Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Chhath Puja

ছটের আগে চিন্তা বাড়াচ্ছে মজুত বাজি

ছট এবং জগদ্ধাত্রী পুজোতেও এ বছর সব রকম বাজি বিক্রি এবং পোড়ানো নিষিদ্ধ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২০ ০৪:০৭
Share: Save:

কিছু ফাটানো হয়েছে, বাজেয়াপ্তও হয়েছে প্রচুর। তবু পুলিশেরই হিসেব বলছে, এখনও অধরা রয়ে গিয়েছে বহু বাজি। অর্থাৎ, আশঙ্কা সত্যি করে বিস্ফোরক আইন ভেঙে কালীপুজো এবং দীপাবলিতে শহরেই মজুত ছিল নিষিদ্ধ বাজি! ছটপুজোর আগে যা পুলিশ-প্রশাসনের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবেশকর্মীদের বড় অংশেরই প্রশ্ন, ওই মজুত বাজিই ছটের রাতে ঘুম কেড়ে নেবে না তো?

ছট এবং জগদ্ধাত্রী পুজোতেও এ বছর সব রকম বাজি বিক্রি এবং পোড়ানো নিষিদ্ধ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। একই নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। নির্দেশ আসার পরে বাজি ব্যবসায়ীদের অনেকেই জানিয়েছিলেন, ইতিমধ্যেই তাঁরা প্রচুর বাজি মজুত করে ফেলেছেন। ফলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, বিক্রি করতে না পারলে বিস্ফোরক আইনের বিধি মেনে ওই সব বাজি নির্দিষ্ট ‘সেফ হাউসে’ রাখার ব্যবস্থা করবেন কি তাঁরা? নাকি বিপজ্জনক ভাবে সেগুলি ফেলে রাখা হবে জনবসতির মধ্যে গুদামে? অনেকে আবার পুজোয় গোপনে বাজি বিক্রি করে হাল্কা হতে চাইবেন বলেও ভাবা হয়েছিল।

কালীপুজো এবং দীপাবলির দিনে সেই আশঙ্কাই সত্যি হতে দেখা গেল। কলকাতা পুলিশেরই হিসেব অনুযায়ী, কালীপুজোর আগের দিন পর্যন্ত শহর থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কিলোগ্রাম বাজি উদ্ধার করেছে তারা। সেখানে কালীপুজো এবং দীপাবলির দিনে বাজি উদ্ধার করা হয়েছে যথাক্রমে ১৬৩৭.০৫ এবং ১৩৪.৪ কিলোগ্রাম। বাজি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি জানাচ্ছে, এমনিতে শহরের মধ্যে ছোট দোকানে একসঙ্গে ১৫ কিলোগ্রাম এবং অপেক্ষাকৃত বড় জায়গায় ১৫০ কিলোগ্রাম বাজি বিক্রির লাইসেন্স দেওয়া হয়। তবে বিক্রির আগে বা পরে অত পরিমাণ বাজি কোথাওই মজুত রাখা যায় না। অর্থাৎ, পুলিশের উদ্ধার করা মোট প্রায় সাত হাজার কিলোগ্রাম বা কোটি টাকার কাছাকাছি দামের বাজি ছড়িয়ে ছিল শহরে। বাজির বিষয়ে নজরদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত কলকাতা পুলিশের রিজ়ার্ভ ফোর্সের এক আধিকারিক বললেন, “বড়বাজারের একটি গুদাম থেকে একসঙ্গে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার বাজি উদ্ধার হয়েছে। কোনও এক জায়গা থেকে ওটাই একসঙ্গে পাওয়া সর্বাধিক পরিমাণ বাজি। বাকি উদ্ধার হয়েছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। বিক্রেতারা ধরা পড়ে অনেকেই বলেছেন, রাতারাতি কোথায় সরাবেন? তাই বাড়ির কাছে কিছু দিন রেখে সুযোগ বুঝে বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন।”

গ্রেফতার হওয়া একাধিক বাজি ব্যবসায়ী আবার জানিয়েছেন, রাজ্যে বাজি নিষিদ্ধ হওয়ার পরে তাঁরা অনেকেই মজুত বাজি ভিন্ রাজ্যে বিক্রি করার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু আশপাশের রাজ্যগুলিতেও তড়িঘড়ি বাজি নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে শুরু হয় পুলিশি ধরপাকড়। ফলে বেশির ভাগ বাজিই আপাতত রাখা এই শহর বা শহরতলির গুদামে। এখানেই প্রশ্ন, পুলিশ সেগুলি সব বাজেয়াপ্ত না করা পর্যন্ত কি তবে বারুদের বিপদ নিয়েই বাস করবে শহর? রাতারাতি সব বাজি উদ্ধার করাও কি সম্ভব? পরিবেশকর্মীদের অনেকেরই প্রশ্ন, “লুকিয়ে গুদামে ভরে রাখা এই সব বাজিই ফের বেরিয়ে পড়বে না তো ছটের উৎসবে?”

কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা কেউই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাইলেন না। তাঁরা বরং ব্যস্ত সেই প্রচারে, যে বাজি অন্য বারের তুলনায় অনেক কম পুড়েছে। দূষণও তাই অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু আদালত যখন সব বাজিই নিষিদ্ধ করেছে, তখন কি একটিও বাজি ফাটার কথা? লালবাজার সদরের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক এ প্রশ্ন শুনেও বললেন, “বাজি কম ফেটেছে সেটা বলতেই হবে। তা ছাড়া যেখানে যা মজুত আছে তা-ও ছটের আগেই সব খুঁজে বার করা হবে।”

এ কথা অবশ্য মানতে পারছেন না পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না। বললেন, “এখনও অনেকের কাছেই বাজি রয়ে গিয়েছে।ছ’হাজার কোটিরও বেশি টাকার শিল্প। রাতারাতি সেগুলির গতি করা এ ভাবে সম্ভব নয়। বাজি ব্যবসায়ীদের কথা ভেবেও কিছু একটা করা উচিত।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy