মণীশরঞ্জন মিশ্র
আত্মহত্যা নয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মণীশরঞ্জন মিশ্রকে খুন করা হয়েছে বলে সরাসরি অভিযোগ জানালেন তাঁর বাড়ির লোকজন। এবং এই অভিযোগের জেরেই ওই ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে দানা বাঁধা রহস্য নতুন মোড় নিয়েছে।
মঙ্গলবার সল্টলেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল থেকে মণীশের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। বুধবার সকালে ময়না-তদন্তের আগেই ওই ছাত্রের মৃতদেহ দেখে তাঁর আত্মীয়েরা অভিযোগ করেন, মণীশের দেহে বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, কেউ গলায় চাদর দিয়ে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলে পড়ে আত্মহত্যা করলে ওই ধরনের আঘাত লাগার কথা নয়। তাঁদের আশঙ্কা, হস্টেলে মারধর করে তাঁকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই মর্মে বিধাননগর (দক্ষিণ) থানায় লিখিত অভিযোগ করেন মণীশের বাবা কুশেশ্বর মিশ্র।
মণীশের বাড়ির লোকজন এই অভিযোগ করলেও পুলিশ বুধবার রাত পর্যন্ত খুনের মামলা রুজু করেনি। মঙ্গলবারেই এই বিষয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যুর একটি মামলা রুজু করা হয়েছিল। পুলিশের বক্তব্য, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পরে এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সল্টলেকের এডিসিপি দেবাশিস ধর বলেন, “আত্মহত্যা নাকি খুন, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলে তবেই নিশ্চিত করে বলা যাবে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে মণীশের মৃত্যু আত্মহত্যা বলেই জানানো হয়েছে। তবে ওই ছাত্রের বাঁ হাতের উপরের দিকে একটি ক্ষতচিহ্ন পেয়েছেন চিকিৎসকেরা। কী করে ওই ক্ষত হল এবং তার সঙ্গে মণীশের মৃত্যুর কোনও যোগ আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে দিশা পেতে মণীশের ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি। মণীশ শেষ কার সঙ্গে কথা বলেছেন বা ল্যাপটপে কোনও সূত্র রেখে গিয়েছেন কি না, সেটাই খুঁজে দেখছেন তদন্তকারীরা।
মঙ্গলবার মণীশের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পরে তাঁর সহপাঠীরা বলেছিলেন, সোমবার, ক্যাম্পাসিংয়ের প্রথম দিনে চাকরির সুযোগ না-মেলায় তিনি হতাশ হয়ে পড়েন এবং সম্ভবত সেই হতাশা থেকেই আত্মঘাতী হন। কিন্তু আইটি বিভাগের প্রধান, মণীশের শিক্ষক সমীরণ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ভাল বাস্কেট বল খেলোয়াড় ও প্রাণোচ্ছল ওই ছাত্র আত্মহত্যা করেছেন বলে মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। ঠিক একই কথা জানিয়েছেন তাঁর আত্মীয়স্বজনও।
ছেলের মৃত্যুতে শোকে ভেঙে পড়েছেন মণীশের মা। বুধবার সল্টলেকে শৌভিক দে-র তোলা ছবি।
সোমবার ক্যাম্পাসিংয়ের পরে মণীশ হতাশ হয়ে পড়েন বলে তাঁর কয়েক জন সহপাঠী দাবি করলেও মৃতের মামা পবন তিওয়ারি এবং খুড়তুতো ভাই চন্দন মিশ্রের দাবি, ওই দিন সন্ধ্যায় মণীশ টেলিফোনে বোকারোয় তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁর কথাবার্তায় হতাশার ইঙ্গিত মেলেনি। শুধু তা-ই নয়, মণীশের বাড়ির যা আর্থিক অবস্থা, তাতে অন্তত টাকার কারণে চাকরি পেতে তাঁর ব্যস্ত হওয়ার কথা নয়। মণীশের বাবার ঠিকাদারির ব্যবসা।
মণীশের মামা পবনবাবু বলেন, “আমাদের আর্থিক সমস্যা নেই। এখন চাকরি পেতেই হবে, এমন কোনও চাপ ভাগ্নের উপরে ছিল না।” মণীশের আত্মীয়দের দাবি, তাঁর বাঁ কাঁধের নীচে, কোমরে, ডান হাতের কিছু অংশে আঘাতের চিহ্ন আছে এবং সেই জন্যই তাঁদের সন্দেহ, মণীশকে খুন করা হয়েছে। তবে কারা, কী উদ্দেশ্যে মণীশকে খুন করে থাকতে পারে, সেই ব্যাপারে মণীশের বাড়ির লোকজন কিছু বলেননি।
এ দিন বিকেলে নিমতলা শ্মশানে মণীশের অন্ত্যেষ্টি হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন কর্তাও ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ জানান, মণীশের বাড়ির লোকজনের অভিযোগের কথা তাঁরা শুনেছেন। তাঁর কথায়, “পুলিশ তদন্ত করছে। দেখা যাক, কী হয়।” তিনি জানান, ভবিষ্যতে ক্যাম্পাসিংয়ের সময় হস্টেলে প্রয়োজনে বাড়তি নিরাপত্তা বা নজরদারির বন্দোবস্ত করা হবে কি না, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ তা নিয়ে আলোচনা করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy