নবান্নে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কার দোষ আর কার নয়, তা দেখার সময় নয় এখন। বরং যত শীঘ্র সম্ভব ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। বৌবাজার বিপর্যয় নিয়ে নবান্নের বৈঠকে এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে আপাতত পরিবার পিছু এককালীন ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতেও মেট্রো কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে মুখ্যসচিব মলয় দে-র নেতৃত্বে কোর কমিটিও গড়েছেন। এলাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, ক্ষতিগ্রস্তদের কোথায় রাখা যায়, তা পর্যালোচনা করে দেখবে ওই কমিটি। তাদের কাছে নিজেদের অভাব-অভিযোগও জানাতে পারবেন সাধারণ মানুষ। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হলে না পারলেও, কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন বৌবাজারের বাসিন্দারা।
বিপর্যয়ের পর সোমবারই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেট্রো কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠকের আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেই মতোই ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের মধ্য থেকে ছ’জন এবং মেট্রোর প্রতিনিধিদের নিয়ে নবান্নে বৈঠকে বসেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির বদলে বাড়ি তৈরি করে দিতে সম্মত হয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। যত দিন পর্যন্ত তা না হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্তদের অন্যত্র রাখার ব্যবস্থা করবেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। যাঁরা ভাড়া বাড়িতে থাকতে চান, মেট্রো কর্তৃপক্ষ সেই ভাড়া মিটিয়ে দেবেন। জেম সিনেমার কাছে মেট্রোর নিজের একটি ভবন রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে কিছু লোককে সেখানে সরানো যেতে পারে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। মেট্রো রাজি থাকলে রাজ্য সরকার সবরকম সহযোগিতা করেত প্রস্তুত।’’ ইতিমধ্যে ৫২টি পরিবারের লোকজনকে অন্যত্র সরানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পুজোর এক মাস আগে এই বিপর্যয়ের জেরে মাথায় হাত পড়েছে বৌবাজার এলাকার সোনা ব্যবসায়ীদের। মেট্রোর সুড়ঙ্গে কাজ চলাকালীন যে তিনটি এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে, সেই গৌরী দে লেন, দুর্গা পিতুরি লেন এবং সেকরাপাড়া লেনের বিভিন্ন বাড়িতে ওই সব সোনার দোকানের কারিগররা কাজ করতেন। ভিন রাজ্য থেকে আসা কর্মী মিলিয়ে সেই সংখ্যাটা প্রায় আড়াই হাজার। এই মুহূর্তে কর্মহারা হয়ে পড়েছেন সকলে। ক্ষতিপূরণ না পেলে বড় ধরনের আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তাঁরা। এ দিন তাঁদেরও আশ্বাস দেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের দোকান ছিল, তাঁদের নতুন দোকান দেওয়া হবে। কার কত ক্ষতি হয়েছে, খতিয়ে দেখতে হবে তা-ও। যাঁরা কর্মহারা হয়ে পড়েছেন, তাঁদেরও মাসে মাসে কিছু টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’’
নবান্নে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। পাশে ফিরহাদ হাকিম ও নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: গমগমে সোনার বাজার যেন শ্মশান, পথে নামলেন বৌবাজারের দোকানিরা
শনিবার বিপর্যয়ের পর থেকে বৌবাজারের প্রায় ৪০০ বাসিন্দা ঘরছাড়া। এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হয় তাঁদের। তার পর তিন দিন কেটে গেলেও, এখনও পর্যন্ত বাড়ির কাছে ঘেঁষতে পারেননি তাঁরা। বার করে আনতে পারেননি মূল্যবান জিনিস ও কাগজপত্র। বরং এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ দুর্গা পিতুরি লেনে নতুন করে ফের একটি বাড়ি ভেঙে পড়ায় এবং বেশ কিছু বাড়িতে ফাটল দেখা দেওয়ায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়ায়। সেই নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অনেকে। তবে তাঁদের ভয়ে পাওয়ার কোনও কারণ নেই বলে জানান মমতা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই এলাকায় সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে, যাতে কোনও জিনিস চুরি না যায়। তবে আমার অনুরোধ জানাচ্ছি, দয়া করে এলাকায় ঢুকবেন না। জিনিস না পাওয়া গেলেও, জীবন তো বাঁচবে! ছেলেমেয়ের স্কুল-কলেজের সার্টিফিকেট, আধারকার্ড এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, যাই হারিয়ে যাক না কেন, সরকার নতুন করে বানিয়ে দেবে। এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছে। খাবার বাসনপত্রও নেই তাঁদের কাছে। তাঁদের প্রয়োজন খতিয়ে দেখে এককালীন ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি মেট্রো কর্তৃপক্ষকে।’’
আরও পড়ুন: মনিটর আছে সিপিইউ নেই, হদিশ নেই সারদা কর্তার ৪ ডায়েরিরও! হাইকোর্টে রাজীবকে আক্রমণ সিবিআইয়ের
এ দিন নবান্নের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এলাকার বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মলয় দে-র নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ওই কমিটিতে রয়েছেন তিনিও। বৈঠক সেরে সোজা বৌবাজারের গোয়েন্কা কলেজের কন্ট্রোল রুমে ফিরে আসেন তিনি। সেখানে অপেক্ষারত স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের কথা জানান তিনি।
ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy