Advertisement
২৬ জানুয়ারি ২০২৫
Minakshi-Deblina

নেত্রী নয়, কর্মী হয়ে লড়ে যাব, দেবলীনার কথায় মীনাক্ষীরই সুর

পার্টি কংগ্রেসের শেষ দিনে বাংলা থেকে মহিলা ও জনজাতি মুখ হিসেবে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পেয়েছিলেন দেবলীনা হেমব্রম।

(বাঁ দিকে) দেবলীনা হেমব্রম। মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) দেবলীনা হেমব্রম। মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:২৭
Share: Save:

তিন বছর আগে কান্নুরে পার্টি কংগ্রেসের তৃতীয় দিন। অধিবেশনের ফাঁকে একটা বিরতি নিয়ে বাইরে এসে সিপিএমের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এ রাজ্যের পরিচিত মুখের কাছে হাল্কা করে একটা প্রশ্ন ভাসিয়েছিলেন। ‘‘দেবলীনা কেমন? ওর জায়গা থেকে বলে তো ভালই?’’ ইঙ্গিত পড়তে পারা যাচ্ছিল তখনই। সেই পার্টি কংগ্রেসের শেষ দিনে বাংলা থেকে মহিলা ও জনজাতি মুখ হিসেবে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পেয়েছিলেন দেবলীনা হেমব্রম!

শুরু করিয়ে গিয়েছিলেন ইয়েচুরি। তাঁর প্রয়াণের পরে আবার সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস আসন্ন। তাঁর চোখে পড়ে যাওয়া নেত্রীর জন্য এ বারের সম্মেলন-পর্বে রাস্তা আরও প্রশস্ত করে দিল সিপিএম। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দেবলীনাই এ বার দলের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক। এক দিকে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় আর তার পাশাপাশি মহিলা ও জনজাতি মুখ দেবলীনা, দুই নেত্রীরই দলের রাজ্য নেতৃত্বে গুরুত্ব বাড়াতে চাইছে বঙ্গ সিপিএম। দলের সাংগঠনিক ইতিহাসে নজির গড়ে স্বয়ং দেবলীনা অবশ্য ব্যক্তি নিয়ে ভাবিত নন। নেত্রী নয়, কর্মী হিসেবে যৌথ প্রচেষ্টার উপরেই গুরুত্ব দিতে চাইছেন রানিবাঁধের প্রাক্তন বিধায়ক ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। একই সুর মীনাক্ষীরও।

বাংলা তো বটেই, কেরলের মতো সচেতন ও এগিয়ে থাকা রাজ্যেও সিপিএমের ইতিহাসে কোনও মহিলা জেলা সম্পাদক নেই। স্বভাবতই দেবলীনা বাড়তি নজর টানছেন রাজনৈতিক শিবিরে। প্রথম বার মহিলা জেলা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে তিনি অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি একা তো কিছু নই। দল সম্মিলিত ভাবে কাজ করে, সিদ্ধান্ত করে। আমি নেত্রী নই, দলের এক জন কর্মী! কমিউনিস্ট পার্টির এক জন কর্মী হিসেবেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে অধিকার আদায়ের লড়াই চালিয়ে যাব।’’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ‘লক্ষ্মীর ভান্ডারে’র মতো আর্থিক ও সামাজিক সুবিধামূলক প্রকল্প চালু করার পরে মহিলা মন শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বাক্সেই বাঁধা আছে, এমনই ধারণা এখন সাধারণ ভাবে রাজনৈতিক শিবিরে প্রতিষ্ঠিত। চাকা ঘোরাতে তাঁর কি নতুন কিছু পরিকল্পনা আছে? দেবলীনা বলছেন, ‘‘ভাবনা নিশ্চয়ই কিছু আছে, সেগুলো ধীরে ধীরে হবে। তবে আমি বলে নয়, দল হিসেবেই আমরা মানুষের কাছে যাব। মহিলাদের সুযোগ-সুবিধা আগের সরকারও দিত, ভবিষ্যতেও সরকার দেবে। আমরা ‘লক্ষ্মীর ভান্ডারে’র বিরোধী নই। কিন্তু শুধু সেখানেই থেমে যাওয়া যায় না। শিক্ষা, কাজ, স্বাস্থ্যের অধিকার, মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও জরুরি। সেখানেই আমাদের লড়াই।’’

জঙ্গলমহলে এক সময়ে দাপুটে সংগঠন ছিল বামেদের। এখন তারা সেখানে প্রান্তিক শক্তি। শাসক দল তৃণমূলের বিপরীতে জমি শক্ত করেছে বিজেপি। তাঁকে সামনে রেখে সিপিএমের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই কতটা গতি পাবে? নতুন জেলা সম্পাদক দেবলীনার মতে, ‘‘মাওবাদীদের হত্যার রাজনীতি এক সময়ে পরিকল্পিত ভাবে জঙ্গলমহলে বামেদের খতম করতে চেয়েছে। তার পরে তৃণমূলের সরকার হয়েছে, আর মিথ্যা আশ্বাসের কৌশলে বিজেপিও এসেছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কিছু জন-বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে। সেটা কাটাতে শাখা, এরিয়া থেকে শুরু করে আমাদের সব কর্মী একসঙ্গে কাজ করবেন।’’

দেবলীনা বোঝাতে চাইছেন, ভোটের প্রশ্ন পরে, খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই-ই বামেদের মূল মন্ত্র থাকা উচিত। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথাতেও একই বার্তা। তিনি বলছেন, ‘‘তৃণমূলের আমলে রাজ্যে খুঁটে খাওয়ার জমানা চালু হয়েছে। এই পরিস্থিতি বদলাতে হবে। রাজ্যে ফের খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বা তৃণমূলের কিছু নেতা অবশ্য প্রশ্ন তুলছেন, এক জন মহিলাকে জেলা সম্পাদক করতেই সিপিএমের এত দিন লেগে গেল? সিপিএমের তরফে সুজন চক্রবর্তীর পাল্টা যুক্তি, ‘‘দেবলীনা তো আগেই দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে গিয়েছেন। পঞ্চায়েতে মহিলা প্রতিনিধি এবং সার্বিক ভাবে মহিলাদের ক্ষমতায়ন বামফ্রন্ট অনেক আগেই শুরু করেছিল।’’ সিপিএম সূত্রের আরও বক্তব্য, প্রতি জেলায় দলের সম্পাদকমণ্ডলীতে এক বা একাধিক মহিলা মুখ এখনই আছে। শুধু দেবলীনাকে জেলা সম্পাদক করেই মহিলাদের গুরুত্ব দেওয়া শুরু হল, এমন নয়!

অন্য বিষয়গুলি:

CPIM Left Minakshi Mukherjee Deblina Hembram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy