কারাগার: খুঁটিবেড়িয়া গ্রামের ইটভাটা চত্বরের এই ঘরেই আটকে রাখা হত শ্রমিকদের। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
নির্দিষ্ট অঙ্কের একটি টাকা ইটভাটার ম্যানেজারের হাতে ধরিয়ে দিত মালিক। শ্রমিক আনার জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করত যে ব্যক্তি, ম্যানেজারের কাজ ছিল তার হাতে ওই টাকা পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু এই রাজ্য থেকে দক্ষ শ্রমিক মিলবে না জেনেই ওই দালাল আবার যোগাযোগ করত বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড কিংবা ছত্তীসগঢ়ের দালালের সঙ্গে। তারা শ্রমিকের হাতে টাকার একটি অংশ দিয়ে বাকিটা রেখে দিত কমিশন হিসেবে। রীতিমতো দাদন প্রথায় (আগাম টাকা দেওয়া) এ ভাবেই প্রয়োজনীয় শ্রমিকদের কার্যত ‘কিনে’ নিত ইটভাটার মালিক।
বারুইপুরের খুঁটিবেড়িয়া গ্রামের ইটভাটা থেকে ভিন্ রাজ্যের ১৭ জন শ্রমিককে উদ্ধারের পরে এমনই ব্যবস্থার কথা জেনেছেন তদন্তকারীরা। যদিও ইটভাটার মালিকপক্ষের দাবি, দাদন প্রথাতেই চলে এ রাজ্যের ইটভাটার কাজ। তাতে না পোষালে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক টাকা মিটিয়ে চলে যেতে পারেন। আর এই টাকা মেটানোর উপরেই লুকিয়ে আছে শ্রমিক ‘কেনাবেচার’ চাবিকাঠি।
কী ভাবে? তদন্তকারীরা জেনেছেন, যাঁরা ইটভাটায় কাজ করতে আসেন তাঁরা সকলেই অতি দরিদ্র পরিবারের। সংসার চালানোর জন্য আগাম টাকা নেওয়ার পরে সেই টাকার থেকে কিছুটা সঞ্চয় করা তাঁদের কাছে বিলাসিতার সমান। ফলে খরচ হয়ে যাওয়ার পরে আগাম নেওয়া টাকা আর ফেরত দিতে পারেন না ওই শ্রমিকেরা। অভিযোগ, তখনই তাঁদের আটকে রেখে ইটভাটার কাজ করিয়ে নেয় ম্যানেজার এবং মালিক। বারুইপুরের ইটভাটা থেকে উদ্ধার হওয়ার পরে বুধবার ছত্তীসগঢ়ের কোরবা, কাটঘোড়া থেকে শ্রমিকেরা ফোনে জানালেন, তাঁদের বন্দি করে রাখা হত। সপ্তাহের খোরাকির টাকাও ঠিক মতো দিত না মালিক বা ম্যানেজার। বাড়ি যাওয়ার অনুমতি চাইলে
জুটত মার।
এ দিন খুঁটিবেড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, একটি চাষের জমির শেষ প্রান্তে ইটভাটাটি। বাইরে বসানো গ্রিলের গেট। ভিতরে ঢোকার অধিকার নেই স্থানীয় গ্রামবাসীদের। ফলে সেখানে কী ভাবে শ্রমিকদের রাখা হয়েছে, তা জানার কোনও উপায় নেই। এলাকাবাসীরা জানালেন, বছর তিনেক আগে ওই ইটভাটা চালু করে উত্তরভাগের কোলাবরুর বাসিন্দা সেলিম মোল্লা। ইটভাটা করতে গেলে পঞ্চায়েতের পাশাপাশি স্থানীয় গ্রামবাসীদেরও কোনও আপত্তি নেই, এই মর্মে একটি চিঠিতে তাঁদের সই লাগে। সেই চিঠির বিনিময়ে গ্রামের দরিদ্র যুবকদের ইটভাটায় কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেলিম। প্রথম দিকে কয়েক জন কাজ করলেও অত্যন্ত কম টাকা দেওয়ায় পরে কেউ করতেন না। বাইরে থেকে শ্রমিক এনে কাজ করাত সেলিম।
স্থানীয় বাসিন্দা এক মহিলা বলেন, ‘‘আগে ইটভাটার ভিতরে নলকূপ থেকে আমরা জল আনতে যেতাম। কিন্তু পরে আর ঢুকতে দিত না মালিক।’’ কিন্তু সেখানে যে এত জন শ্রমিককে বন্দি করে রাখা হয়েছিল? ওই মহিলা জানান, ভিতরের খবর কেউ জানেন না। ফলে ওই ১৭ জন শ্রমিক কী ভাবে থাকতেন, তা-ও জানার উপায় ছিল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy