বাজারচিত্র: পুজোর কেনাকাটা করতে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি শপিং মলে ভিড় জমালেন অনেকেই। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
বাড়তি ছাড়ের আশা আর পরে কিনতে গেলে অধিক ভিড়ে দূরত্ব-বিধি বজায় রাখতে না পারার আশঙ্কা!— এই দুইয়ের কারণেই করোনা আবহেও দুর্গাপুজোর প্রায় দেড় মাস আগে সেপ্টেম্বরের প্রথম রবিবার পুজোর কেনাকাটা শুরু করে দিলেন অনেকে। করোনা পরিস্থিতিতে ফাঁকা শপিং মলের চেহারা কিছুটা বদলে দিয়ে দিনের শেষে ক্রেতাদের অনেকেই বললেন, ‘‘মহালয়া তো এ মাসেই! আর মাত্র ১১ দিন। পরে বেশি ভিড় হতে পারে, তাই এখনই চলে এলাম।’’
তবে শহরের শপিং মলগুলি এ দিন দুপুর থেকেই জমজমাট হলেও হাতিবাগান, গড়িয়াহাটের মতো বাজারগুলি দিনভর প্রায় ক্রেতাশূন্যই থেকে গিয়েছে। সন্ধ্যার পরে ধর্মতলায় কিছুটা ভিড় বাড়লেও সেখানকার বিক্রেতাদের বড় অংশেরই দাবি, পুজোর বাজার এখনও শুরুই হয়নি। ক্রেতাদের দাবি, পরের দিকে কেনাকাটার ভিড় বাড়বে ভেবে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনতে এসেছেন। পাশ থেকে তখন এক ব্যাগ বিক্রেতার চিৎকার, ‘পরে ভিড়ে পুরো লকডাউন হয়ে যাবে। যা নেওয়ার এখনই।'
পরে কী হবে ভেবেই এ দিন দুপুরে দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলে পৌঁছে গিয়েছিলেন বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা সুনন্দা ঘোষ। আশুতোষ কলেজের পড়ুয়া সুনন্দা বললেন, ‘‘কোনও বছরই পুজোর বাজার এক দিনে শেষ হয় না। কিন্তু এ বছর বার বার বেরোলে সংক্রমিত হওয়ার ভয় থাকছে। কারণ, পরে তো ভিড় বাড়বে। তাই এখনই মায়ের সঙ্গে চলে এসেছি।’’ দেখা হল তিন বন্ধুর সঙ্গে। তাঁদের পুজোর কেনাকাটার এমনই ধুম যে, ব্যাগ টেনে নিয়ে যেতে পারছেন না। তাঁদেরই এক জন বাগুইআটির বাসিন্দা স্নেহময় সরকার বললেন, ‘‘সবই পুজোর জন্য। ছাড় না দিলে এখনই এত নিতাম না। পরে পুজোর ভিড় বাড়তে শুরু করলে আর কেউ ছাড় দেবে না। ছাড়ের সুবিধা নিতেই আমরা চলে এসেছি।’’
কসবা কানেক্টরের একটি শপিং মলে বারাসত থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে পুজোর বাজার করতে হাজির সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ আলেখ্য দত্ত বললেন, ‘‘বিশেষ ধরনের মাস্ক কিনব বলে বাবা-মাকে এখানে নিয়ে এসেছি। সেটা অন্য বাজারে পাওয়া যায় না। শুধু মাস্ক কি আর কেনা হয়, তাই দুটো শার্টও হয়ে গেল!’’
দক্ষিণ কলকাতার শপিং মলের নিরাপত্তা উপদেষ্টা দীপ বিশ্বাস জানালেন, শনি এবং রবিবার প্রায় ২০ হাজার করে লোক হয়েছে তাঁদের মলে। এর মধ্যেই এ দিন থেকে নতুন করে গাড়ির মডেল দেখিয়ে বিজ্ঞাপন করাও শুরু করেছেন তাঁরা। কসবা কানেক্টরের শপিং মলের আধিকারিক কে বিজয়নের আবার দাবি, ‘‘শনিবারের পরে এ দিনও রেকর্ড সংখ্যক লোক এসেছেন আমাদের মলে। এ দিন দেখে মনে হল, শহরের পুজোর বাজার শুরু হয়ে গিয়েছে।’’
যদিও প্রায় ক্রেতাশূন্য গড়িয়াহাট বাজারে সন্ধ্যার সময়েও দোকানের আলো জ্বেলে উঠতে না-পারা হকার শ্যামল কর্মকার বললেন, ‘‘কিছু লোক পুজোর বাজার শুরু করলেও সেই ভিড় কোথায়? তার মধ্যে লকডাউনের আগের দিন একেবারেই লোক হচ্ছে না।’’ অবস্থা এমনই যে, অন্য সময়ে সেখানকার ফুটপাত লাগোয়া যে রাস্তায় ভিড়ের চাপে পা ফেলার জায়গা মেলে না, সেখানেই পর পর গাড়ি রাখা। এতটা জনশূন্য না হলেও হাতিবাগান বাজারের ফুটপাতের দোকানদার কবি সামন্তের দাবি, ‘‘ফুটপাতের দোকানে যেমন ক্রেতার ভিড় নেই, বড় দোকানেও তেমনই। বড় পোশাক ব্যবসায়ীও এখন মাস্ক বেচছেন।’’ সেখানে হাজির এক ক্রেতার মন্তব্য, ‘‘তিন বোনকে পুজোয় দেব বলে শাড়ি নিলাম। শপিং মলে অনেক বিধি-নিষেধ আছে। ভিড় হলেও সমস্যা হবে না। কিন্তু এখানে পুজোর ভিড় শুরু হলে ঢোকা যাবে না। তাই প্রথমে এখানেই এলাম।’’
‘পরে ভিড়ে পুরো লকডাউন হয়ে যাবে’, বলে চেঁচাতে থাকে ধর্মতলার সেই ব্যাগ বিক্রেতা বললেন, ‘‘ক্রেতা ডাকতে ও সব বলতে হয়। মলের কথা জানি না। আমাদের বাজার পুজোর চার দিন আগে শুরু হলেও এ বার অবাক হব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy