অবাধ: নেশার আসরে দুই ব্যক্তি। রয়েছে মাদকের প্যাকেট। বুধবার, বাগমারি সেতুর নীচে। নিজস্ব চিত্র
মানিকতলা থানা থেকে মেরেকেটে ৫০ মিটার দূরেই বসত নেশার ঠেক! অভিযোগ, সেখানে কড়ি ফেললেই পুরিয়া চলে আসত হাতে। ওই ঠেকে যে রীতিমতো দরদাম করে মাদকের কেনাবেচা চলছে, পুলিশকে তা জানানো হলেও এত দিন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের। বুধবার ছবি-সহ অভিযোগ পেয়ে অতর্কিতে সেখানে অভিযান চালিয়ে সেই নেশার ঠেক ভেঙে দিল কলকাতা পুলিশ। অভিযোগ পাওয়ার পরেই ডিসি (ইএসডি) দেবস্মিতা দাসের নির্দেশে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই পুলিশ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে। সেখানে ব্রাউন সুগারের বেশ কয়েকটি পুরিয়াও পাওয়া গিয়েছে বলে খবর।
স্থানীয় সূত্রে খবর ছিল, ক্যানাল ইস্ট রোড ধরে নারকেলডাঙা মেন রোডে যাওয়ার পথে বাগমারি সেতুর ঠিক নীচে খালপাড়ের ওই অংশে পৌঁছতে হয়। এ দিন দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ওঠা-নামার সুবিধার জন্য আবর্জনার স্তূপের উপরেই সিমেন্টের পাটাতন পেতে দেওয়া হয়েছে। নীচে পরপর মোমবাতি জ্বলছে। কিছুটা দূরেই হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে রয়েছেন এক যুবক। মাঝেমধ্যেই অসংলগ্ন চিৎকার করছেন তিনি। কয়েক মিনিটেই হাজির হন ব্যাগ কাঁধে আরও দু’জন। একশো টাকার কয়েকটি নোটের বদলে কাগজে মোড়া পুরিয়া নিয়ে দু’টি মোমবাতির সামনে বসে পড়লেন তাঁরা। টাকা নেওয়া যুবকই এর পরে তাঁদের হাতে ধরিয়ে দেন চৌকো করে কাটা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল!
মাদক বিক্রেতা নিজেই বললেন, ‘‘এক-একটি পুরিয়া ১০০ টাকা করে। ফয়েল, মোমবাতি ফ্রি! ফয়েলের পাউডার প্লাস্টিকে ঢেলে পুড়িয়ে টানতে হবে। বসে পড়ুন।’’ এ রকম কত আছে? বিক্রেতার পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আপনার কত লাগবে? যত চাইবেন, পাবেন।’’
এলাকার বাসিন্দা এক মহিলা জানান, খালপাড়ে একটি ঘর তৈরি করে ক্লাব বানানো হয়েছে। নামেই ক্লাব, আদতে সেখান থেকেই চলত মাদকের কারবার। ওই মহিলার কথায়, ‘‘এখানে মাদক ব্যবসার নানা শিফট রয়েছে। রাত ন’টা থেকে তিনটে পর্যন্ত কারবার সামলান এক জন। এর পরে রাত তিনটে থেকে ভোর ছ’টা পর্যন্ত দায়িত্ব অন্য জনের। মাঝের সময়টা বন্ধ থাকার পরে দুপুর তিনটে নাগাদ ফের দোকান খোলা হয়। সেই সময়ে যিনি থাকেন, তিনিই রাত ন’টা পর্যন্ত চালিয়ে দেন।’’
স্থানীয় বাসিন্দা আর এক মহিলার দাবি, ‘‘স্কুল-কলেজের পড়ুয়া থেকে সব ধরনের ক্রেতা আসেন এখানে। লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা চলে। আমার স্বামী থানায় বলতে গিয়েছিলেন। ওরা বাড়িতে এসে মারধর করে গিয়েছে। পুলিশ কিছু করেনি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নম্বরেও ফোন করেছি আমরা। কিছুই হয়নি।’’ তাঁর দাবি, ‘দিদিকে বলো’ ফোন নম্বরে জানানো হলে ‘বিষয়টি দেখা হবে’ জানিয়ে মেসেজ আসে। তবে পরিস্থিতি বদলায়নি!
অবশেষে এ দিন কাজ হওয়ায় খুশি ওই এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘পুলিশ চাইলে সব পারে। কিন্তু আগে কেন এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?’’ এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কলকাতা পুলিশের ডিসি দেবস্মিতা বললেন, ‘‘অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগে কারও গাফিলতি থেকে থাকলে তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy