কুয়াশাচ্ছন্ন পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুল। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
গাড়ির সামনে খুব বেশি হলে এক হাত দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। আশপাশে সবই আবছায়া। কখনও কখনও সেটুকুও দেখা যাচ্ছে না। সামনে কোনও গাড়ি চললে সেটির আলোই তখন এগোতে ভরসা। কিন্তু সেই গাড়িটিও নিয়ন্ত্রণ হারালে? সেটির সামনেও দেখার মতো পরিস্থিতি না থাকলে?
ভোরের দিকে বা মাঝরাতে শহরে দৃশ্যমানতার এমন অভাবে বড় অঘটনের আশঙ্কা করছেন অনেকেই। চিন্তায় পুলিশও। গত পাঁচ দিনে লালবাজারের কর্তাদের এই চিন্তা আরও বেড়েছে ভোরের শহরে দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান দেখে। সূত্রের খবর, গত পাঁচ দিনে শহরে ভোরের দিকে এমন ৪২টি পথ দুর্ঘটনার খবর পুলিশের খাতায় নথিভুক্ত হয়েছে। প্রতিটি ঘটনাই কুয়াশার জেরে ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৮টি ঘটনায় মোটরবাইক সওয়ারিরা আহত হয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে ঘন কুয়াশার জেরে চালকেরা দেখতেই পাননি, সামনে কে রয়েছেন! পুলিশের গার্ডরেলে সরাসরি ধাক্কা মারার ঘটনাও ঘটেছে। চিন্তা বেড়েছে রাতের পরিস্থিতি নিয়েও। রাস্তাঘাটে ঘন কুয়াশার চাদর ঘিরে ধরছে রাতের দিকেও। পুলিশ সূত্রের খবর, গত রবিবার রাতে গান্ধী মূর্তির সামনে মোটরবাইক দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে কুয়াশার বিষয়টিই উঠে এসেছে। একই ভাবে গত শুক্রবার বাসন্তী হাইওয়েতে এক পথচারীকে ধাক্কা মারে একটি মোটরবাইক। পথচারীর মৃত্যু হয়। কিন্তু মোটরবাইক চালক দাবি করেছেন, কুয়াশার কারণে তিনি দেখতেই পাননি যে, সামনে কেউ হাঁটছেন।
আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, এখনই এই পরিস্থিতি বদলানোর সম্ভাবনা নেই। কুয়াশা চলবে আরও দিন দশেক। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, বাতাসে ভেসে থাকা জলীয় বাষ্পের সূক্ষ্ম কণাগুলি রাতে ঠান্ডা হয়ে আসা মাটির কাছাকাছি এসে ঘনীভূত হয়ে ভূপৃষ্ঠের কাছে ভেসে বেড়ায়। সেটাই কুয়াশা। ভোরের দিকে যা আরও বাড়ে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, কুয়াশা ঘন হওয়ার কতগুলি কারণ আছে। তাঁদের মতে, কোনও কারণে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে গেলে, জলীয় বাষ্পের সঙ্গে ধূলিকণা মিশলে, ধোঁয়া মিশলে বা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার তারতম্য ঘটলে কুয়াশা ঘন হয়। গাড়ি বা বাইকচালকদের ক্ষেত্রে দৃশ্যমানতার সমস্যা তো হয়ই, কুয়াশার সঙ্গে ধোঁয়া মিশে যে ঘন ধোঁয়াশা তৈরি হয়, তা স্বাস্থ্যের পক্ষেও ক্ষতিকারক। তাই সব মহলেরই প্রশ্ন, এই ক্ষতিকর, বিপজ্জনক পরিস্থিতি বদলাবে কবে?
কলকাতা পুলিশ অবশ্য এই পরিস্থিতিতে রাতে রাস্তায় কর্মরত পুলিশকর্মীদের সুরক্ষায় বেশি কিছু বন্দোবস্ত করেনি। শুধু বাধ্যতামূলক ভাবে ‘শোল্ডার লাইট’ পরার নির্দেশ দিয়েছে এবং দৃশ্যমানতা বাড়াতে ‘নিয়ন জ্যাকেট’ পরায় জোর দিয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে রাস্তায় ফ্লুরোসেন্ট রিফ্লেক্টর লাগানোতেও জোর দিচ্ছে পুলিশ। চালকদের সচেতন হওয়ার উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। ট্র্যাফিক পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, “আগামী কয়েক দিন ভোরে যাতায়াত এড়িয়ে চলাই উচিত। একান্তই বেরোলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নিন। কুয়াশায় গাড়ির বাইরের সব আলোর যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। লোয়ার বিম তো বটেই, ফগ লাইট থাকলে তা-ও জ্বালাতে হবে।’’ পুলিশের পরামর্শ, কুয়াশায় লেন বদলে গাড়ি চালানো যাবে না। গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মানতে হবে ট্র্যাফিক সিগন্যাল। গত বছর এ সব পরামর্শের পাশাপাশি চালকদের সচেতন করতে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল পুলিশ। হাইওয়ে এবং বড় রাস্তার ধারে চালকদের ঘুম কাটাতে রাখা থাকত জল ও চা। ঘুম কাটাতে রাস্তায় কর্তব্যরত পুলিশের সঙ্গে কিছু ক্ষণ গল্প করার নিদানও ছিল। এ বছর বহু কমিশনারেট সেই সব পুরনো পদ্ধতি নতুন করে ব্যবহারের কথা ঘোষণা করলেও কলকাতা পুলিশের তেমন উদ্যোগ সামনে আসেনি।
বছরের এই সময়ে অনেকেই রাতে পার্টি সেরে ভোরে গাড়ি বা বাইকে ফেরেন। সেই সময়ে পথে পর্যাপ্ত পুলিশি নজরদারি থাকছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ট্র্যাফিক বিভাগের কর্তাদের যদিও দাবি, সাধ্য মতো নাকা-তল্লাশি চলছে। কাউকে বেসামাল অবস্থায় দেখলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কড়া হাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy