চিকিৎসক-পড়ুয়াকে ধর্ষণ-খুনের প্রতিবাদে শহরের রাস্তায় নাগরিক সমাজ। মিছিল হয় কলেজ স্কোয়্যার থেকে মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি এ বার শুরু হল নাগরিক সমাজের প্রতিবাদও। বিশিষ্টদের একাংশ সোমবার পথে নেমে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। নাগরিক মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে আজ, মঙ্গলবার ও কাল, বুধবারও।
কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা চেয়ে ‘নাগরিক সমাজ লড়ছে, লড়বে’, এই স্লোগান তুলে কলেজ স্কোয়ার থেকে আর জি কর মেডিক্যাল পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করেছেন বিশিষ্টদের একাংশ। যোগ দিয়েছিলেন কৌশিক সেন, ঋদ্ধি সেন, চৈতী ঘোষাল, বোলান গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। ঋদ্ধির অভিযোগ, “এই জঘন্য ঘটনার বিচার চাই। সুবিচার পাওয়ার পথে যে হস্তক্ষেপগুলো হচ্ছে, যেভাবে ঘটনাটিকে সরল করার চেষ্টা হচ্ছে, সেটা ততটা সরল নয়। কেবল এক জনকে গ্রেফতার করে তার ঘাড়ে দোষ চাপালে চলবে না। জনসাধারণের থেকে অনেক তথ্য গোপন করা হচ্ছে।’’ শ্যামবাজারে সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ পর্যন্ত আজ ‘ধিক্কার পদযাত্রা’ শীর্ষকে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে ‘শিল্পী সাংস্কৃতিক কর্মী বুদ্ধিজীবী মঞ্চ’। মিছিলের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে সই করেছেন অপর্ণা সেন, সোহিনী সেনগুপ্ত, সুজাত ভদ্র, তরুণ মণ্ডল, পল্লব কীর্তনীয়া প্রমুখ।
হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ফের পথে নেমেছিল রাজনৈতিক দলগুলিও। আর জি কর হাসপাতালেরই উল্টো দিকে অবস্থানে বসেছে সিপিএমের তিন গণ-সংগঠন এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। রাতভর সেই অবস্থান চলার কথা। সেখানে যোগ দিয়ে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “দোষীদের শাস্তি, আর জি কর-সহ গোটা স্বাস্থ্যক্ষেত্রের বেহাল নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে পাল্টানোর দাবিতে আমাদের এই লড়াই।” আসল সত্যকে ধামাচাপা দিতে সিভিক ভলান্টিয়ারকে ‘বলির পাঁঠা’ করা হচ্ছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। শ্যামবাজার মোড় থেকে হাসপাতালের গেট পর্যন্ত এ দিন বিক্ষোভ মিছিল করেছে আরএসপি-র ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠন যথাক্রমে পিএসইউ, আরওয়াইএফ এবং নিখিলবঙ্গ মহিলা সমিতিও। সংগঠনগুলির তরফে নওফেল মহম্মদ সফিউল্লা, আদিত্য জোয়ারদার, সর্বাণী ভট্টাচার্যদের প্রশ্ন, ঘটনার পরেই পুলিশ কেন প্রথমেই একে আত্মহত্যা বলেছিল? তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, “এসএফআই, ডিওয়াইএফআই মঞ্চ বেঁধে নাটক ফেঁদে বসেছে! বাম জমানায় কোথায় ছিলেন আপনারা? ধানতলা, বানতলা, কোচবিহার, নন্দীগ্রামের কৈফিয়ত দিন আগে।”
গত কয়েক দিনের মতো এ দিনও পুলিশের বিরুদ্ধে কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছে সিপিএম এবং আরএসপি-র বিভিন্ন সংগঠন। নানা পর্বে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও বচসাও বাধে তাদের। আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে স্বাস্থ্য ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিল আইএসএফ। বিধাননগরে দলের কর্মী-সমর্থকদের টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলে পুলিশ। রিপন স্ট্রিট থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত এ দিন মোমবাতি মিছিল ছিল প্রদেশ যুব কংগ্রেসের ডাকে। ছিলেন যুব কংগ্রেস সভাপতি আজ়হার মল্লিক, আব্দুস সাত্তার, মিতা চক্রবর্তী, রোহন মিত্র প্রমুখ। প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়দের নিয়ে একটি প্রতিনিধিদল গিয়েছিল নিহত ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে।
‘সত্যিটা’ সামনে আনার দাবিতে শহরের নানা মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারির ছাত্র-ছাত্রীরাও এ দিন শহরে মিছিল করেছেন। সেখানে যোগ দিয়েছিলেন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রের চিকিৎসকদের একাংশ। আন্দোলনকারীরা জানান, তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাঁদের একাংশ এ-ও দাবি করেন, আর জি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে কাজে যোগ দিতে দেওয়া হবে না। সন্ধ্যায় মিছিলটি যখন হাসপাতালে ঢোকে, তখন আর জি কর রোড কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। ডাক্তারির পড়ুয়া সিদ্ধার্থশঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “শহরের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। যেখানে সিসিটিভি দরকার, সেখানে তা নেই। আমাদের কলেজে অনেক জায়গায় পর্যাপ্ত আলো নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy