মাতৃভূমি লোকালে পুরুষ যাত্রীদের ওঠানামা। ছবি: সুদীপ ঘোষ
শিয়ালদহ ছেড়ে বনগাঁ যাচ্ছে মাতৃভূমি লোকাল। কামরার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কয়েক জন যুবক। প্ল্যাটফর্মে ঢুকতেই হুড়োহুড়ি করে আরও কিছু পুরুষ উঠে পড়লেন ট্রেনে। তাঁদের পিছু পিছু ধাক্কা খেতে খেতে ট্রেনে উঠে পড়লেন মহিলারা।
শুধু রেলের নিয়মেই নয়, পুরুষদের ওঠা নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ, মৃত্যুর ঘটনার পর আদালতের রায়েও মাতৃভূমি লোকালে পুরুষ ওঠা একেবারেই নিষেধ। কিন্তু কোনও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ‘লেডিজ় স্পেশ্যাল’ মাতৃভূমিতে চলছে অবাধে পুরুষের যাতায়াত।
সাধারণত লোকাল ট্রেনে দু’টি কামরা মহিলাদের জন্য সুরক্ষিত থাকে। বাকি কামরায় ওঠানামা করতে গিয়ে হয়রানি হতে হয় বলে অভিযোগ ছিল মহিলাদের। এর পর অফিসের সময়ে বনগাঁ লোকালের মতো এই সব ট্রেনের ভিড় কার্যত গল্পগাঁথার পর্যায়ে চলে গিয়েছে। সেই জন্য মফস্সল থেকে শহরে কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতের সুবিধায় ২০১০ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাতৃভূমি লোকাল চালু করেন। পূর্ব রেল জানাচ্ছে, বর্তমানে শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় সকালে ডাউন এবং বিকেলে আপ-এ একটি করে বিশেষ এই ট্রেন চলছে।
বছর কয়েক আগে এই শাখারই মাতৃভূমিতে পুরুষদের ওঠা নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ, অবরোধ, গুলি এমনকি মৃত্যুও হয়। তার পরে বন্ধ ছিল ওই ট্রেনে পুরুষদের ওঠা। ফের মাতৃভূমি হয়ে উঠেছে ‘জেনারেল’ ট্রেন। মহিলা যাত্রীদের কথায়, শিয়ালদহ, দমদম, বারাসতের মতো স্টেশনে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আর অন্য স্টেশনে পুলিশের সামনেই অবাধে উঠে পড়ছেন পুরুষ যাত্রীরা। মাঝেমধ্যে বাধা দেয় পুলিশ। কিন্তু পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে পাশ কাটিয়ে যান পুরুষ যাত্রীরা।
মহিলাদের বক্তব্য, ট্রেন ফাঁকা থাকলে কোনও পুরুষ বা ছাত্র উঠলে তাঁরা কিছু বলেন না। বরং বয়স্ক বা প্রতিবন্ধীদের ডেকে বসতে দেওয়া হয়। কিন্তু ভিড় ট্রেনে পুরুষেরা উঠলে কেউ কেউ নানা রকম কটূক্তি করতে থাকেন। প্রতিবাদ করলে অঙ্গভঙ্গি করে উত্ত্যক্তও করা হয়। মহিলা যাত্রীদের অভিযোগ, এ সব নিয়ে পুলিশকে নালিশ করেও লাভ হয় না। শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় মোট রেল পুলিশ থানা (জিআরপি) রয়েছে পাঁচটি। পুলিশের তথ্যই বলছে, গত ছয় মাসে মাতৃভূমিতে ছিনতাই, পকেটমার এবং কটূক্তির অভিযোগের সংখ্যা পঞ্চাশেরও বেশি।
দেখা গেল, অফিস ফেরত পুরুষ যাত্রীর কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে মাতৃভূমিতে। হৃদয়পুরের বাসিন্দা প্রথম বর্ষের ছাত্রী অনামিকা রায় বলেন, ‘‘ট্রেনটা লেডিজ় স্পেশ্যাল নামেই, আসলে জেনারেল হয়ে গিয়েছে।’’ গোবরডাঙার এক শিক্ষিকা জানান, বারাসত পার হলেই আরও বাড়তে থাকে পুরুষদের ভিড়। ১২ কামরার মধ্যে এক-দু’টি কামরায় ২-৩ জন পুলিশ থাকে। বাকি কামরায় অবাধ প্রবেশ পুরুষদের। দেখা গেল, পুলিশ কিছু বললে লাফ দিয়ে প্ল্যাটফর্মে নেমে যাবেন বলে অনেক যুবক দাঁড়িয়ে রয়েছেন দরজার কাছে। এক মহিলার প্রশ্ন, ‘‘এ ভাবে দরজা আটকে থাকলে ওঠা-নামা করা যায়?’’ কেন মহিলা ট্রেনে উঠে তাঁরা দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন? এক জন বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘‘একটু পরেই নামব। অন্য ট্রেনে কত ভিড় দেখেছেন।’’ হইহই করে উঠলেন বাকি যুবকেরা।
দত্তপুকুরের বেসরকারি সংস্থার কর্মী শ্রদ্ধা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নিষেধ শোনেন না পুরুষ যাত্রীরা। এখন লেডিজ় স্পেশ্যালে উঠতেই ভয় হয়। প্রায়ই এ সব নিয়ে তো গোলমাল লেগে থাকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy