প্রতীকী চিত্র।
বিবাহবাসর ও প্রীতিভোজ, অমুক দিন, তমুক সময়ে। ওই সময়ে অনুগ্রহ করে ইন্টারনেট লিঙ্কটিতে ‘ক্লিক’ করে অনলাইন থেকে যুগলকে আশীর্বাদ করবেন।
নেমন্তন্নের ভাষা হুবহু এটা নয় ঠিকই। তবু এটাই ‘নিউ নর্মাল’ বা নব্য স্বাভাবিকতা। হোয়াটসঅ্যাপ-বার্তায় মোটামুটি এ ভাবেই নিমন্ত্রণ সারছেন কোনও কোনও বর বা কন্যাকর্তা। কোভিড-বিধি মানতে হবে, আবার বিয়েও করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে বিয়ের নেট-সম্প্রচারই ভরসা। এত দিন স্কাইপের মাধ্যমে ভাইফোঁটা বা জামাইষষ্ঠীর কথা শোনা গিয়েছে। কিন্তু সে সবই একান্ত অন্তরঙ্গ পরিসরের বিষয়। কিন্তু বরযাত্রী, কনেযাত্রী নির্বিশেষে কাছের দূরের আত্মীয়-বন্ধুকে একেবারে বিয়ের ছাদনাতলায় হাজির করিয়ে ফেলাটা বেশ অভিনব। কোভিড জমানায় আদর্শও বলা যায়! মানে সবাই বিয়েতে থাকলেন। কিন্তু গাদাগাদি মনে হল না। নিন্দুকে অবশ্য খোঁচা দিতেও ছাড়ছে না! কেউ কেউ বলছেন, এ তো ভারী মজা! বিয়ের আয়োজন হল, কিন্তু সে ভাবে কাউকে খাওয়াতেও হল না।
জ়ুম কলে আলোচনাচক্র থেকে শোকসভা বা নিছকই বন্ধুদের আড্ডাও নেহাত কমসম দেখা যায়নি। তবে আস্ত একটা বিয়ের স্বাদও যে জনে জনে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব, এটা অনেকেই ভাবেননি। কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সেটাও ঘটিয়ে ছাড়ছে। যেমন, চিকিৎসক শতদল সাহা যখন দেখলেন তাঁর মেয়ে মেহুলের বিয়ের আগে করোনার ধাক্কা জোরালো থেকে আরও জোরালো হচ্ছে, তখন দূরে থাকা সুহৃদদের জন্য বিয়ের সরাসরি সম্প্রচারটাই একমাত্র রাস্তা বলে তাঁরা ধরে নিয়েছিলেন। রবিবার সেক্টর ফাইভের একটি বেসরকারি হোটেলে মেহুল ও সৌরভের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। একেবারে ‘রিয়েল টাইমে’ পাত্রপাত্রীর পরিণয়ের সাক্ষী শুধু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত নয়, আমেরিকা, ব্রিটেন, মেক্সিকোয় পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা আত্মীয়-বন্ধুরা। শতদলবাবু বলছিলেন, “কোভিড নতুন করে বাড়ার অনেক আগেই আমাদের মেয়ের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক। ৪৫০ জনের বেশি অতিথিকে নেমন্তন্নও সারা। সবাই যখন আসতেই পারবেন না, তখন ইউটিউব সম্প্রচারটাই সমাধান বলে মনে হল।” বরের বাড়ি বেঙ্গালুরুতে। সেখান থেকে শ’খানেক বরযাত্রীর কলকাতায় আসার কথা ছিল। তার বদলে আসতে পেরেছিলেন টেনেটুনে সাত জন। অতিথির সংখ্যাও সরকারি নির্দেশ মেনে, মোটামুটি কমবেশি জনা ৫০। এই অবস্থায় বিয়ের আলোকচিত্রীর সঙ্গে কথা বলে ইউটিউব সম্প্রচারের পরিকল্পনাই হল।
ডাক্তারবাবুর মেয়ের বিয়েতে খুব সুচারু ভাবে বৈদিক মন্ত্রপাঠ ও ভাষ্যেরও বন্দোবস্ত ছিল। শতদলবাবুর কথায়, “অনেক সময়ে বিয়েবাড়িতেও সব অতিথি বিয়ে দেখার ফুরসত পান না। এই বিয়েটা কিন্তু আমারা চেয়েছিলাম, সবাই মন দিয়ে দেখুক। ইউটিউব সম্প্রচার সেই সুযোগ করে দিয়েছে। বিদেশে বসে লোকে বিয়ে দেখে তাৎক্ষণিক মন্তব্য করছেন, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন, এটা একটা প্রাপ্তি।” তবে এমন প্রবণতা এখন অনেক বাড়িতেই বাড়ছে। এত দিন উৎসাহী বন্ধুরা যাঁরা থাকছেন না, তাঁদের দেখাতে বিয়ের ফেসবুক লাইভ করতেন। করোনা পরিস্থিতি অনেকের জন্য আর একটু গুছিয়ে বিয়ের সম্প্রচার আবশ্যক করে তুলেছে। উত্তর কলকাতার এক কেটারিং কর্তার কথায়, ‘‘এখন তো একসঙ্গে না-বসিয়ে অতিথিদের হাতে খাবারের বাক্স তুলে দেওয়াই ‘স্বাভাবিক’। যা দিনকাল, নেট সম্প্রচারে বিয়ে দেখাতেও ক্রমে সবাই ধাতস্থ হয়ে পড়বেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy