্গেই কথা বলাতে নিয়ে যাওয়ার পথে এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘খুব ভয়ে আছি। হাসপাতালে হাসপাতালে যা হচ্ছে, তাতে বড় কিছু হয়ে গেলে আমরা এখানে থাকতে পারব না!’’
তবে জামা মসজিদে পৌঁছে দেখা মেলেনি ছোট ইমামের। নমাজের সময়, তাই তাঁর বদলে কথা বললেন মৃতের ছোট ছেলে মহম্মদ সাবির। তিনি দাবি করলেন, এক মাসের রোজা শেষে কিছুটা দুর্বল ছিলেন তাঁর বাবা। গত শনিবার মসজিদেই অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে এন আর এসে ভর্তি করানো হয়। গত সোমবার রোগীকে আর কিছুই খেতে দেওয়া হয়নি। বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ শাহিদের অবস্থার অবনতি হলেও কোনও চিকিৎসক তাঁকে দেখতে আসেননি বলে অভিযোগ। সাবিরের কথায়, ‘‘মহম্মদ কালিম আমার বন্ধু। ও বাবার সঙ্গেই ছিল। অবস্থা খারাপ দেখে এক ডাক্তারকে ডাকতে গেলে তিনি সিনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। সিনিয়র ডাক্তারেরা একটা ঠান্ডা ঘরে বসে ছিলেন। জরুরি সময়ে সেখানে গিয়ে সাহায্য চাইলেও তাঁরা দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেন।’’
এর পরে আর এক চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনিও সিনিয়রদের ডাকতে বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বলে সাবিরের অভিযোগ। তাঁর কথায়, ‘‘তখনই কালিম ওই ডাক্তারের হাত ধরে টেনে জোর করে রোগীর সামনে নিয়ে আসে। কোনও রকমে বাবাকে দেখলেও মুখে কিছু না বলেই ওই ডাক্তার চলে যান। এতেই নাকি ডাক্তারেরা রেগে গিয়েছেন। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে বাবার মৃত্যু হলেও রাত পর্যন্ত দেহ ছাড়েননি ওঁরা। ক্ষমা না চাইলে দেহ দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন ওঁরা।’’
এর পরে এন্টালি থানার পুলিশ গিয়ে চিকিৎসকেদের বোঝান। তাতেও পরিস্থিতি পাল্টায়নি। সাবিরের দাবি, ‘‘এর পরেই মাথা ঠিক রাখতে না পেরে আমাদের ছেলেরা পাথর ছুড়েছে। কিন্তু ব্যাপারটা এত দূর যাবে, বুঝিনি।’’
সাবিরের কথা শেষ হতেই সামনে দাঁড়ানো ভিড় থেকে এক জন চেঁচিয়ে বললেন, ‘‘ওই ডাক্তারদের জন্যই ২০১২ সালে মারা গিয়েছিলেন শাহিদ ভাইয়ের স্ত্রী!’’ উত্তেজিত ভিড়কে শান্ত করে সাবির বলেন, ‘‘কই, তখন তো আমরা এ সব করিনি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy