Advertisement
২২ জানুয়ারি ২০২৫
Gorfa

মানসিক অসুস্থ ব্যক্তি খুনে অভিযুক্ত পরিবার, ধুন্ধুমার গরফায়

গরফা থানা থেকে কিছুটা দূরে ১৫ নম্বর মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা শম্ভুনাথ মণ্ডল। তাঁর প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, শম্ভুনাথের দুই ছেলে। বড় ছেলে পুর্ণেন্দু মণ্ডল (৪০) মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন।

খুনে অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙচুর। নিজস্ব চিত্র।

খুনে অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙচুর। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২০ ১৯:৫৭
Share: Save:

মানসিক ভাবে অসুস্থ এক ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে ধুন্ধুমার গরফা থানা এলাকার মণ্ডলপাড়ায়। মৃত ব্যক্তিকে তাঁর বাবা-মা-ভাই পরিকল্পনা করে কুপিয়ে খুন করেছেন, এমন অভিযোগ তুলে নিহতের বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেন প্রতিবেশীদের একাংশ। পুলিশ রুখতে গেলে, তাঁদের উপরেও জনতা মারমুখী হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। পরে বিভাগীয় ডিসি বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। অভিযুক্ত বাবা-মা-ভাইকে উদ্ধার করে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।

গরফা থানা থেকে কিছুটা দূরে ১৫ নম্বর মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা শম্ভুনাথ মণ্ডল। তাঁর প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, শম্ভুনাথের দুই ছেলে। বড় ছেলে পুর্ণেন্দু মণ্ডল (৪০) মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, বুধবার দুপুরে তাঁরা শম্ভুনাথের বাড়ি থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পান। খোঁজ করলে শম্ভুনাথ তাঁদের জানান যে, পুর্ণেন্দুর মানসিক সমস্যা বেড়েছে তাই তাঁকে একটি ঘরে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বাপি মণ্ডল নামে এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘পুর্ণেন্দুর মানসিক সমস্যা যে ছিল, তা আমরা জানতাম। পাভলভেও চিকিৎসা হয়েছে।” পরে প্রতিবেশীরা দেখেন পুর্ণেন্দুকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

প্রতিবেশীদের অভিযোগ, কিছু একটা ঘটনা ঘটেছে আঁচ করেই তাঁরা গরফা থানার পুলিশকে খবর দেন। বাপি-সহ অন্য প্রতিবেশীদের দাবি, গরফা থানা থেকে কোনও পুলিশ আধিকারিক আসেননি। এর পর লালবাজারেও জানানো হয় বলে দাবি প্রতিবেশীদের। রাতেই তাঁরা খবর পান, হাসপাতালে মারা গিয়েছেন পুর্ণেন্দু। যদিও কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। অন্য এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশ খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। তত ক্ষণে আহতকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া হয়।”

আরও পড়ুন: লকডাউনের মেয়াদ আরও ২ সপ্তাহ বাড়ানোর প্রস্তাব রাজ্যের?

পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার দুপুরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত নিয়ে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয় পুর্ণেন্দুকে। সেখানে রাত ১০টা৫০ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়। সেই মৃত্যুর খবর হাসপাতালের তরফ থেকে জানানো হয় গরফা থানায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ শম্ভুনাথের বাড়িতে তদন্তে গেলে ২০০ থেকে ২৫০ বাসিন্দা, যাঁদের অধিকাংশই মহিলা, পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, শম্ভুনাথের ছোট ছেলে নিয়মিত পুর্ণেন্দুর উপর অত্যাচার করতেন। এবং তাতে বাধা দিতেন না শম্ভুনাথ এবং তাঁর স্ত্রী। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, খুন করা হয়েছে পুর্ণেন্দুকে।

আরও পড়ুন: শ্রমিকদের থেকে ট্রেনের ভাড়া নেওয়া যাবে না, পরিযায়ী নিয়ে একগুচ্ছ নির্দেশিকা সুপ্রিম কোর্টের

ভেড়ি, স্টিলের জিনিসপত্রের দোকান ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ব্যাবসা রয়েছে শম্ভুনাথের। ওই এলাকায় অনেক স্থাবর সম্পত্তিও রয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। এলাকায় বেশ সম্পন্ন পরিবার বলে পরিচিত শম্ভুনাথের পরিবার। প্রতিবেশীদের একাংশের অভিযোগ, পুর্ণেন্দুর ভাই সম্পত্তির লোভে খুন করেছেন দাদাকে। এবং তাতে সায় রয়েছে তাঁর বাবা-মায়েরও। এই অভিযোগ তুলে পুলিশের সামনেই বাসিন্দাদের একাংশ শম্ভুনাথের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে দেয়। পুলিশ বাধা দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গেও ধস্তাধস্তি হয় বাসিন্দাদের। গরফা থানার পুলিশের তুলনায় বিক্ষোভকারীরা দলে ভারী হওয়ায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয় পুলিশ।

বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান ডিসি (দক্ষিণ শহরতলি) প্রদীপ যাদব। তার মধ্যেই উত্তেজিত জনতা শম্ভুনাথের বাড়ি ঢুকে তাঁদের মারধর করতে শুরু করে। বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। পুলিশ কোনও ক্রমে অভিযুক্তদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

আরও পড়ুন: সব খেয়ে নিল কালিন্দী, শুকনো খাবার চাইছে সাতরা

এ দিন সন্ধ্যায় লালবাজারের তরফে জানানো হয়েছে ওই তিন জনকেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জেরায় প্রাথনমিক ভাবে মৃতের ভাই এবং বাবা-মা জানিয়েছেন, মানসিক অসুস্থতা থেকে বুধবার দুপুরে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং একটি বটি নিয়ে নিজেই নিজের গায়ে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করতে থাকে। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘এখনও মৃতের বাবা-মা এবং ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে যাঁরা বাড়ি ভাঙচুর করেছেন এবং অশান্তি পাকিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Murder Gorfa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy