বিস্ফোরণের পরে বাজিবাজারের একটি ভেঙে পড়া দোকান। বুধবার, চম্পাহাটির বাজিবাজারে। নিজস্ব চিত্র
আগুন আর একের পর এক বিস্ফোরণ। তাতেই ভস্মীভূত হয়ে গেল তিনটি দোকান ও দু’টি বাড়ি। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ বারুইপুর থানার চম্পাহাটির হারাল বাজিবাজারে।
পুলিশ সূত্রের খবর, সমর নস্কর নামে স্থানীয় এক বাজি ব্যবসায়ীর দোকানে প্রথমে আগুন ধরে যায়। ওই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের দোকানগুলিতে। পর পর বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে এলাকা। বাজির ধোঁয়ায় গোটা এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। খবর যায় দমকলে। প্রথমে বারুইপুর, পরে ক্যানিং ও নরেন্দ্রপুর থেকে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। বারুইপুর পুলিশ জেলার কর্তাদের দাবি, ওই ঘটনায় বুধবার রাত পর্যন্ত কারও মারা যাওয়ার বা আহত হওয়ার খবর মেলেনি। ওই ঘটনায় কেউ আহত হয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সমরবাবুর বাড়ি, কারখানা ও দোকান একই জায়গায়। বাড়ির মধ্যেই কারখানা, যেখানে নিয়মিত আতশবাজি তৈরি করা হত। এ দিন সকাল থেকে দোকানের পিছনে সেখানেই আতশবাজি তৈরি হচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, আচমকা বিস্ফোরণের আওয়াজ কানে আসে। তার পরেই দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করে সমরবাবুর দোকান। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আশপাশের দোকানগুলিতে আগুন ছড়িয়ে যায়। শুরু হয় পর পর বিস্ফোরণ। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে লাগাতার চলে বিস্ফোরণ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় অধিকাংশ বাড়িতেই কারখানা ও দোকান একসঙ্গে রয়েছে। বেশির ভাগ বাড়ির ছাদ টিনের। ঘটনার পর এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, বিস্ফোরণের অভিঘাতে সমরবাবুর বাড়ির টিনের ছাদ ও ইটের দেওয়াল ভেঙে পড়ে রয়েছে। ভেঙে গিয়েছে পাশে থাকা দোকানও। দু’টি বাড়িতে আসবাবপত্র আর অবশিষ্ট নেই। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই দোকানগুলিতে শিবকাশি থেকে আনা শেল জাতীয় আতশবাজি মজুত করা হয়েছিল। এ ছাড়াও প্রচুর চকলেট বোমা ছিল বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক দমকলকর্মী বলেন, “আগুন নেভানোর পরে চকলেট বোমার অনেক টুকরো ওই দোকানগুলিতে পাওয়া গিয়েছে।” যা দেখে দমকলকর্মীরাও দাবি করছেন, দোকান এবং বাড়িগুলিতে চকলেট বোমা মজুত ছিল।
বুধবার রাত পর্যন্ত আগুন লাগার কারণ নিয়ে নির্দিষ্ট সূত্রে পৌঁছতে পারেননি দমকল ও পুলিশের আধিকারিকেরা। ঘটনার পর থেকেই সমরবাবু ও তাঁর আশপাশের ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের মালিক ও বাসিন্দাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে পুলিশ সূত্রে দাবি করা হচ্ছে। এ দিন ঘটনাস্থলে যান বারুইপুর পূর্বের বিধায়ক নির্মল মণ্ডল। তিনি বলেন, “কৃষিভিত্তিক এলাকা সত্ত্বেও এখানে বাজির ব্যবসায় কয়েক হাজার মানুষ জড়িয়ে রয়েছেন। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে বাজার ও কারখানা পরিচালনা করার জন্য বহু বার অনুরোধ করা হয়েছিল। তবুও এই অঘটন ঘটে গেল।”
বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “ওই কারখানা ও দোকানগুলির বৈধ নথি রয়েছে কি না, তা দেখা হচ্ছে। ব্যবসা অবৈধ বলে জানা গেলে কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হবে।”
পাশাপাশি, দোকানগুলিতে চকলেট বোমা বিক্রি করা হত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সপ্তাহখানেক আগে সেখানকারই কয়েকটি দোকান থেকে দু’লক্ষ চকলেট বোমা উদ্ধার হয়েছিল। সেই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। কালীপুজো পর্যন্ত চকলেট বোমা উদ্ধারের বিষয়ে কড়া পুলিশি তৎপরতা থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। ওই বাজার সংলগ্ন এলাকার রাস্তায় কড়া নজরদারি ও নাকা তল্লাশি চলবে বলেও বারুইপুর পুলিশ জেলা সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy