Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

ঘাড়ে বিস্ফোরকের আড়ত, জানতই না লালবাজার

রঘুনাথগঞ্জের পুলিশ যদি সক্রিয় না হতো, তবে কি কলকাতার পুলিশ-প্রশাসন আদৌ হদিস পেত শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে থাকা বিস্ফোরকের আড়তের?

উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক। — নিজস্ব চিত্র।

উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৫ ০২:১১
Share: Save:

রঘুনাথগঞ্জের পুলিশ যদি সক্রিয় না হতো, তবে কি কলকাতার পুলিশ-প্রশাসন আদৌ হদিস পেত শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে থাকা বিস্ফোরকের আড়তের? বস্তা ও ড্রামভর্তি বিস্ফোরকের যে আড়ত লুকনো ছিল জনবহুল স্ট্র্যান্ড রোডের এক অফিসে, যার ঢিলছোড়া দূরত্বে রাজভবন, মহাকরণ এবং খাস লালবাজার, অনতিদূরে নবান্ন। স্বাধীনতা দিবসের আগে বড়সড় জঙ্গি হামলার সতর্কতার পরিস্থিতিতে সিআইডি ও মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের গোয়েন্দাদের এই ‘আবিষ্কার’ স্বভাবতই গুরুতর প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কলকাতার নিরাপত্তাকে।

রবিবার বিকেলে স্ট্র্যান্ড রোডে ছ’তলা একটি বাড়ির একতলায় এক বেসরকারি পরিবহণ সংস্থার অফিস থেকে মিলেছে ১৮টি বস্তায় ঠাসা ৬০০ কিলোগ্রাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, ৪টি বস্তায় ঠাসা ৫০০ কিলোগ্রাম সালফার এবং এক ড্রাম অ্যালুমিনিয়াম গুঁড়ো। সব মিলিয়ে ১১২০ কেজি বিস্ফোরক। গোয়েন্দাদের দাবি, এত বিরাট পরিমাণ বিস্ফোরক দিয়ে প্রচণ্ড শক্তিশালী বোমা ও ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরি করা সম্ভব।

এ দিন যেখান থেকে বিস্ফোরক মিলেছে, তার এক কিলোমিটারের মধ্যেই বাড়ি গিরিশ পার্ক-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত গোপাল তিওয়ারির। মে মাসে সেখান থেকেও বিপুল পরিমাণ বোমার মশলা ও অস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল। তখনও অভিযোগ উঠেছিল পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার।

৮ অগস্ট মুশির্দাবাদের সুতি থেকে রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ দুই যুবককে গ্রেফতার করে। উদ্ধার হয় ৮১ কেজি বোমার মশলা। ধৃতেরা জানায়, কলকাতা থেকে পঙ্কজ গাধাই ও রাজীব দাস তাদের ওই বিস্ফোরক সরবরাহ করেছে। শুক্রবার সিআইডির সাহায্যে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ পঙ্কজ ও রাজীবকে জোড়াবাগান থেকে ধরে। দু’জনেই ওড়িশার বাসিন্দা। এ দিন পঙ্কজকে মুখ ঢেকে নিয়ে এসে সংস্থায় তল্লাশি চালানো হয়। পুলিশ জানায়, পঙ্কজ ও রাজীব সেখানে ম্যানেজার ছিল। সিআইডি সূত্রের খবর, সংস্থার মালিক, ওড়িশার বাসিন্দা সুশান্ত পারিয়ার খোঁজ চলছে। ওড়িশা থেকেই ওই বিস্ফোরক আসে বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা।

গত বছর ২ অক্টোবর খাগড়াগড়ে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছিল। তদন্তে নেমে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) জানতে পেরেছিল, বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন জামাত-উল মুজাহিদিন এ রাজ্যের বর্ধমান, বীরভূম, মু্র্শিদাবাদ জুড়ে জঙ্গিঘাঁটি তৈরির ছক কষেছিল। জোড়াবাগান ও মুর্শিদাবাদের এই বিস্ফোরক কাণ্ডের সঙ্গেও কি জঙ্গি যোগাযোগ রয়েছে? পুলিশের অনেকেই জানাচ্ছেন, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো উচ্চশক্তির বিস্ফোরক সাধারণ জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সদস্যরাই ব্যবহার করে। ডিআইজি (সিআইডি) দিলীপ আদক বলেন, ‘‘এই বিস্ফোরকের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনের সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ সিআইডি জানায়, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সহজলভ্য হলেও তা কিনতে লাইসেন্স লাগে। বাজেয়াপ্ত বিস্ফোরক ভবানী ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

পুলিশের একাংশের মত, কলকাতায় একের পর এক গুলি চলা বা বোমাবাজির ঘটনা ঘটছে। তা নিয়ে মাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে বারবার কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। তার পরেও এই ঘটনায় অনেকেই বলছেন, ‘‘এই ধরনের অপরাধ দমনের জন্য কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স রয়েছে। রয়েছে গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখাও।’’ গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলছেন, ‘‘অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বাজারে বিক্রি করতে অসুবিধা নেই। অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট পরীক্ষাগারে, সার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটেছে, তা ভাল ভাবে খতিয়ে দেখার পরেই মন্তব্য করতে পারব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy