Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Garden Reach Building Collapse

বেআইনি নির্মাণ অজস্র, আতঙ্কে গার্ডেনরিচ

রবিবার রাতে গার্ডেনরিচে ভেঙে পড়া ওই পাঁচতলা বাড়িটির কাছে পৌঁছতে গিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হল। সরু গলি, তস্য গলি পেরিয়ে গিয়ে দেখা গেল, চার ফুট রাস্তার উপরে গায়ে গায়ে একাধিক বহুতল গজিয়েছে।

পাশের বাড়ির গায়ে হেলে পড়া বাড়িটির ছাদের এমন অবস্থা। সোমবার, গার্ডেনরিচে।

পাশের বাড়ির গায়ে হেলে পড়া বাড়িটির ছাদের এমন অবস্থা। সোমবার, গার্ডেনরিচে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৪ ০৭:৪৮
Share: Save:

বহুতল বাড়ি দু’টি যেন একটি অন্যটির সঙ্গে জুড়ে রয়েছে। মাঝে কোনও ফাঁক নেই বললেই চলে। যে কোনও মুহূর্তে একটির উপরে অন্যটি হেলে পড়তে পারে। মাস দুয়েক আগে যেমনটা হয়েছিল পাহাড়পুর রোডে।

রবিবার গভীর রাতে গার্ডেনরিচের ফতেপুরে ভেঙে পড়া নির্মীয়মাণ পাঁচতলা বাড়িটি বেআইনি বলে জানিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দিনভর ওই তল্লাটের আনাচকানাচে ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখেমুখে চোখে পড়ল আতঙ্ক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দার ক্ষোভ, ‘‘পুরসভার অনুমতি ছাড়াই একের পর এক বহুতল তৈরি করা হচ্ছে। চার ফুট চওড়া রাস্তায় কী ভাবে পাঁচতলা বাড়ি তৈরি হয়?’’ পাহাড়পুর রোডের বাসিন্দা এক বৃদ্ধের অভিযোগ, ‘‘গত পাঁচ-ছ’বছরে বেআইনি বাড়ির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সঙ্কীর্ণ রাস্তায় দিনের পর দিন পড়ে থাকা ইট, বালি, সিমেন্টের গুঁড়ো থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। পুরসভায় অভিযোগ জানিয়েও কোনও কাজ হয় না।’’

রবিবার রাতে গার্ডেনরিচে ভেঙে পড়া ওই পাঁচতলা বাড়িটির কাছে পৌঁছতে গিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হল। সরু গলি, তস্য গলি পেরিয়ে গিয়ে দেখা গেল, চার ফুট রাস্তার উপরে গায়ে গায়ে একাধিক বহুতল গজিয়েছে। তার মধ্যে দু’-তিনটি নির্মীয়মাণ। বাকি দু’টি একেবারে গায়ে-গায়ে। ঘটনাস্থলের কাছে পাহাড়পুর রোডেও দু’টি নির্মীয়মাণ বহুতল পরস্পরের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পাঁচতলা সেই দু’টি বহুতলের উপরের অংশ এমন ভাবে পরস্পরের সঙ্গে প্রায় লেগে রয়েছে যে, বড়সড় বিপদ স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।

কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক আধিকারিক স্বীকার করে নিলেন যে, এই সমস্ত বহুতলের নির্মাণকারীরা বেশির ভাগই ক্ষেত্রেই পুর আইন মানেন না। তা হলে পুরসভার বিল্ডিং দফতরের তরফে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কেন? ওই আধিকারিকের জবাব, ‘‘সবই তো বোঝেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাণের ভয়েই এখানে আধিকারিকেরা বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেন না।’’ মাস দুয়েক আগে এই তল্লাটের পাহাড়পুর রোডে একটি বহুতল আর একটির উপরে হেলে পড়েছিল। দু’টি বহুতলই পুর অনুমোদন ছাড়া তৈরি।

বিল্ডিং বিভাগ সূত্রের খবর, গার্ডেনরিচে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একতলা বা দোতলার অনুমতি নিয়ে আট থেকে ন’তলা বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। সবটাই স্থানীয় পুরপ্রতিনিধিদের সামনে ঘটছে বলে অভিযোগ। অথচ, মেয়র ফিরহাদ হাকিম এ দিনও বেআইনি নির্মাণের রমরমার প্রসঙ্গে পুরপ্রতিনিধিদের পাশে দাঁড়ান। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওয়ার্ডে কোথায় কত বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে, তা নজরে রাখা কাউন্সিলরের কাজ নয়। এটায় প্রশাসন হস্তক্ষেপ করবে।’’ বিরোধীদের বক্তব্য, পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন খোদ মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি আবার বন্দর এলাকার বিধায়কও। তা হলে গার্ডেনরিচ এলাকায় বেআইনি নির্মাণ ঠেকাতে প্রশাসন ব্যর্থ কেন? জবাবে মেয়র তথা পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, ‘‘বাম আমলে বেআইনি নির্মাণের রমরমা বেশি ছিল। এখন অনেক কমেছে। আমরা অনেক বেআইনি নির্মাণ ভাঙছি।’’

মেয়র আশ্বাস দিলেও রবিবারের ঘটনার পরে ফতেপুর, পাহাড়পুর রোডের একাধিক বহুতলের বাসিন্দারা আতঙ্কে ভুগছেন। তাঁদের একটাই কথা, ‘‘অনেক কষ্টে ফ্ল্যাট কিনেছি। আমাদের ফ্ল্যাটের ভিত ঠিক আছে তো? পুকুর ভরাট করে তৈরি হয়নি তো?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Garden Reach Mishap
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE