বিভিন্ন বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতীয় বলে দেখিয়ে ১২১টি পাসপোর্ট তৈরি করেছিল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
গত কয়েক মাসে ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রের সদস্যেরা বিভিন্ন বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতীয় বলে দেখিয়ে ১২১টি পাসপোর্ট তৈরি করেছিল। যার মধ্যে ৭৩টি পাসপোর্ট দেওয়াও হয়ে গিয়েছিল আঞ্চলিক পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের তরফে। বাকি ৪৮টি পাসপোর্ট তৈরির অপেক্ষায় ছিল। যা ইতিমধ্যে আটকে দেওয়া হয়েছে। লালবাজারের তদন্তকারীদের দাবি, ওই পাসপোর্টগুলি বাংলাদেশ থেকে আগত অনুপ্রবেশকারীদের নামে তৈরি করা হয়েছিল। যা ব্যবহার করে বাংলাদেশের ওই নাগরিকেরা এখন ভারতীয় পরিচয়ে ফ্রান্স এবং ইটালি-সহ বিভিন্ন দেশে রয়েছেন বলে প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের অনুমান। ওই পাসপোর্টগুলি যাতে বাতিল করা হয়, সে জন্য পুলিশের তরফে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি জানানো হয়েছে বিদেশ মন্ত্রককেও।
ভুয়ো পাসপোর্টের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে লালবাজারের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট ইতিমধ্যে চার জনকে গ্রেফতার করেছে। যার মধ্যে রয়েছে ওই চক্রের মূল পান্ডা সমরেশ বিশ্বাস এবং তার ছেলে রিপন বিশ্বাস। এ ছাড়া গ্রেফতার করা হয়েছে দুই ডাকঘরের দু’জন কর্মীকে। তাদের নাম দীপক মণ্ডল এবং তারকনাথ সেন। দু’জনেই ডাকঘরের
অস্থায়ী কর্মী। এই ঘটনায় একাধিক ডাকঘরের সঙ্গে পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের ভূমিকাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। এ দিকে, সোমবার গ্রেফতার হওয়া তারক এবং তারও আগে গ্রেফতার হওয়ার রিপনকে মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে তোলা হয়। এ দিন সরকারি কৌঁসুলি সৌরীন ঘোষাল জানান, ৭৩টি পাসপোর্ট ভুয়ো নথি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তাই ওই
চক্রের বাকি সদস্যদের খুঁজে বার করতে রিপন ও তারককে পুলিশি হেফাজতে রাখার আবেদন করা হয়েছিল। আদালত আগামী ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রে আরও অনেকে জড়িত রয়েছে। পাসপোর্ট তৈরি করার আগে তার পুলিশি যাচাই করা হয়ে থাকে। ওই ১২১টি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে তা করা হয়েছিল কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, কারও গাফিলতির প্রমাণ মিললে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।
লালবাজার জানিয়েছে, ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রের কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপে রয়েছে বেআইনি ভাবে ভারতে প্রবেশ করা বাংলাদেশিদের জোগাড় করে, তাদের নামে ভুয়ো ভোটার ও আধার কার্ড, জাল নথি তৈরি করা। দ্বিতীয় ধাপে ওই সব নথি দিয়ে উত্তর কলকাতার বিভিন্ন এলাকার ভুয়ো ঠিকানায় পাসপোর্টের আবেদন করা এবং বিভিন্ন ডাকঘরের পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রে ওই ভুয়ো নথি আপলোড করা।
হাওড়ার আমতা এবং উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের দু’টি ডাকঘরের পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের কয়েক জন কর্মী নথি ও তথ্য যাচাই না করেই পাসপোর্টের পোর্টালে সেই সব তথ্য আপলোড করে দিত। সেখানেই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হত অভিযুক্তদের তরফে। পুলিশের দাবি, ধৃত তারক ওই চক্রের সদস্য সমরেশের নির্দেশে বসিরহাটের ডাকঘরে ভুয়ো তথ্য যাচাই না করেই আপলোড করত। এর পরে পাসপোর্ট তৈরি হলে তা পঞ্চসায়র ডাকঘর থেকে সংগ্রহ করে নিত দীপক এবং পৌঁছে দিত সমরেশের কাছে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, চক্রের প্রথম ধাপের কাজ যারা করত, তাদের খোঁজ শুরু হয়েছে। সমরেশকে জেরা করে বেশ কয়েক জনের নাম উঠে এসেছে। তাদের খোঁজ চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ধৃত সমরেশ এর আগে পাসপোর্ট জালিয়াতি মামলায় বারাসত, চুঁচুড়া এবং দিল্লিতে গ্রেফতার হয়েছিল বলেও প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy