বৌবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির বাসিন্দাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
মানবিকতার খাতিরেই বৌবাজারে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেলের সুড়ঙ্গের কাজের জেরে গৃহহীন পরিবারগুলির পাশে সকলের দাঁড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই সব পরিবারকে আপৎকালীন সাহায্য দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার মেট্রো-কর্তৃপক্ষের উপরে কার্যত ‘চাপ’ তৈরি করেছেন তিনি।
ওই বিপর্যয় নিয়ে এখনও পর্যন্ত সরাসরি কোনও ‘ঠিক-ভুল’ বা ‘দায়’ বিচার করেননি মুখ্যমন্ত্রী। তবে একটা ভুলের জন্যই যে সমস্যা হয়েছে, তা জানাতে ভোলেননি তিনি। সেই সঙ্গেই বলেন, ‘‘ভুল কার, সেটা দেখার সময় এটা নয়। এখন দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর সময়।’’ নবান্নে এ দিন মেট্রো-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাঁচ সদস্যও সেখানে ছিলেন। গৃহহীনদের পাশে দাঁড়াতে মেট্রোকে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত একাধিক প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, গৃহহীনদের জীবনযাপনের জন্য পরিবার-পিছু ন্যূনতম পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়া উচিত মেট্রোর। কারণ, তাঁরা সব হারিয়েছেন। জামাকাপড় বা বাসনকোসন কিছুই নেই। যা হারানোর কথা ছিল না। এটা আগেই মেট্রোর করা উচিত ছিল বলেই মত মমতার।
এ দিনের বৈঠকে ছিলেন মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার পিসি শর্মা, কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশনের (কেএমআরসিএল) ম্যানেজিং ডিরেক্টর মানস সরকার। তিনি জানান, তাঁর একার পক্ষে আপৎকালীন পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। বোর্ড অব ডিরেক্টরসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা আপনাদের (মেট্রো) দেখতে হবে। এখন ওই মানুষগুলির কাছে কিছু নেই। মানবিক কারণেই এটা করতে হবে আপনাদের।’’
গৃহহীনদের ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে আরও প্রস্তাব দিয়েছে রাজ্য সরকার। ১) বাড়ির বদলে বাড়ি করে দিতে হবে। অর্থাৎ যে-বাহান্নটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো তৈরি করে দিতে হবে। ২) একই ভাবে যাঁদের দোকান নষ্ট হয়েছে, তাঁদের দোকানও গড়ে দিতে হবে মেট্রোকে। ৩) বাড়ি তৈরির আগে পর্যন্ত মেট্রোকেই ওই সব পরিবারকে অন্যত্র রাখার দায়িত্ব নিতে হবে। জেম সিনেমার কাছে মেট্রো-কর্তৃপক্ষের যে-ভবন আছে, তার বেশ কয়েকটি তলা আছে। সেখানে পরিবারগুলির থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলে রাজ্যকে জানিয়েছে মেট্রো। তবে কেউ যদি অন্যত্র থাকতে চান, তার ভাড়া মেট্রোকে বহন করতে হবে। মেট্রো চাইলে বাড়ির খোঁজার বিষয়ে সাহায্য করবে সরকার। ৪) যে-সব সোনার দোকান বা ছাপাখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের অন্যত্র জায়গা করে দিতে হবে। ৫) শীল পরিবারের একটি মেয়ের জানুয়ারিতে বিয়ে। সে-ক্ষেত্রে মেট্রো পাঁচ লক্ষ এবং রাজ্য সরকার পাঁচ লক্ষ টাকা দেবে। এই সব প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। কেএমআরসিএলের এমডি মানসবাবু জানান, বেশির ভাগ প্রস্তাবই তাঁরা মেনে নিয়েছেন।
গৃহহীনদের সার্টিফিকেট, বই, নানা নথিপত্র হারিয়েছে। সেগুলি পাওয়ার জন্য কন্ট্রোল রুমে একটা ব্যবস্থা করছে সরকার। বাড়ির সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা দেখাশোনার জন্য একটি কমিটিও তৈরি করেছে রাজ্য। তাতে থাকবেন মেট্রো, কলকাতা পুরসভা, কলকাতা পুলিশ এবং বিপর্যয় মোকাবিলার দফতরের এক জন করে সদস্য। তাঁদের সঙ্গে গিয়ে বাড়ির অবস্থা দেখতে পারবেন ক্ষতিগ্রস্তেরা। ওই এলাকায় যাতে কোনও চুরি না-হয়, সেই জন্য মেট্রো এবং কলকাতা পুলিশের তরফে সিসি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ওই এলাকার বিজয়ভূষণ জয়সওয়াল, আশিস সেন, সোনালী শীল, পিয়াসি সেনরা। কারও মতে মুখ্যমন্ত্রীকে কিছু বলার আগেই তিনি বৈঠকে তাঁদের জন্য সবটুকু বলেছেন। তবে এ-পর্যন্ত মেট্রো-কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় ‘সন্তুষ্ট’ হলেও শেষ পর্যন্ত সবটা ভাল হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে সোনালীদেবীর।
ওই বিপর্যয় নিয়ে রাজনীতি চলবে না বলে আগেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও জানান, রাজনীতি ভুলে এগিয়ে আসতে হবে সকলকে। কৃষ্ণনগরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “প্রথম দায়িত্ব হল, ক্ষতিগ্রস্ত যে-সব মানুষ ভীষণ ভয়ের মধ্যে আছেন, তাঁদের ভয় দূর করা এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়া। রাজ্য সরকারের দায়িত্ব নেওয়া উচিত। যে-হেতু কেন্দ্রীয় যোজনারও কাজ চলছে, তাই পার্টি বা সরকার ভেদাভেদ না-করে সকলেরই দায়িত্ব, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের কষ্ট দূর করা।” রাজ্য সরকারের ভূমিকায় তিনি কি খুশি? “ওখানকার মানুষের কথাই শেষ কথা। ওই মানুষগুলোকে খুশি করতে হবে। আমি খুশি হলাম কি না, সেটা বড় কথা নয়,” বলেন বিজেপি নেতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy