নবান্নের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদলের সাংবাদিক বৈঠক। —নিজস্ব চিত্র।
নবান্ন থেকে স্বাস্থ্য ভবনে ফিরে আবারও সরাসরি সম্প্রচারে রাজ্যের আপত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেন, “সরাসরি সম্প্রচারে রাজ্য সরকারের কিসের ভয়? আমরা ন্যায়বিচারের দাবি নিয়ে গিয়েছিলাম। বিচারের পথে যাঁরা বাধা সৃষ্টি করেছে, যাতে কর্মস্থলে নিরাপত্তা থাকে এবং যাতে কর্মস্থলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকে, সে নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম। এর আগের ইমেলগুলিতে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন কি না, সে কথা কোথাও উল্লেখ ছিল না। আলোচনা নিয়ে প্রথম সদর্থক ভূমিকা আমরাই নিয়েছিলাম।”
জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেন, “আমরা বাইরের কারও কথায় চালিত হচ্ছি না। এটি ভিত্তীহীন কথাবার্তা। মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছা আছে। আমাদের সদিচ্ছা আছে। সাধারণ মানুষের সদিচ্ছা আছে। আমরা রাজ্য প্রশাসনের একাংশের ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলতে এসেছি। বিচার পেতে ৩৫ দিন চলে গেল। প্রত্যেক মানুষের মৃত্যু দুঃখজনক। আমাদের কাছে ব্যক্তিগত ক্ষতি। মনে হয় আমরা হেরে গেলাম। এত মেডিক্যাল কলেজ। কিন্তু পরিকাঠামো কোথায়?”
আন্দোলনরত জুনিয়ার ডাক্তারদের বক্তব্য, “আমাদের প্রতিনিধিদল ও সরাসরি সম্প্রচারের কথা বলেছিলাম আগেই। ন্যায্য দাবি ছিল সরাসরি সম্প্রচার। তাঁরা সুস্পষ্ট উত্তর দেননি। আমরা রাজ্যের সর্বোচ্চ অফিসে এসেছিলাম। আমরা ভাই বোনের মতোই তাঁর কাছে। আমাদের নিজেদের স্বার্থ নেই। এটা সাধারণ মানুষের স্বার্থ। তাঁর চেয়ারের দাবিতে আমরা আসিনি। আমাদের বোন ও তাঁর পরিবারের জন্য এসেছিলাম। আবার যে কোনও জায়গায় আলোচনা ডাকলে, আমরা যেতে প্রস্তুত। এখানে ইগোর লড়াই নয়, বিচারের লড়াই। বিচারের স্বার্থ নিয়ে এটা লড়াই। ইগো শব্দ নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে। ইগো, জেদ, অহংকার আমাদের নেই। আমরা সবাই এখানে ডাক্তার। আমাদের কাছে যতজন রুগী এসেছেন, সেই সরকারি পরিষেবার রুগীরা ফোন করে বলছেন, তাঁরা আমাদের পাশে আছেন।”
জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেন, “সুপ্রিম কোর্টে যদি লাইভ স্ট্রিমিং হতে পারে, তাহলে কেন এই কথা উঠছে? আমরা বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আসিনি। আমরা আমাদের দাবি নিয়ে আলোচনা করতে এসেছিলাম। আরজি করের ঘটনায় সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন কথা হয়েছে। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বহু সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এই ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। অনেক সরকারি আধিকারিকও করেছেন। আমরা অবস্থান মঞ্চে ফিরে যাব। জানতে পারলাম নবান্নের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদি বন্ধ হয়ে যায়, আশা করি, দরজা আবার একদিন খুলবে। আমাদের অবস্থান চলবে।”
আন্দোলনকারীদের কথায়, “আমাদের সদিচ্ছা এখনও আছে। আশা করি, মুখ্যমন্ত্রীরও সদিচ্ছা এখনও আছে। আমরা ৩৪ দিন রাজপথে পড়ে রয়েছি। দরকার হলে, ৩৫ দিন, ৩৬ দিন, ৩৭ দিন থাকব। কিন্তু আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান বার হবে, এটা আমাদের বিশ্বাস।”
জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, “যাঁদের অপসারণের জন্য আমরা দাবি তুলেছি, সেই দাবির কি ন্যায়বিচারের সঙ্গে যোগাযোগ নেই? অবশ্যই যোগ আছে। এই মানুষগুলি যদি পদে বহাল থাকেন, তাহলে তদন্ত প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। সেই জায়গায় আমাদের মনে হয়েছিল, পাঁচটি দাবিই সমান গুরুত্ব পাবে। এই চেয়ার, এই ভবনের উপর আমাদের এখনও ভরসা আছে। তাই আমরা এখনও অপেক্ষা করছি।”
জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেন, “৩৪ দিনের মাথায় এসে আলোচনা ফলপ্রসু হওয়া দরকার ছিল, এ কথা আমরাও মনে করি। কারণ রাজ্যের প্রতিটি মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য বিপর্যস্ত। এই জায়গায়আমরা মনে করেছিলাম, এই আলোচনা হওয়া দরকার। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতার জন্য সেটি হতে পারল না। এর জন্য আমরা যারপরনাই হতাশ হয়েছিল।”
জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা নবান্নে এসেছিলাম। পাঁচ দফা দাবি নিয়ে কথা বলতে এসেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী যেমন বলেছিলেন, তেমন খোলা মনেই কথা বলতে এসেছিলাম। আমরা শুরু থেকেই বলেছিলাম, ৩০ জনের প্রতিনিধিদলের কথা। সবাই নির্যাতিতার ন্যায়বিচারের জন্য তাকিয়ে ছিলেন আমাদের দিকে। তাই আমরা চেয়েছিলাম সরাসরি সম্প্রচার হোক। এখানে আসার পর, আমরা নবান্নের আধিকারিকদের সঙ্গে সহযোগিতা করছিলাম, ফোন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম। তখনই জানতে পারি, সরাসরি সম্প্রচারের দাবি তাঁরা মানতে পারছেন না। কিন্তু তখন তাঁরা আমাদের স্পষ্ট করে কিছুই জানাননি। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই আমরা অপেক্ষা করছিলাম। অপেক্ষারত অবস্থাতেই শুনতে পারলাম, মুখ্যমন্ত্রী প্রেস বিবৃতি দিচ্ছেন।”
সাংবাদিকদের মুখোমুখি জুনিয়র ডাক্তারেরা
জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদল বলেন, “আমরা এখনও আশা রাখছি। এই চেয়ারে ও এই বিল্ডিংয়ে ভরসা আছে। তাই আমরা অপেক্ষা করছি। নবান্নের দরজা বন্ধ হচ্ছে। আমরা আশা রাখব, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছা আছে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”
জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেন, “চেয়ারের জন্য নয়, চেয়ারে ভরসা রেখেই আমরা আলোচনার জন্য এসেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে আমরা হতাশ। আমরা এখনও আশা রাখছি। এই চেয়ারের প্রতি আমাদের ভরসা এখনও আছে। তাই আমরা অপেক্ষা করছি এখনও।”
নবান্নের সামনেই সাংবাদিক বৈঠকে বসলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বৈঠকের জন্য অপেক্ষা করার পর মুখ্যমন্ত্রী আগেই নবান্ন ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। ডাক্তারেরা বললেন, “আমরা খুব বিনীত ভাবে জানাতে চাই, আমরা চেয়ারের জন্য কোনও আলোচনা করতে আসিনি। আপনি ভুল ভেবেছেন। আমরা এসেছিলাম ন্যায়বিচারের দাবিতে। যাতে আলোচনা হয়, সেই দাবিতে এসেছিলাম।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাত জোড় করে তিনি বললেন, ‘‘তিন দিনেও সমাধান করতে পারলাম না। বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। যাঁরা নবান্নের সামনে এসেও বৈঠকে এলেন না, তাঁদের আমি ক্ষমা করলাম। মুখ্যমন্ত্রী যে মন্তব্য করলেন দরকার হলে চেয়ার ছেড়ে পারি... সেই মন্তব্যে আমরা হতাশ।’’
জুনিয়র ডাক্তারেরা বাসে চেপে নবান্নে পৌঁছে গেলেও, এখনও কাটেনি বৈঠকের জট। আলোচনা সরাসরি সম্প্রচার চাইছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। কিন্তু তাতে রাজি নয় সরকার। ফলে বৈঠকে এখনও বসা সম্ভব হল না। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে না বার হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অপেক্ষা করবেন বৈঠকের জন্য।
মঙ্গল, বুধের পর বৃহস্পতিতে নবান্নে বৈঠকের জন্য ফের এক বার ডাকা হয়েছিল আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের। কিন্তু জট এখনও কাটেনি। আলোচনা পর্ব সরাসরি সম্প্রচার না হলে, নবান্নে বৈঠকে বসতে নারাজ আন্দোলনকারী ডাক্তারেরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে ১৫ জনের প্রতিনিধিদলকে ডাকা হয়েছিল নবান্নে। কিন্তু প্রায় ৩০-৩২ জন জুনিয়র ডাক্তার বাসে চেপে নবান্নে গিয়েছেন। তাতেও রাজি হয়েছে প্রশাসন। যে বর্ধিত প্রতিনিধিদল গিয়েছে, সকলকে নিয়েই আলোচনায় রাজি নবান্ন। কিন্তু সরাসরি সম্প্রচারে রাজি নয় সরকার। পরিবর্তে, বৈঠকের ভিডিয়ো রেকর্ডিং করা যেতে পারে বলে জানিয়েছে নবান্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy