বিক্ষোভ বাম এবং কংগ্রেস কর্মীদের। নিজস্ব চিত্র।
মাসখানেক আগে ত্রিপুরায় যা হয়েছিল, তার সঙ্গে তুলনা টেনে কলকাতার পুরভোটকে ‘প্রহসন’ আখ্যা দিল বিরোধী বাম ও কংগ্রেস। গোটা কলকাতা জুড়েই বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বিরোধী পক্ষের এজেন্টদের বার করে দিয়ে, প্রার্থী ও দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মারধর করে শাসক দলের বাহিনী ভোট লুঠ করেছে বলে অভিযোগ তাদের। ভোট লুঠের অভিযোগে রবিবারই কোথাও রাস্তা অবরোধ, কোথাও থানা ঘেরাও করেছেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বামফ্রন্ট। কংগ্রেসের এক দল নেতা-কর্মী এ দিনই কমিশনের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন। শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব অবশ্য এ সবই বিরোধীদের ‘নাটক’ বলে কটাক্ষ করেছেন।
উত্তর কলকাতার একাংশ এবং দক্ষিণ ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় এ দিন সকাল থেকে জাল ভোট ও গা-জোয়ারির অভিযোগ তুলে রাস্তায় ছিলেন বাম প্রার্থী, কর্মী ও সমর্থকেরা। বড়তলা থানা ঘেরাও করে এক সময়ে বসে পড়েন তাঁরা। বাঘাযতীন মোড়ে রাস্তাও অবরোধ হয়। বেশ কিছু জায়গায় এজেন্টরা আক্রান্ত হয়েছেন, কোথাও প্রার্থীদের নিগ্রহ করার অভিযোগ এসেছে। কলকাতার ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী দীপু দাসের পরিবারের লোকজনও ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ। গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী ফৈয়াজ আহমেদ খানের। দিনভর নানা জায়গা থেকেই এজেন্টদের বার করে দেওয়া ও জাল ভোটের অভিযোগ এসেছে। দিনের শেষে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়েছেন, পুরভোটকে ‘প্রহসনে’ পরিণত করে যে ভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার লুঠ করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে আজ, সোমবার ও কাল, মঙ্গলবার রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ-অবস্থান হবে। যেখানে আজ সম্ভব হবে না, সেখানে পরের দিন কর্মসূচি হবে। কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের নেতৃত্ব ১৬টি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ ও আরও ১১টি ওয়ার্ডে আংশিক পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।
আরামবাগে এ দিন দলের হুগলি জেলা সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘নির্বাচন কমিশন অথবা পুলিশ-প্রশাসন, সবই তৃণমূলের বর্ধিত শাখা! যেমন করে ওরা বলছে, তেমন করে চলছে। গোটা কলকাতা জুড়ে বিরোধী পক্ষকে কোথাও বসতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা ভোট হচ্ছে?’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘তৃণমূল ভোট লুঠছে, যতটা লড়ার লড়ছেন সাধারণ মানুষ ও বামপন্থীরা। বুথ থেকে বার করে দিচ্ছে, আবার ঢুকছে। রাস্তায় থাকছে। কোথায় বিজেপি?’’
বস্তুত, ভোটের দিন রাস্তায় দেখা গিয়েছে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদেরও। বড়বাজার, বিবাদী বাগ, শিয়ালদহ-সহ মধ্য কলকাতার নানা অংশে তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর হয়েছে কংগ্রেসের। তালতলায় মার খেয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী, বিবাদী বাগের ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠকের নির্বাচনী এজেন্ট অমিতাভ চক্রবর্তী ভোট-কেন্দ্রে আক্রান্ত হয়েছেন। ভুয়ো ভোটার কার্ড এনে ভোট করানো, হামলার জন্য তৃণমূলের দিকে আঙুল তোলার পাশাপাশি তাঁদের অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রেই পুলিশের বড় অংশ শুধু নীরব দর্শক হয়ে থাকাই নয়, শাসক দলকে মদত করেছে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভবাবুর বক্তব্য, ‘‘ত্রিপুরায় গণতন্ত্র হত্যার জন্য কলকাতায় যাঁরা ধিক্কার-সভা করেন, তাঁরা আজ কলকাতায় ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচনে গণতন্ত্রের অপমৃত্যুতে একটা কালা দিবস করবেন কি?’’ ভোটের নামে প্রহসনের প্রতিবাদে কমিশনের সামনে এ দিন বিকালে কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বাধে। প্রাক্তন বিধায়ক অসিত মিত্র, ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি সৌরভ প্রসাদ, সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান শামিম আখতার-সহ অনেককে গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে যায় পুলিশ। সন্ধ্যায় আবার কমিশনে গিয়ে চুড়ি ও ফুল দিয়ে ‘গাঁধীগিরি’ করে আসেন আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কংগ্রেস কর্মীরা।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘দিদি কথা রাখেননি। তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও মানুষের ভোটের উপরে আস্থা রাখতে পারছেন না। কয়েক ঘণ্টা ধরে কলকাতা শহরে জাল ভোট চলেছে। পুলিশের চোখের সামনে ভোট লুঠ হয়েছে। এই প্রহসন বাংলার লজ্জা!’’ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘ভোটের ফল কী হতে চলেছে বুঝে নিয়ে সকাল থেকেই বিরোধীরা নাটক করেছেন। মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট দিয়েছেন। দু-একটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া অশান্তি হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy