মর্মান্তিক: রাজু চৌধুরী (ইনসেটে) ছাদের এই জায়গা থেকেই পড়ে যান বলে অনুমান পুলিশের। সোমবার, পর্ণশ্রীতে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
দুপুরের খাওয়া সেরে নেশামুক্তি কেন্দ্রের ছাদে বাসন ধুচ্ছিলেন বছর সাঁইত্রিশের যুবক। আচমকাই ভারী কিছু পড়ার শব্দ শুনে সকলে বেরিয়ে এসে দেখেন, বাড়ির নীচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ওই যুবকের দেহ।
রবিবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটেছে পর্ণশ্রীর শকুন্তলা পার্কের একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম রাজু চৌধুরী। তিনি ওই কেন্দ্রেরই আবাসিক ছিলেন। ওই যুবকের মৃত্যুতে প্রশ্ন উঠেছে সংস্থাটির নিরাপত্তা ও নজরদারি নিয়ে।
পিকনিক গার্ডেনের বাসিন্দা, বেসরকারি সংস্থার কর্মী রাজু প্রায় ১২ বছর ধরে নেশার কবলে ছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর পরিজনেরা। সেই কারণে গত বছরও তাঁকে শকুন্তলা পার্কের ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রে কিছু দিনের জন্য রাখা হয়েছিল। বাড়ি ফিরে কয়েক দিন ঠিক থাকার পরে ফের মদ্যপান শুরু করেন রাজু। তাই গত ১৭ মার্চ ফের তাঁকে ওই কেন্দ্রে আনা হয় বলে জানান রাজুর দাদা গোপালবাবু।
শকুন্তলা পার্কের একটি বাড়িতে চলে ওই নেশামুক্তি কেন্দ্র। দোতলার ছাদ সংলগ্ন একটি ঘরে রাজুর সঙ্গে থাকতেন আরও এক যুবক। তিনি জানান, ওই দিন দুপুর একটা নাগাদ খাওয়া শেষে নিজের থালা ধুতে সামনের ছাদে গিয়েছিলেন রাজু।
ওই যুবক বলেন, ‘‘অত জোরে নীচে কী পড়ল, বুঝতে না পেরে ছাদে এসে দেখি, রাজু নেই। থালা পড়ে রয়েছে। ছাদ থেকে নীচে উঁকি মেরে দেখি, উনি রাস্তায় পড়ে রয়েছেন।’’ ওই আবাসিক যুবকের মতোই বিকট শব্দ শুনে অন্যেরাও বাইরে বেরিয়ে আসেন। সকলে মিলে রক্তাক্ত রাজুকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় দু’টি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
খবর পেয়েই ওই কেন্দ্রে চলে আসেন গোপালবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আমার ভাইটা চলে গেল। অন্য কারও ভাই বা সন্তানের যেন এমন বেঘোরে মৃত্যু না হয়। সংস্থার কর্ণধারকে জোরদার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে বলেছি।’’ তবে কারও বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি গোপালবাবু।
শহরের বিভিন্ন নেশামুক্তি কেন্দ্রের অব্যবস্থা নিয়ে মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন ওঠে। শকুন্তলা পার্কের ঘটনাতেও সেই প্রশ্ন উঠেছে। সোমবার এলাকায় গিয়ে অবশ্য ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের কোনও সাইনবোর্ড চোখে পড়ল না। পরে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করে খুঁজে পাওয়া গেল বাড়িটি। দোতলার সেই ছাদে গিয়ে দেখা গেল চরম অব্যবস্থার ছবিটা। ছাদের পাঁচিলের উচ্চতা বেশ কম। চার দিকে কাঠ, টিন পড়ে রয়েছে। সেই ছাদের একপাশের ঘরেই থাকতেন রাজু। ওই দিন ঠিক কী কারণে ওই যুবক ছাদের পাঁচিলের ধারে গেলেন, তা কারও কাছেই স্পষ্ট নয়। তিনি পালানোর চেষ্টা করছিলেন কি না, তা অবশ্য জানা যায়নি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, খুবই ছোট পাঁচিলের সামনে গিয়ে নীচে ঝুঁকে কিছু দেখতে গিয়েই পড়ে গিয়ে থাকতে পারেন ওই যুবক।
এ হেন কেন্দ্রের আবাসিকেরা অনেক সময়েই পালানোর চেষ্টা করেন। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ছাদের পাঁচিলের উপরে কোনও তার-জালের ঘেরাটোপ ছিল না কেন? ছাদের ঘরে থাকলেও তাঁদের দেখভাল করার কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না কেন? ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের কর্ণধার রাজীব ঘোষ অবশ্য নিজেদের গাফিলতির কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ভুল হয়েছে। আমরা এ বার ছাদের পাঁচিলের উপরে তার-জাল দিয়ে ঘিরে দেব।’’ পাশাপাশি তাঁর দাবি, সম্প্রতি ঝড়ের দাপটে ওই কেন্দ্রের সাইনবোর্ড উড়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy