দমদম পুরসভার বাইরে অভিযুক্ত জগ্গু সাহানি। সোমবার দুপুরে। নিজস্ব চিত্র
তোলাবাজির হাত থেকে রেহাই নেই কলকাতা বিমানবন্দর চত্বরে চলা প্রকল্পেরও! তোলা না দিলে খারাপ পরিণতির হুমকি আসছিল বেশ কয়েক দিন ধরে। কথা না শোনায় দিল্লির ওই নির্মাণ সংস্থার কর্মীদের বেধড়ক মারধরের পরে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে প্রাণে মারার হুমকি দিল দুষ্কৃতীরা। নির্মাণ সংস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে চার জনের মধ্যে সচিন সিংহ ও গোপাল বাহাদুরকে সোমবার রাতে গ্রেফতার করেছে এনএসসিবিআই থানা। এখনও অধরা আরও দু’জন। এই পরিস্থিতিতে ‘ভীত-সন্ত্রস্ত’ কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা চেয়ে এ দিন ‘এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া’র (এএআই) দ্বারস্থ হয়েছে ওই নির্মাণ সংস্থা।
ভিআইপি চার নম্বর গেটের কাছে আধুনিক প্রযুক্তির এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের টাওয়ার তৈরি হচ্ছে। ওই কাজের বরাত পেয়েছে ‘রামা কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড’। দরপত্রের মাধ্যমে ওই সংস্থার কাছ থেকে প্রকল্প এলাকায় মাটি কাটার কাজের বরাত পেয়েছে কলকাতার একটি সংস্থা ‘এম এম এন্টারপ্রাইজ’। ওই সংস্থার এক কর্মীর অভিযোগ, প্রায় এক মাস ধরে জগ্গু সাহানি, রাজেন নায়ার এবং তাদের দলবল প্রকল্প এলাকায় কয়েক লক্ষ টাকা তোলা দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু সংস্থার মালিক কোনও ভাবেই তাদের চাপের কাছে নতিস্বীকার করেননি। শুক্রবার রাত ১টা নাগাদ দু’টি মোটরবাইকে জগ্গু, রাজেন, গোপাল ও সচিন প্রকল্প এলাকায় ঢুকে ফের টাকা চায়। তাদের দাবি ছিল, রাতে ১০ লক্ষ টাকা জগ্গু ও রাজেনের কাছে দিয়ে আসতে হবে। টাকা দেওয়ার আগে পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়।
সে কথায় গুরুত্ব না দিয়ে কাজ চালিয়ে যান সংস্থার কর্মীরা। অভিযোগ, রাত ৩টে নাগাদ মত্ত অবস্থায় লাঠি ও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে এ বার দু’টি বাইকে জগ্গু ও রাজেন দলবল নিয়ে প্রকল্প এলাকায় হাজির হন। সেই সময়ে সেখানে দু’জন নিরাপত্তারক্ষী ছাড়াও ছিলেন রামা কনস্ট্রাকশনের ইঞ্জিনিয়ার মুকুল দেবশর্মা, এমএম এন্টারপ্রাইজের সুপারভাইজার রঞ্জিত মণ্ডল এবং আর এক কর্মী কনক বর্মণ। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বাইক থেকে নেমে জগ্গুরা প্রথমে দু’জন নিরাপত্তারক্ষীকে লাঠি দিয়ে মারধর করেন। তার পরে রিভলভারের বাঁট দিয়ে মুকুলবাবুর মাথা ফাটিয়ে দেন। তার পরে মাটি কাটার যন্ত্রের চালকের দিকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে জগ্গু, রাজেনরা এগিয়ে যান। চালককে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে ভয়ে কাঁদতে থাকেন সুপারভাইজার। প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘জগ্গু বলছিল, এখানকার দাদা সে। টাকা না দিলে প্রাণে মারবে।’’ তবে এই রামা কনস্ট্রাকশন জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে জগ্গু ও রাজেন ছিল কি না, সে ব্যাপারে তারা নিশ্চিত নয়। এমএম এন্টারপ্রাইজের কর্মীর ঘটনার বিবরণের সঙ্গে দিল্লির সংস্থার অভিযোগের ফারাকের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ঘটনা প্রসঙ্গে জগ্গুর প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
এ দিন এএআই কর্তৃপক্ষকে দেওয়া চিঠিতে দিল্লির ওই নির্মাণ সংস্থা লিখেছে, ‘আমাদের কর্মী ও শ্রমিকেরা এই ঘটনার পরে ভীত। তাঁরা কাজ করতে চাইছেন না। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করছি’। এ বিষয়ে এএআই-এর পূর্বাঞ্চল শাখার এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর এস পি যাদব বলেন, ‘‘ঠিক কী ঘটেছে, খোঁজ নিতে হবে। যা বলা হচ্ছে, তা সত্যি হলে নিশ্চিত ভাবে ব্যবস্থা নেব।’’
দিল্লির নির্মাণ সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘দেশের কোথাও এই অভিজ্ঞতা হয়নি। বিমানবন্দর চত্বরের মতো হাই-সিকিওরিটি জোনে এ রকম হবে, আশা করিনি। দরপত্রের মাধ্যমে একটি সংস্থা কাজের বরাত পেয়েছে। এটাই তো নিয়ম। কিন্তু দমদমে নাকি সিন্ডিকেটই সিস্টেম।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, বিমানবন্দর চত্বরে দমদম পুরসভার এক ‘প্রভাবশালী’ তৃণমূল নেতার মদতেই এই ‘সিস্টেম’ চালান জগ্গু। নিউ কোয়ার্টার্স এলাকায় তৃণমূলকর্মী হিসেবে তাঁর পরিচিতিও রয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে দমদমের সেই ‘প্রভাবশালী’ তৃণমূল নেতার সঙ্গে দেখা করতে পুরসভায় গিয়েছিলেন জগ্গু।
বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্ব মূলত সিআইএসএফ-এর। তবে অভিযোগ কতটা সত্যি, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
অভিযুক্তদের তৃণমূল যোগ প্রসঙ্গে দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বরুণ নট্ট বলেন, ‘‘বিমানবন্দর ও সংলগ্ন এলাকা তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে খুব শান্তিপূর্ণ রয়েছে। এ রকম কিছু ঘটে থাকলে আইন আইনের পথে চলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy