Advertisement
E-Paper

Lata Mangeshkar: গ্র্যান্ড হোটেল নয়, উঠলেন হেমন্তের বাড়িতে!

লতাকে দেখার, অনুভব করার এই সময়টুকুই এখন একুশ শতকের কলকাতাকে ছুঁয়ে।

স্মৃতি: (উপরে) বসুশ্রীতে লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যান্যরা।

স্মৃতি: (উপরে) বসুশ্রীতে লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যান্যরা। ফাইল চিত্র

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৩৫
Share
Save

১৯৫০-এর দশকের সেই কলকাতায় দু’জন ছিপছিপে তরুণী এলেন ভবানীপুরে রূপনারায়ণ নন্দন লেনের বাড়িটায়। গীতা রায় (পরবর্তী কালে দত্ত) এবং লতা মঙ্গেশকর। গীতা মধ্যাহ্নভোজ সেরে চলে গেলেও লতা সামনের কয়েকটা দিনের জন্য সেখানেই থেকে গেলেন। ভবানীপুরের বাড়িটাও তো সাক্ষাৎ তাঁর ‘দাদারই’ বাড়ি। দাদা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।

রবিবার সন্ধ্যায় সে দিনের তরুণী লতাই রয়েছেন, হেমন্তের ভাইঝি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুমিত্রা রায়ের (মুখোপাধ্যায়) স্মৃতি জুড়ে।

সম্ভবত রাজ্যপাল হরেন্দ্রকুমার মুখোপাধ্যায়ের ডাকে কোনও তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠান উপলক্ষে লতাদের সেই আসা। তারকা গায়িকাদের জন্য গ্র্যান্ড হোটেলেই থাকার বন্দোবস্ত। কিন্তু ‘হেমন্তদাদা’ কলকাতায় থাকলে লতা আর কোন দুঃখে অন্যত্র থাকবেন! আর একটি বার, ১৯৫৪-য় লতার কলকাতায় আসার সূত্রেই বলা যায়, একটি কাণ্ড ঘটে বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে। ‘আরে লতা এসেছে, কিছু একটা ফাংশন হবে না’, মোটামুটি হেমন্তের ডাকেই বসুশ্রীতে পয়লা বৈশাখে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল। লতা কোনও সাম্মানিক নেননি। বসুশ্রীর নববর্ষ-যাপন ক্রমশ কলকাতার একটা পরম্পরা হয়ে উঠবে।

বসুশ্রীর চাঁদের হাটের অন্যতম চাঁদ ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্র গৌতম তখন খুবই ছোট। তবে তাঁর স্পষ্ট মনে আছে, বাড়িতে অনুষ্ঠান শেষে মায়েদের আলোচনা! লতা আর সন্ধ্যা দু’জনেই অসামান্য গেয়েছেন। লতা ‘মহল’-এর সুপারহিট ‘আয়েগা আনেওয়ালা’ তো গেয়েইছিলেন, সম্ভবত ‘জিন্দগি উসি কা হ্যায়, জো কিসি কা হো গয়া’ গানটিও গান।

ওই দু’বারই নিজেদের বাড়িতে কলকাতাবাসের সূত্রে ভারতের ‘সঙ্গীত-সম্রাজ্ঞীর’ একটা অদেখা, অজানা ছবি হেমন্তের ভ্রাতুষ্পুত্রীর চোখে আঁকা হয়ে গিয়েছে। “যেটা সব থেকে মনে পড়ে, তা হল সকাল সকাল স্নান সেরে লতা আমাদের ঠাকুরঘরে পুজো করছেন। নিজের বাবা দীননাথ মঙ্গেশকরের ছবিতেও উনি পুজো করতেন’’, স্মৃতিচারণ সুমিত্রার। তবে সব চেয়ে অবাক হয়েছিলেন লতার খাওয়া দেখে। সুমিত্রা বললেন, “লতা কিন্তু প্রায়ই নিজের খাবার রেঁধে নিতেন। আমরা তাজ্জব, দইয়ে কেউ অত লঙ্কা দিয়ে খায়!” ‘বৌঠাকুরানির হাট’ ছবির জন্য ‘হৃদয় আমার নাচে রে’ গানটিও সম্ভবত দ্বিজেন চৌধুরীর কাছে ওই বাড়িতেই তুলেছিলেন লতা। হেমন্তের মা কিরণবালাকে মায়ের মতো শ্রদ্ধা করতেন শিল্পী। আর সুমিত্রার মনে আছে, এক বার লতাকে বেলুড় মঠ ঘুরিয়ে এনে মেজোকাকা (হেমন্ত) মাকে কী বলেছিলেন। বেলুড়ের সন্ধ্যারতি দেখে লতা নাকি ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলেন। হেমন্তকে বলেন, দাদা, আমার যে এখানেই থেকে যেতে ইচ্ছে করছে!

তবে বসুশ্রীতে লতার অনুষ্ঠানের বছরে তাঁকে কলকাতা ঘোরানো সম্ভব হয়নি হেমন্তের পক্ষে। সুমিত্রার মনে আছে, মেজোকাকার সে বার পা ভেঙেছিল। অগত্যা হেমন্তের নির্দেশে আসরে নামতে হল বসুশ্রীর অন্যতম কর্ণধার তথা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তা মন্টু বসুকে। তিনিই লতাকে চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, পরেশনাথের মন্দির ইত্যাদি ঘুরিয়ে দেখান। মন্টুবাবু মারা গিয়েছেন বছর সাতেক হল। তাঁর ভাইপো সৌরভ শুনেছেন, এর পরেও বসুশ্রীর অনুষ্ঠানে লতা এসেছেন। পয়লা বৈশাখ ছাড়াও শীতকালীন অনুষ্ঠানে। পরেও লতার অজস্র অনুষ্ঠান কলকাতায়। নেতাজি ইন্ডোরে কিশোরকুমারের সঙ্গে দ্বৈতসঙ্গীত চলছে, ‘অভিমান’-এর ‘তেরে মেরে মিলন কে ইয়ে রেয়না’! লতা বরাবরই গাইবার সময়ে সিরিয়াস, তবে কিশোরের দুষ্টুমিতে হেসেও ফেলছেন।

অক্রুর দত্ত লেনে ভি বালসারার বাড়িতে গানের রেকর্ডিং করেছিলেন লতা। দু’জনের ছবিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন বাড়ির বাসিন্দাদের। রবিবার।

অক্রুর দত্ত লেনে ভি বালসারার বাড়িতে গানের রেকর্ডিং করেছিলেন লতা। দু’জনের ছবিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন বাড়ির বাসিন্দাদের। রবিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

শিল্পীকে কলকাতা বা বাংলার অন্যত্র নানা অনুষ্ঠানে নিয়ে আসার পিছনে বিশিষ্ট মুখ তোচন ঘোষের কাছে একটি গর্বের স্মৃতি তাঁর জীবনের অন্য এক লতা-সংযোগ। তোচন বলেন, “আমার পিসেমশাই সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সুরেই কিন্তু লতার প্রথম বাংলা গান, ‘আকাশপ্রদীপ জ্বলে’!” লতার মধ্যে তোচন
আবার দেখেছেন এক সঙ্গে দু’জনকে। এক জন, যিনি বাংলার ঐতিহ্যের প্রতি চিরপ্রণত। ভবানীপুরের পরে মেনকা সিনেমার কাছে হেমন্তদাদার পরবর্তী বাসস্থানটিও তাঁর তীর্থস্থান। আর এক জন লতা আবার কম কথার মানুষ। গানের বাইরে খামোখা কথা বলতে যাঁকে কার্যত দেখাই যেত না। দুর্গাপুরের অঞ্জন দাসেরও মনে আছে, ১৯৮৩-তে তোচন ঘোষ ও বিশু চক্রবর্তীর উদ্যোগে লতার অনুষ্ঠানের ২০ হাজার টিকিট তিন ঘণ্টায় উড়ে গেল।

দক্ষিণ কলকাতার মনোহরপুকুরে লতার স্মৃতি নিয়ে রয়েছেন, ‘চন্দন কা পলনা’ গানের যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী নালু মিত্র। বেহালা-শিল্পী দূর্বাদল চট্টোপাধ্যায় আপ্লুত, নেতাজি ইন্ডোরে মঙ্গেশকর পরিবারের সফল অনুষ্ঠানের (পঞ্চপুত্র, পঞ্চকন্যা) শেষে লতাজি নিজে তাঁদের হাতে ফুল তুলে দিচ্ছেন। লতাকে দেখার, অনুভব করার এই সময়টুকুই এখন একুশ শতকের কলকাতাকে ছুঁয়ে।

lata mangeshkar Death

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।