Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

ইদের পোশাকে রাজনীতির রং

কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, প্রতি বছরই ইদের সময়ে গরিব মানুষদের মধ্যে লুঙ্গি, শাড়ি বিতরণ করা হয়। অবশ্য শুধু ইদের সময়েই নয়, দুর্গাপুজোর সময়েও প্রতি ওয়ার্ডে পুরসভার তরফে পোশাক বিলির রেওয়াজ রয়েছে।

দু’নম্বর বরোয় এ ভাবেই রাখা হয়েছে ইদের পোশাক। নিজস্ব চিত্র

দু’নম্বর বরোয় এ ভাবেই রাখা হয়েছে ইদের পোশাক। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৯ ০১:৪৯
Share: Save:

নিতান্তই ‘অরাজনৈতিক’ লুঙ্গি, শাড়ি। কিন্তু তাতেই এ বার রাজনীতির রং লাগল। আর ভোটের এক দিন আগে তাতেই তেতে উঠল শহরের ভোট রাজনীতি।

কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, প্রতি বছরই ইদের সময়ে গরিব মানুষদের মধ্যে লুঙ্গি, শাড়ি বিতরণ করা হয়। অবশ্য শুধু ইদের সময়েই নয়, দুর্গাপুজোর সময়েও প্রতি ওয়ার্ডে পুরসভার তরফে পোশাক বিলির রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনী আবহে সেই প্রথা নিয়েই এ বার বিতর্ক শুরু হয়েছে।

বিরোধীদের একাংশের অভিযোগ, লুঙ্গি, শাড়ি বিতরণ-প্রথার মাধ্যমে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা আদতে কৌশলে ভোটারদের একাংশকে প্রভাবিত করছে। বিরোধীদের যুক্তি, অন্য বার ইদের তিন-চার দিন আগে ওই পোশাক বরো অফিসে আনা হয়। তার পরে ওয়ার্ডভিত্তিক গরিব মানুষের তালিকা দেখে তা বিলি করা হয়। কিন্তু এ বার মে মাসের শুরুতেই বরোয়-বরোয় সে সব জিনিস পৌঁছে গিয়েছে। বরো অফিসগুলিতে সেগুলির ‘প্রদর্শনী’ চলছে যেন!

পুরসভা সূত্রের খবর, বহু বছর ধরেই ইদের সময়ে পোশাক বিলির রেওয়াজ রয়েছে। সেই মতো গত ফেব্রুয়ারিতে এই খাতে ৯৩ লক্ষ ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। শাড়িপিছু ৩২৫ টাকা দরে তন্তুজ থেকে কেনার কথাও বলা হয়েছিল। ইদের আগে ১২,৩৬০টি শাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক পদস্থ পুর আধিকারিক বলেন, ‘‘গত মার্চে টেন্ডার কমিটি প্রস্তাব অনুমোদন করে। গত ৯ মার্চ মেয়র পরিষদের বৈঠকেও প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছিল। তার পরেই এগুলি কেনা হয়। এটা রুটিন কাজ। এর মধ্যে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের প্রশ্ন ওঠে না।’’

বেশ কিছু দিন আগেই ওই পোশাক বরো অফিসগুলিতে চলে গিয়েছে। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। কলকাতা দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র বসু বলেন, ‘‘নির্বাচনের সময়ে এ রকম দেখাবে কেন? পোশাক দেওয়ার হলে পরে দেবে। কিন্তু এ ভাবে লোককে দেখানো কি ঠিক হচ্ছে? এটাও তো এক ধরনের রাজনৈতিক প্রচার!’’ কলকাতা পুরসভার ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সুব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘ও ভাবে দেখানো যা, বিলি করাও তাই!’’ পুরসভার ১১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাম কাউন্সিলর চয়ন ভট্টাচার্য আবার বলছেন, ‘‘কলকাতা পুরসভাকে এমন ভাবে কৌশলে ব্যবহার করা হচ্ছে যে বিরোধীদের অধিকার প্রাতিষ্ঠানিক ভাবেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে!’’

যদিও শাসক দলের তরফে বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুরসভার ২ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সাধন সাহা বলেন, ‘‘পোশাক প্রতি বছরই দেওয়া হয়। তাই আলাদা করে এটা দেখানো বা বলারও বিষয় নয়। সকলেই এটা জানেন।’’ তবে তৃণমূল কাউন্সিলরদেরই একাংশের বক্তব্য, অন্যবারের তুলনায় এ বছর একটু তাড়াতাড়িই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এক তৃণমূল কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘অন্যবার এত তাড়াতাড়ি পোশাক আসে না। এ বারই ব্যতিক্রম।’’ ছ’নম্বর বরো অফিসেও একই ভাবে প্যাকেটভর্তি পোশাক রাখা রয়েছে। ওই বরোর চেয়ারম্যান সঞ্চিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘ভোটের জন্যই এই তাড়াহুড়ো। তবে আগে আনা হলেও নির্বাচনী বিধি মেনেই কেউ তা বিলি করছে না। করার প্রশ্নও নেই।’’ ১৬ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান ইন্দ্রজিৎ ভট্টাচার্য আবার বলছেন, ‘‘অন্য বরোয় কী হয়েছে জানি না। তবে আমার বরোয় এখনও কিছু আসেনি।’’

ফলে পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে লুঙ্গি, শাড়ি নিয়েই আপাতত রাজনীতির দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy