Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

মুখে তোলা শসাটা ছিটকে পড়ল হঠাৎ, নালার বিস্ফোরণে ট্যাংরায় আতঙ্ক

কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ওই রাস্তার নীচে নিকাশি নালায় জমে গিয়েছিল অতিরিক্ত পরিমাণ মিথেন গ্যাস। যার চাপে এই বিস্ফোরণ। তাতেই মাত্র ৫০০ মিটার রাস্তার নীচে কেঁপে ওঠে পরপর ছ’টি জায়গা।

অঘটন: বিস্ফোরণের পরে জল দিয়ে ম্যানহোল ঠান্ডা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। বৃহস্পতিবার, গোবিন্দ খটিক রোডে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

অঘটন: বিস্ফোরণের পরে জল দিয়ে ম্যানহোল ঠান্ডা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। বৃহস্পতিবার, গোবিন্দ খটিক রোডে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৯ ০২:১৪
Share: Save:

রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে শসা খাচ্ছিল বছর আটের এক বালক। আচমকা কানফাটানো আওয়াজ। শব্দের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, ছেলেটির হাতে থাকা শসা ছিটকে পড়ে।

রাস্তা থেকে সবে বাড়ির গলিতে পা দিয়েছিলেন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ। কিছু বোঝার আগেই তাঁর পিঠে এসে পড়ল ভারী একটি জিনিস। টাল সামলাতে না পেরে পাশের দেওয়ালে ধাক্কা খেলেন ওই ব্যবসায়ী।

উপরের ঘটনা দু’টি ঘটেছে বৃহস্পতিবার দুপুরে, ট্যাংরা থানা এলাকার গোবিন্দ খটিক রোডে। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ওই রাস্তার নীচে নিকাশি নালায় জমে গিয়েছিল অতিরিক্ত পরিমাণ মিথেন গ্যাস। যার চাপে এই বিস্ফোরণ। তাতেই মাত্র ৫০০ মিটার রাস্তার নীচে কেঁপে ওঠে পরপর ছ’টি জায়গা। ভেঙেচুরে যায় ম্যানহোল। উপড়ে আসে রাস্তার পিচ ও পাথর। ঘটনার আকস্মিকতায় তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। খবর পেয়ে পৌঁছন পুলিশ, দমকল ও পুরসভার কর্মীরা। এলাকাবাসীরা জানান, শব্দের তীব্রতায় কয়েক জন রাস্তায় পড়ে যান। তবে বিস্ফোরণে কেউ জখম হননি।

পুরসভার নিকাশি দফতরের এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার জানান, গোবিন্দ খটিক রোডের নীচে ইটের ওই নিকাশি নালা ব্রিটিশ আমলে তৈরি। অভিযোগ, প্রায় সাত ফুট ব্যাসের ওই নালা নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। যার ফলে নিকাশির জল এবং জঞ্জালের মিশ্রণ থেকে তৈরি হয়েছে মিথেন গ্যাস। তার পরিমাণ এত দিন ধরে বেড়ে চলছিল। জমে থাকা ওই গ্যাস এ দিন তীব্র শব্দে মাটি ভেদ করে উঠে আসে। আর তার জেরেই কেঁপে ওঠে ওই রাস্তা। ছিটকে যায় ম্যানহোলের ঢাকনাও। বড়সড় ফাটল দেখা দেয় গোবিন্দ খটিক রোডের ধারে ফুটপাত, এমনকি ট্যাংরা থানার সামনের ফুটপাতেও।

পরে এন্টালি এবং ট্যাংরা থানার পুলিশ পৌঁছে রাস্তাটি গার্ড রেল দিয়ে ঘিরে দেয়। ওই রাস্তায় বন্ধ করে দেওয়া হয় যান চলাচল। আসেন কলকাতা পুরসভার পরিবেশ দফতরের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার। তিনি ওই এলাকার কাউন্সিলরও। পুরসভার নিকাশি দফতরের ইঞ্জিনয়ারদের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। মেয়র পারিষদ জানান, বছর চারেক আগে ওই রাস্তায় একই ঘটনা ঘটেছিল। সে বার কয়েক জন বাসিন্দা সামান্য জখমও হয়েছিলেন। এ দিন অবশ্য কেউ জখম হননি। স্বপনবাবু জানান, ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালা থেকে মিথেন গ্যাস বেরোনোর আর কোনও পথ ছিল না। ভিতরে জমতে জমতে এক সময়ে তা ফেটে যায়।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চার দিকে ছড়িয়ে রয়েছে রাস্তার পিচ এবং নিকাশি নালার সিমেন্টের ভাঙা চাঙড়। ম্যানহোলের মুখ থেকে তখনও ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ট্যাংরার ডি সি দে রোডে যেখানে প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে, তার কাছেই দোকান রয়েছে সাবা আলমের। তিনি জানালেন, দুপুর দুটোর কিছু পরে তিনি দোকান বন্ধ করে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। তখনই ওই ঘটনা।

একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ, যে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ হয়েছে, তাতে ওই সময় সেখানে কেউ থাকলে আরও বড় বিপদ ঘটতে পারত। ওই রাস্তা দিয়ে বাসও চলে। এলাকাবাসী মনে করছেন, নেহাত ইদের উৎসব চলায় অনেক দোকান বন্ধ ছিল। তাই বড় বিপদ এড়ানো গিয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বছর চারেক আগে একই ঘটনা থেকে কেন শিক্ষা নেয়নি পুর প্রশাসন? এ বিষয়ে মেয়র পারিষদ স্বপনবাবু বলেন, ‘‘অতীতের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল। ফের যা ঘটল, তাতে রাস্তার নীচে থাকা ইটের কাঠামোর নিকাশি নালা নিয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে পুর প্রশাসনকে।’’ তিনি জানান, কেন এত পরিমাণ মিথেন গ্যাস জমা হচ্ছে, তা বার করতে কী পদক্ষেপ করা দরকার— সেই বিষয়গুলি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে। স্বপনবাবু আরও জানান, শুধু ওই এলাকাই নয়, কলকাতা শহরে আরও অনেক জায়গায় রাস্তার নীচে ইটের তৈরি এমন নিকাশি নালার কাঠামো রয়েছে। সেগুলিও পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

পুরসভার এক আধিকারিক জানান, এ দিনের ঘটনার পরে ওই রাস্তা এবং সংলগ্ন নিকাশি নালা ও ফুটপাত সারাইয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। মেয়র পারিষদ জানান, গোবিন্দ খটিক রোড খুবই ব্যস্ত রাস্তা। তাই জরুরি ভিত্তিতে একযোগে কাজ শুরু করেছে পুরসভার রাস্তা, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নিকাশি দফতর। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Methane Gas Explosion Manhole KMC Kolkata Municipal Corporation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy