অনিয়ম: এ ভাবেই চলে সেতু পারাপার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
নিয়ম আছে। আছে আইনও। তবু ভাগাভাগির হাওড়া সেতুকে ঘিরে রেখেছে লাগামহীন অনিয়ম। এর ফলে এক দিকে, সেতুর নিরাপত্তা প্রতিনিয়ত প্রশ্নের মুখে পড়ছে। অন্য দিকে, নিত্যদিন সেতু পারাপারকারী লক্ষাধিক মানুষ নাজেহাল হচ্ছেন।
হাওড়া সেতুকে ভাগাভাগি করে দু’পাড়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুলিশ এবং হাওড়া পুলিশের উপরে। হাওড়ার দিক থেকে সেতুর তিন নম্বর পিলার পর্যন্ত দায়িত্ব হাওড়া সিটি পুলিশের। সেতুর বাকি অংশের নিরাপত্তার দায়িত্বে কলকাতা পুলিশ। হাওড়া সেতুর কলকাতার প্রান্তে রয়েছে বড়বাজার, অন্য প্রান্তে রয়েছে হাওড়া স্টেশন। বাণিজ্যিক দিক থেকে উভয়ের গুরুত্বই যথেষ্ট। এক দিকে, বড়বাজার থেকে আনা খাদ্যদ্রব্য-সহ বিভিন্ন জিনিস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। ট্রেনে হাওড়া স্টেশনের গুডস শেডে আসা মাছ, আনাজ, কাপড় সহ বিভিন্ন জিনিস পৌঁছে যায় বড়বাজারে। অভিযোগ, পারাপারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বড় চক্র। যা ছড়িয়ে রয়েছে হাওড়া থেকে কলকাতা পর্যন্ত।
হাওড়া সেতুর নিরাপত্তা এবং যানজটের কথা ভেবে সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত যে কোনও মালবাহী গাড়ি বা তিন চাকার ট্রলির যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল অনেক আগেই। সেতুতে বাস না দাঁড়ানোর নিয়মও রয়েছে। এ সবের বিরুদ্ধে ট্র্যাফিক আইনের বিভিন্ন ধারা আছে। তবে সেই আইনের পরোয়া না করে অবাধে লক্ষ লক্ষ টাকার তোলাবাজি চলছে বলে অভিযোগ।
কী ভাবে কাজ করে এই চক্র? কেনই বা ব্যবস্থা নেয় না পুলিশ? একটি সূত্র জানাচ্ছে, চক্রের হাতে ‘পারানির’ টাকা গুঁজে দিলেই হল। তা হলেই যে কোনও সময়ে সেতু দিয়ে দু’প্রান্ত থেকে মালবাহী গাড়ি যাতায়াত করতে পারবে।
তেমনটাই দেখা গেল হাওড়া স্টেশনের বিপরীতে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সংস্থার অফিসের সামনে। রাস্তার ডিভাইডারে বসে নোংরা পোশাক পরা চার যুবক। মাল বোঝাই ট্রলি এবং ভ্যান গেলেই তাঁদের মধ্যে এক জন ডান হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। চালক সেই হাতে টাকা গুজে বেরিয়ে যাচ্ছেন। কত টাকা দিচ্ছেন? প্রশ্ন শুনে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন কামিন্দর সাউ ওরফে দিল্লিওয়ালা নামে এক যুবক। জানালেন, হাওড়া স্টেশন থেকে বেরোলেই ট্রলি পিছু দশ টাকা এবং চার চাকার ভ্যান থেকে নেওয়া হয় কুড়ি টাকা করে। সারাদিনে তোলা টাকা পৌঁছে দিতে হয় ‘দাদার’ কাছে। একই ছবি দেখা গেল হাওড়া সেতুর কলকাতা প্রান্তে ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুলে ওঠার মুখে। পুলিশকর্মীদের সামনে টাকা তুলছিলেন বয়স্ক এক ব্যক্তি। বাদ যাচ্ছে না মালবাহী ট্রাক, লরি, ট্রলি।
পুলিশ সূত্রের খবর, নিয়ম ভেঙে সারাদিনে সেতু পেরোয় প্রায় পাঁচ হাজার মালবাহী গাড়ি ও তিন চাকার ট্রলি। অর্থাৎ, দৈনিক গড় আয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা!
নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, সেতুর মাঝামাঝি বাক্স ও বস্তা বোঝাই ট্রলি দাঁড় করিয়ে বিশ্রাম করেন চালকেরা। অথচ তাদের সরিয়ে দেওয়ার কোনও উদ্যোগ পুলিশ দেখায় না বলেই অভিযোগ। একই অবস্থা হাওড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে রওনা হওয়া কলকাতামুখী বাসের। সেতুতে ওঠার পরে যাত্রী তোলার প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে সেগুলি। সেতুর দায়িত্বে থাকা কলকাতা পুলিশের এক অফিসার বলেন, “হাওড়া পুলিশের এলাকায় বাসগুলি দাঁড়িয়ে থাকে। এ নিয়ে তাদের বারবার বলা হয় কেস দেওয়ার জন্য। তা হলেই এই অব্যবস্থা আটকানো যাবে।”
অথচ এই অভিযোগ সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে এড়িয়ে গেলেন হাওড়ার ডিসি (ট্র্যাফিক) অর্ণব বিশ্বাস। তিনি বলেন, “বিষয়টির কিছুই জানি না। খোঁজ করে ব্যবস্থা নেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy