ফাইল চিত্র।
গত মার্চেই লোকসভার অধিবেশনে প্রসঙ্গটি উঠেছিল। দেশে পুরনো গাড়ির সংখ্যা কত, সে প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও হাইওয়ে মন্ত্রক যে পরিসংখ্যান দিয়েছিল, তাতে চোখ কপালে উঠেছিল অনেকের। মন্ত্রক জানিয়েছিল, সারা দেশে ১৫-২০ বছর এবং ২০ বছরের বেশি পুরনো গাড়ি মিলিয়ে সংখ্যাটি হল প্রায় ৪ কোটি! যা বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ।
ব্যতিক্রম নয় পশ্চিমবঙ্গও। কারণ, তথ্য বলছে, এ রাজ্যে ১৫-২০ বছর এবং ২০ বছরের বেশি পুরনো গাড়ির সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২২ লক্ষ! পুরনো গাড়ির সংখ্যার নিরিখে দেশের মধ্যে এ রাজ্যের স্থান সপ্তম।
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যানবাহন বাতিল নীতি (ভেহিকল স্ক্র্যাপেজ পলিসি) চালুর ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীদের একাংশ। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই নীতি রাস্তা থেকে পুরনো ও দূষণ সৃষ্টিকারী যানবাহন সরানোর ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করবে। বাণিজ্যিক, ব্যক্তিগত— সব ধরনের গাড়িই চলাচলযোগ্য কি না, সেটা দেখা হবে। বাধ্যতামূলক ভাবে ফিটনেস পরীক্ষা করাতে হবে। যে সমস্ত গাড়ি উত্তীর্ণ হতে পারবে না, সেগুলি বাতিল করা হবে। মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ধাপে ধাপে পুরনো গাড়ি বাতিল করে সেগুলির বিভিন্ন অংশ নতুন গাড়িতে ব্যবহার করা হবে। গাড়ির মালিক চলাচলের অযোগ্য গাড়িকে ‘স্ক্র্যাপ’ করলে পথকর, গাড়ির মূল্য, রেজিস্ট্রেশনে ছাড়-সহ একাধিক সুবিধা পাওয়া যাবে।
উচ্ছ্বাসের মধ্যেও পরিবেশকর্মীদের সতর্কবার্তা, দূষণ রোধে একাধিক নীতি ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই সব নীতি খাতায়কলমেই রয়ে গিয়েছে। যানবাহন বাতিল নীতিও যেন সেই তালিকায় না চলে যায়। এ ক্ষেত্রে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ টেনে আনছেন। ২০০৫ ও ২০০৭ সালে গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়ার দূষণ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছিল। পরে সেটি যায় জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চে। তার পর থেকে পরিবেশ আদালতের একাধিক নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ১৫ বছরের পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ি কলকাতা ও হাওড়ায় দিব্যি চলছে। অথচ ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’(নিরি)-এর রিপোর্ট বলছে, কলকাতা ও হাওড়ায় বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম ১০) ও অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) অন্যতম প্রধান উৎসই হল যানবাহনের ধোঁয়া (২২ শতাংশ)। এক পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘গাড়ির ধোঁয়ার দূষণ রোধে সরকারের তেমন সক্রিয়তা নজরে পড়ে না।’’ যদিও রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘করোনা সংক্রমণের কারণে অনেক দিন বৈঠক করা যায়নি। তা পরিবেশ আদালতে জানানোও হয়েছিল। আদালতের নির্দেশ মানতে রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর।’’
প্রসঙ্গত, দূষণ কমাতে গাড়ির ধোঁয়া নির্গমন সংক্রান্ত কঠিন বিধি রয়েছে সারা বিশ্বেই। ভারতে গাড়ির ধোঁয়া থেকে বায়ুদূষণ মাপার মাপকাঠি হল ‘ভারত স্টেজ’ (বিএস)। ২০০০ সালে শূন্য থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে বেড়েছে এই মাপকাঠি। ২০১০ সালের ১ এপ্রিল থেকে দেশের ১৩টি শহরে বিএস-৪ বিধি চালু হয়। ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে দেশে সব ধরনের গাড়ির জন্যই তা চালু হয়েছে। পরিবেশ আদালতের নির্দেশ ছিল, এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যাতে প্রথমে কলকাতা ও হাওড়া এবং পরবর্তীকালে, রাজ্যের অন্যত্র শুধুমাত্র বিএস-৬ মাপকাঠির গাড়িই (যে মাপকাঠিতে গাড়ির দূষণ আরও কম হবে) চলে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এক পরিবেশবিদ বলছেন, ‘‘বিএস-৪ মাপকাঠির নীচেও অনেক গাড়ি বর্তমানে কলকাতা ও হাওড়ায় চলছে।’’ যানবাহন বাতিল নীতি প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট মামলার আবেদনকারী, পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত আবার বলছেন, ‘‘ভেহিক্ল স্ক্র্যাপেজ পলিসির জন্য হয়তো অনেক টাকার লেনদেন হবে। তবে পুরনো গাড়ি রাস্তায় বেরোলেই বড় আর্থিক জরিমানার দরকার ছিল। সেই টাকা পরিবেশ উন্নয়নের খাতে ব্যয় করতে হত। তা আর হয় কই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy