দখল: উল্টোডাঙা মোড়ের ফুটব্রিজের কাছে এই মঞ্চে ঢাকা পড়েছে অটোর লেন।—নিজস্ব চিত্র
বাড়িগুলির দেওয়াল ঘেঁষে তৈরি হয়েছে কাঠ-বাঁশের কাঠামো। অবস্থা এমনই যে, রাস্তা একেবারে আটকানো। আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য সামান্য জায়গাও ছাড়া নেই। কয়েক বছর আগে দক্ষিণ কলকাতার এক পুজো কমিটির এ হেন মণ্ডপের পিছনের অংশ খুলে, প্রতিমা সরিয়ে রোগীর অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে যেতে হয়েছিল পুলিশকে।
তার পরে তা নিয়ে জোর চর্চা চলেছিল কয়েক মাস। তবে ওই পর্যন্তই। সেই অভিজ্ঞতা থেকে যে শহর কলকাতা কিছুই শেখেনি, তা প্রমাণ হয়েছে গত শারদোৎসবে। মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয়ে জেরবার গাড়ি চালকেরা অন্য রাস্তায় ঢুকে হাঁসফাঁস করেছিলেন প্যান্ডেলের জটে। পুলিশ অবশ্য হুঁশিয়ারি দেয় প্রতি বারই। সেই হুঁশিয়ারিতে যে আদতে ‘চিঁড়ে ভেজে না’, তা ফের প্রমাণ হল এই শীতের উৎসব-মরসুমে। দেখা গিয়েছে, শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা আটকে প্যান্ডেল এবং সেই সংলগ্ন মঞ্চ বানিয়ে উৎসব হচ্ছে। শব্দতাণ্ডব চলছে রাত পর্যন্ত। ওই সব প্যান্ডেলের অধিকাংশই এখনও খোলা হয়নি। রেখে দেওয়া হয়েছে বর্ষবরণের উৎসবের জন্য। উদ্যোক্তাদের এক জন বলছিলেন, ‘‘এক দিনের উৎসবে মন ভরে? আগে হ্যাপি নিউ ইয়ার হোক, পরে প্যান্ডেল খুলব।’’ তার জন্য যতই ভোগান্তি হোক সাধারণ মানুষের, যতই ব্যাহত হোক যান চলাচল! পুলিশের অবশ্য দাবি, থানা ভিত্তিক নজরদারি চলছে। পথ আটকে কোনও জলসা করতে দেওয়া হবে না।
২৫ ডিসেম্বরের পরে রেখে দেওয়া প্যান্ডেলে নতুন চেহারা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে খন্না এলাকার উল্টোডাঙা রোডে। সেখানে এমন ভাবে মঞ্চ বাঁধা হয়েছে যে, রাস্তা একেবারে বন্ধ। খালপাড় হয়ে ওই পথে রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিট বা আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডে পৌঁছনো কার্যত অসম্ভব। রবিবার সেখানেই নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। রাতে জলসা হওয়ার কথা। রাস্তা আটকে জলসা কেন? প্রশ্ন করা হলে উদ্যোক্তাদের এক জন বলেন, ‘‘সারা বছর রাজনৈতিক দলগুলি যখন রাস্তা আটকে মিটিং-মিছিল করে, তখন কোথায় থাকেন? আমরা তো মাত্র দু’দিন করছি।’’ ঘটনাস্থলে উপস্থিত কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁদের বক্তব্য, নিশ্চয় থানা থেকে অনুমতি নিয়েই হচ্ছে উৎসব।
আরও পড়ুন: কী ভাবে আগুন মেট্রোয়, পরীক্ষায় তদন্তকারী দল
একটি পাড়ার ভিতরের এই উদ্যোগকে আবার টেক্কা দিচ্ছে উল্টোডাঙা মোড়ের জলসার মঞ্চ। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, গত ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের উৎসবের জন্য উল্টোডাঙা মোড়ের ফুটব্রিজের কাছে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। তা-ই রেখে দেওয়া হয়েছে বর্ষবরণের জন্য। মঞ্চের জন্য ঢাকা প়ড়ে গিয়েছে এক দিকের অটোর লেন। গাড়ি ঘুরিয়ে অটোচালকেরা তাই ঢুকে পড়ছেন বাস এবং অন্য গাড়ির লেনে। এক অটোচালক বলেন, ‘‘আমাদের রাস্তা আটকে মঞ্চ হয়েছে। কোথায় দাঁড়াব, কোথা দিয়েই বা যাব? লেনের বাইরে বেরোলেই আবার পুলিশ ধরছে।’’ রাস্তাটি এমনিতেই ব্যস্ত। সল্টলেকের প্রযুক্তি নগরীতে কর্মরতেরা এই পথে যাতায়াত করেন। বিধাননগর স্টেশন থেকেও ভিআইপি রোড এবং বাইপাস যাওয়ার অন্যতম সম্বল ওই মোড়। সেখানেই এ ভাবে রাস্তার একাংশ আটকে উৎসবের মঞ্চ হয় কী করে? মঞ্চের সামনেই বাসের অপেক্ষায় থাকা শোভন দত্ত নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘দেখছেন না, নেতা-মন্ত্রীর ছবি টাঙানো রয়েছে মঞ্চে! কেউ কিছু বলতে পারবে?’’ অনুষ্ঠানটি হচ্ছে স্থানীয় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুন্ডুর পৃষ্ঠপোষকতায়। তিনি বলেন, ‘‘রাস্তার অনেকটাই ছাড়া রয়েছে।’’
আরও পড়ুন: লেদ কারখানা থেকে উদ্ধার প্রৌঢ়ের দেহ
বর্ষবরণের আগে একই চিত্র দেখা গিয়েছে বেলেঘাটা, কাঁকু়ড়গাছি, আমহার্স্ট স্ট্রিট-সহ বেশ কিছু জায়গায়। দক্ষিণ কলকাতার চেতলা রোড, গড়িয়াহাটের কাছে একডালিয়া রোড এবং বেহালার বিভিন্ন অংশের অবস্থাও একই। সেখানে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি হিসেবে বাঁশ, কাঠ, মঞ্চ তৈরির লোহার কাঠামো মজুত করা হয়ে গিয়েছে। রবিবার সন্ধ্যার পরেই কাজ শুরু হবে বলে জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। চলবে রাত পর্যন্ত। কোথাও আবার ৩১ ডিসেম্বর রাতে ডিজে নাইটের ঘোষণা করে পোস্টার পড়েছে বহু আগে থেকেই। সঙ্গে রাস্তা আটকে যেখানে-সেখানে চলছে ছোটদের আঁকা প্রতিযোগিতা।
শহরে কবে রাস্তা আটকে উৎসব এবং জলসা বন্ধ হবে? উত্তর জানতে বারবার ফোন করা হলেও ধরেননি যুগ্ম নগরপাল (ট্র্যাফিক) মীতেশ জৈন। জায়গার নাম করে রাস্তা বন্ধের কারণ জানতে চেয়ে টেক্সট মেসেজ পাঠানো হলেও আসেনি উত্তর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘থানা ভিত্তিক নজরদারি চলছেই। রাস্তা আটকে জলসা করার অনুমতি দেওয়া হয় না।’’
বাস্তব যদিও একেবারে অন্য কথাই বলে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy