যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান/ ততদিন রবে কীর্তি তোমার, শেখ মুজিবুর রহমান!’— লিখেছিলেন অন্নদাশঙ্কর রায়। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে বাংলা ভাষার ও বাঙালি জীবনবোধের তিনি প্রতিভূ, নেতা, বন্ধু— বঙ্গবন্ধু। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ আজকের বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার (তখন মহকুমা) এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম নেওয়া মানুষটি স্বপ্ন দেখেছিলেন এক স্বাধীন দেশের, যে দেশের শাসনকর্তা হবেন বাঙালি, যে দেশের রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা। দেশভাগের আগে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে (এখন মৌলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলিম লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছিল লক্ষ লক্ষ বাঙালির স্বাধীনতার দুর্মর আকাঙ্ক্ষা। ১৯৭১-এর ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্সে তাঁর উদাত্ত আহ্বান ‘এ বারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এ বারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ আক্ষরিক অর্থেই ঐতিহাসিক, সেই ভাষণ এখন ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক ‘মেমরি অব দি ওয়র্ল্ড রেজিস্টার’-এর অংশ। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন গণতন্ত্রের বৈশ্বিক মুখ। আগামীকাল তাঁর জন্মশতবর্ষ। বাংলাদেশ সরকার এ বছরটিকে ‘মুজিব বর্ষ’ ঘোষণা করেছে, বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে ধ্বনিত ‘জয় বাংলা’ সম্প্রতি পেয়েছে ‘জাতীয় স্লোগান’-এর মর্যাদা। উদ্দীপ্ত কাঁটাতারের এ পারও। বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক কাহিনিচিত্র নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শ্যাম বেনেগাল, আর পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক রাজা সেনের তথ্যচিত্রটি সম্পূর্ণ। ২০০২ সালে বিবিসির এক প্রকল্পে, বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসের পটভূমিতে শ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান; রাজা সেনের তথ্যচিত্রটির নামও ‘সহস্রাব্দের সেরা বাঙালি’। নিতান্ত জীবন-চিত্রণ নয়, শতবর্ষ পরেও বঙ্গবন্ধুর অবাধপ্রসার চেতনার সার্থকতার অনুসন্ধান তিন বারের জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী পরিচালকের ছবিতে। এর আগে তথ্যচিত্র করেছেন শম্ভু মিত্র, সুচিত্রা মিত্র, তপন সিংহের উপর, যদিও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছবির প্রস্তুতি-ভাবনা দীর্ঘ পাঁচ বছরের। দু’মাসের শুটিংয়ে বহু বার বাংলাদেশে গিয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন কূটনীতিক থেকে শিক্ষাবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, শিল্পী, সর্ব স্তরের মানুষের সঙ্গে। তপন মোহন সাহা প্রযোজিত প্রায় ৫০ মিনিটের এই তথ্যচিত্রের মূল উপদেষ্টা পবিত্র সরকার, নির্মাণ সহায়তায় দুই বাংলার বহু কলাকুশলী। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের আবহে ছবিটি টেলিভিশন-সম্প্রচারের কথা চলছে।
শৈলজানন্দ ১২০
‘কালিকলম’ যুগের বিশিষ্ট সাহিত্যস্রষ্টা শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় (১৯০১-১৯৭৬)। বর্ধমানে স্কুলজীবনে নজরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে— তখন শৈলজানন্দ লিখতেন পদ্য আর নজরুল গদ্য। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজতেই দুই বন্ধু পালিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে যান। ডাক্তারি পরীক্ষায় উতরোতে পারেননি শৈলজানন্দ। ফিরে এসে কলেজে ভর্তি হলেও পড়া শেষ হয়নি। চাকরি নেন কয়লাকুঠিতে। পরে সব ছেড়ে পুরোপুরি সাহিত্যকর্মে মন দেন। চলে আসেন কলকাতায়। খনি-শ্রমিকদের নিয়ে বাংলায় সাহিত্যসৃষ্টিতে তিনিই পথিকৃৎ। তাঁর উপন্যাস থেকে যেমন চলচ্চিত্র হয়েছে, তেমনই তিনি নিজেও চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। তাঁর ‘কয়লাকুঠি’ ছোট গল্পের এটি প্রাক্-শতবর্ষ। শৈলজানন্দ স্মৃতিরক্ষা কমিটির উদ্যোগে তাঁর ১২০তম জন্মদিন উপলক্ষে ১৯ মার্চ, ৬টা ১৫য় বাংলা আকাদেমিতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। স্মারক ভাষণ দেবেন ঋতম মুখোপাধ্যায়। পরে কয়লাকুঠি স্মারক সাহিত্য সম্মান প্রদান। সভাপতি শ্যামলকুমার সেন।
বাংলা খেয়াল
খেয়াল আঙ্গিকটির উদ্ভব, বলা হয়, সম্রাট মহম্মদ শাহ রঙ্গিলার (১৭১৯-৪৮) দরবারে। ধ্রুপদের কঠোর বিধিবিধানে ক্লান্ত রাজদরবার সম্ভবত আরও খোলামেলা একটা গানের আঙ্গিক চাইছিলেন, যেখানে শিল্পীর কল্পনার ভূমিকা হবে জোরালো। কিন্তু ধ্রুপদী সঙ্গীত যাঁরা শেখেন, তাঁদের অনেকেই মনে করেন যে খেয়ালে কথার কোনও গুরুত্ব নেই। ‘‘তাই যদি হয় তাহলে টেবিল চেয়ার খাট আলমারির মতো কথা দিয়ে খেয়াল গাইলেই বা ঠেকাচ্ছে কে’’, মন্তব্য করেছেন কবীর সুমন। তাঁর কথায়, আচার্য সত্যকিঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বাদে বাংলার শিল্পীরা কেউই বাংলায় খেয়ালের আধুনিক বন্দিশ রচনার কথা ভাবেননি। আধুনিক বন্দিশ লেখা দূরের কথা, বাংলার খেয়াল শিল্পীরা বাংলা ভাষায় খেয়াল গাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহই দেখাননি। কবীর সুমন ছেলেবেলা থেকে খেয়াল শিখেছেন কালীপদ দাসের কাছে। তাঁর মনে হয়েছিল, মাতৃভাষায় না গাইলে তাঁর পক্ষে খেয়াল গাওয়াই সম্ভব নয়। তিনি নিজে আস্তে আস্তে সমকালীন বাংলায় খেয়াল রচনা শুরু করেন। এ বার ভাবনা রেকর্ডসের উদ্যোগে ও প্রযোজনায় রেকর্ড করেছেন প্রথম খেয়াল সিডি। ২১ মার্চ সন্ধে সাড়ে ৬টায় বিড়লা অ্যাকাডেমিতে সিডির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ, সঙ্গে বাংলা খেয়াল গাইবেন কবীর সুমন।
পুশকিনকে নিয়ে
বিশ্ব কবিতা দিবসে কবি পুশকিনকে নিয়ে নতুন নাটক ‘মুক্তিবন্দ’। কবির মৃত্যু বা হত্যাকাণ্ডের পর কেটে গেল প্রায় দু’শো বছর, তাও অনেকের মতে রাশিয়ার আধুনিক সাহিত্যের জনক আলেকজ়ান্ডার পুশকিন এখনও দুনিয়া জুড়ে বহু পঠিত মহত্তম কবিদের অন্যতম। পুশকিনের প্রেম, বিয়ে, দ্রোহ, অস্থির যাপন, জ়ার নিকোলাসের কাছে সাময়িক আত্মসমর্পণ, পরে আত্মধিক্কার আর মাত্র ৩৭ বছরের ট্র্যাজিক পরিণতি মনে করিয়ে দেয় হাল আমলের অনেক সৃজনশীল প্রতিভার কথা। নিজের স্ত্রীর অবৈধ প্রেমিকের সঙ্গে ডুয়েল লড়তে গিয়ে কবি পুশকিনের মৃত্যু বা হত্যাকাণ্ডের স্মরণেই কবির জীবন ও যাপনকে কেন্দ্র করে ৬০ বছরের নাট্যদল হ-য-ব-র-ল মঞ্চায়িত করছে চন্দন সেনের রচনা ও নির্দেশনায় ‘মুক্তিবন্দ’। প্রবীর দত্ত বিন্দিয়া ঘোষ বিদিশা দেবপ্রিয়া প্রমুখের অভিনয়দীপ্ত নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ২১ মার্চ সন্ধ্যায় অ্যাকাডেমিতে।
কবিতা উৎসব
সাড়ে পাঁচশোর বেশি কবি ও কবিতার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষ নিয়ে শহরে হয়ে গেল কবিতা উৎসব। এই ভরা ফাগুনে অকালবৃষ্টি মাথায় নিয়ে। উদ্যোক্তা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কবিতা আকাদেমি। ৫ থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত চলা চার দিনের এই উৎসবের উদ্বোধন করলেন শিল্পী যোগেন চৌধুরী। ছিলেন কবিতা আকাদেমির সভাপতি সুবোধ সরকার এবং রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। কাকদ্বীপ থেকে কার্শিয়াং-ই শুধু নয়, দিল্লি বা রাজস্থানে বসবাসকারী বাঙালি কবিতা লেখকেরাও আমন্ত্রিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। রবীন্দ্রসদন, শিশির মঞ্চ-সহ মোট ৬টি প্রাঙ্গণ জুড়ে চলে কবিতাপাঠ।
বসন্তের গান
শুকনো পাতা ঝরে যায় দূরে-কাছে, সহসা ডালপালা উতলা হয়, শুক্লরাতে চাঁদের তরণী ভাসে, নাম না জানা বনফুল ফোটে দখিন বাতাসে: বসন্ত আসে। এই ফুল-ফোটানো, ফুল-ঝরানো বসন্তকে নিয়ে নানা গীতিকবির নানা বর্ণের বাংলা গান। সর্বাগ্রে উল্লেখ্য নিশ্চয় রবীন্দ্রনাথ যিনি প্রকৃতিকে দেখতে শিখিয়েছেন গানে গানে। রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বসন্ত নিয়ে উচ্ছ্বসিত দ্বিজেন্দ্রলাল, নজরুল, আরও অনেকে। পঞ্চ গীতিকবি পরবর্তী বাংলা আধুনিক গানেও বসন্তের সগর্ব উপস্থিতি, সে অবিশ্যি প্রেমের অনুষঙ্গেই। রবীন্দ্রনাথ কিন্তু শুধু প্রেমিক বসন্ত নয়, পথিক বসন্তকেও চিত্রিত করেছেন। বসন্তকে ঘিরে নানা রঙের বাংলা গানের আসর বসছে ১৯ মার্চ, রবীন্দ্রসদনে সন্ধে ৬ টায় ‘হারমোনিকা’-র আয়োজনে। অসহায় প্রবীণ ও অনাথ শিশুদের উন্নতিকল্পে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গানে গানে বসন্তের ছবি আঁকবেন হৈমন্তী শুক্ল, শ্রীকান্ত আচার্য, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈকত মিত্র, দেবারতি সোম, স্বপন সোম। সঞ্চালনায় সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
নানা রকম
পঞ্চাশের দশকের শেষে মোনা চৌধুরী-র তোলা সত্যজিতের একটি ছবি দেখে নিরঞ্জন প্রধান যে মূর্তিটি তৈরি করেছিলেন, সে সম্পর্কে দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের অভিমত: ‘‘এক চিত্রপরিচালককে বোঝা গেলেও সত্যজিৎ তাঁর অপ্রতিম ব্যক্তিত্ব নিয়ে মোটেই দেখা দেননি।’’ সত্যজিতের যাবতীয় মূর্তি নিয়ে এ-লেখাটির শিরোনাম ‘একটিই কিছুটা সত্যজিৎ, বাকিগুলি স্রেফ পুতুল!’ এই অবিসংবাদী সত্যজিৎ-বিশেষজ্ঞ ওরফে দেমু-র যে নতুন বইটি বেরোল, দেমু’র নানারকম (সৃষ্টিসুখ প্রকাশন), তাতে ‘বিষয় সত্যজিৎ’ অধ্যায়ে তাঁকে নিয়ে একগুচ্ছ লেখা। এ ভাবেই অন্য অধ্যায়গুলিতে প্রবাদপ্রতিম বাঙালি, পালাপার্বণ, বইপত্রের বৈভব, খেলা আর খেলার টিকিট, রসনাবিলাস, বা বাঙালির জীবনযাপনের বৈচিত্র নিয়ে সুস্বাদু সব লেখা দেমু-র। বাঙালির ব্যাপ্ত বিদ্যাচর্চার ধারাতেই তাঁর অফুরান ভাঁড়ার, আর সে ভাঁড়ারেরই দরজা খুলে তিনি না-জানা, স্বল্পচর্চিত যা কিছু তা মেলে ধরেন আধুনিক প্রজন্মের সামনে। মুদ্রণে পরিপাটি এ-বইয়ের প্রায় পাতায়-পাতায় ছবি, চোখধাঁধানো প্রচ্ছদ দেবাশীষ দেবের।
মাতৃশক্তি
গত শতকের ত্রিশের দশকে দাদা উদয়শঙ্কর আর ভারতীয় নৃত্য ও সঙ্গীতশিল্পীদের সঙ্গে ইউরোপের নানান জায়গায় সেতার বাজিয়ে এসেছিলেন রবিশঙ্কর, দশ বছর বয়স তখন তাঁর। ১৯৩৭-এ ভিক্টর টকিং মেশিন কোম্পানি নিউ ইয়র্কে সেই দলের সদস্যদের উপস্থাপিত সাঙ্গীতিক সৃষ্টিগুলিকে রেকর্ড-বন্দি করে, বালক রবিশঙ্করের সেতারবাদনও ছিল তার মধ্যে। এ ভাবেই পণ্ডিত রবিশঙ্করের শুরু থেকে শেষ অবধি সামগ্রিক রেকর্ড-তালিকা, রেকর্ডের সঙ্গে আছে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ক্যাসেটেরও হদিস, এবং বাংলা ও হিন্দি ফিল্মে সুরকার হিসেবে তাঁর অবদানের তথ্যনথি, তৈরি করেছেন সঞ্জয় সেনগুপ্ত। তাঁর এই শ্রমনিষ্ঠ কাজটি সযত্নে প্রকাশ করেছে ‘মাতৃশক্তি’ (সম্পা: কুশল চৌধুরী), পত্রিকাটির এ বারের প্রচ্ছদকথাই ‘শতবর্ষে পণ্ডিত রবিশঙ্কর’। লিখেছেন অতনু চক্রবর্তী বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায় শঙ্করলাল ভট্টাচার্য চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। বিস্মৃত সঙ্গীতশিল্পী যতীন ভট্টাচার্যকে নিয়ে লেখা অরিন্দম সাহা সরদারের।
ছোট ক্যানভাসে
বসন্তের আর এক নাম রং। এই রং-বসন্তের দিনে দেবভাষার বসন্ত-পালন ‘কালার্স’ প্রদর্শনীর মাধ্যমে। যদিও কংক্রিটের শহর, তবু পথে চলতে চলতে তো দেখি পলাশ পড়ে আছে। গাড়ির চাকায় আহত। এই দৃশ্য চকিতে বসন্তকে মনে পড়ায়। শহরে বসন্ত বলতে এটুকুই। কিন্তু শিল্পীর রঙে বসন্ত চির দিনের, চির মুহূর্তের হয়ে ওঠে। শহরের মানুষের এখন ছোট ছোট বাড়ি, ছোট ছোট ঘর। বড় ছবি রাখা দুরূহ। তাই দেবভাষার ভাবনায় ছোট ক্যানভাস (৮ ইঞ্চি চৌকো); তাতেই কাজ করেছেন শিল্পীরা। পাশাপাশি, এই বসন্ত মাস মনে চেতনায় ভালবাসার দ্যুতি ছড়ায়। শুরু হয় পথ হাঁটা, শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধার। প্রকৃতিতে জাগরিত হলেন তাঁরা। তাই দেবভাষা বই ও শিল্পের আবাসে গৌরী ধর্মপাল কক্ষে ছোট ক্যানভাসের প্রদর্শনীর সঙ্গেই কেজি সুব্রহ্মণ্যম কক্ষে কৃষ্ণেন্দু চাকী চিত্রিত ‘রাধাকৃষ্ণ’-এর প্রদর্শনী। ছবির পট সিল্ক। সূচনা ২১ মার্চ সন্ধে ৬টায়, চলবে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত। রোজ ২টো-সাড়ে ৮টা (মঙ্গল বার বাদে)।
মুজিব-কন্যার বই
১৭ মার্চ উদ্যাপিত হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ। তার প্রাক্কালে সম্পর্ক প্রকাশনা থেকে বেরোল মুজিব কন্যা শেখ হাসিনার লেখা কয়েকটি মূল্যবান রচনার ইংরেজি অনুবাদ। মাই ফাদার, মাই বাংলাদেশ বইটিতে ধরা পড়েছে ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা, বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি, ধানমণ্ডি ৩২নং-এ বঙ্গবন্ধুর ও সারা পরিবারের বাড়ির কথা, আরও অনেক সুখ-দুঃখের কথা। এসেছে ১৯৭৫-এর ১৫ অগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার পরিজনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথাও। নেত্রী হাসিনা, প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও বাংলাদেশের নতুন যুগের উন্নয়নের কান্ডারি হাসিনা এই সব কিছু ছাপিয়ে মানুষ হাসিনার দেখা বাবা, মা ও বৃহত্তর বাংলাদেশের গ্রাম জীবন অপূর্ব শৈলীতে ফুটে উঠেছে মুজিব কন্যার লেখনীতে। বাংলা লেখাগুলির ইংরেজি অনুবাদ করেছেন সম্পর্ক-র প্রকাশক সুনন্দন রায় চৌধুরী।
অখিলবন্ধু স্মরণ
‘পিয়াল শাখার ফাঁকে ওঠে একফালি চাঁদ’, ‘ওই যে আকাশের গায়ে’, এই গানগুলি শুনলেই সঙ্গীতরসজ্ঞের শ্রবণে ভাস্বর হয়ে ওঠে অখিলবন্ধু ঘোষের মধুঝরা গায়কি। বাংলা আধুনিক গানকে রাগাশ্রয়ী করার অন্যতম কৃতিত্ব এই স্বর্গতুল্য কণ্ঠাধিকারীর। তিনি ছায়াছবিতে বেশি গাননি, তাঁর অসামান্য সুর শোনা যেত ক্যাসেটে রেকর্ডে বা জলসায়। শচীন দেব বর্মনের মেঠো সুরে তাঁর ‘বধূ গো এ মধুমাসে’ গানটি তাঁর গলায় কী যে খুলেছিল! ভোলা যায় না তিনি কত উঁচু দরের সুরস্রষ্টাও বটে। দেশি টোড়ীতে ‘মরমে মরি গো’, মাজ খাম্বাজে ‘মিলন নিশীথে গেল ফিরে’ তাঁর অমর সৃষ্টি। কিন্তু প্রতিভার ঐশ্বর্যের এমতাধিকারী তাঁর জীবনভরে পেয়েছেন বঞ্চনা (১৯২০-১৯৮৮)। তাঁর কত গান দিনের আলো দেখেনি, আবার কত গান বিখ্যাত হয়েছে অন্যের কণ্ঠে। ‘ও দয়াল বিচার করো’-র শিল্পীকে তাঁর প্রাপ্য অর্ঘ্যটুকু দিতে, অক্লান্ত পরিশ্রম করে অখিলবন্ধু ঘোষ স্মৃতি সংসদ। মৃত্যুর পরও তাঁর গান বাঁচিয়ে রাখতে অঙ্গীকার করেছে শিল্পীর এই জন্মশতবর্ষে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও ২০ মার্চ হাজরার আশুতোষ মঞ্চে সন্ধে ৬টায় তাঁর প্রয়াণ দিবসে আয়োজিত হবে সঙ্গীতস্মরণিকা। উদ্বোধনে শ্রীকান্ত আচার্য।
শহরে আলোড়ন
এই শহর জন্মলগ্ন থেকেই নানা ঘটনায় আলোড়িত। লালমুখো গোরাদের হারিয়ে ১৯১১ সালের শিল্ড জয়, রবীন্দ্র-জীবনানন্দ তিরোধান, ষাট-সত্তরের উত্তাল ছাত্র-আন্দোলন, সত্যজিতের দীর্ঘ ছায়া এ শহর জুড়ে, গণেশের দুধ খাওয়া— কী নয়! এ বারও শহর আলোড়িত ‘বিশ্বত্রাস চেঙ্গিস খান’-এর বদলে করোনাভাইরাসে। শহরবাসীর যাবতীয় খরচ এখন ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার’ ও ‘মাস্ক’ কিনতে। যত দামই হোক না কেন। মুরগির ব্যবসায়ীরা ধরাশায়ী। পাঁঠার মাংস বিকোচ্ছে সাড়ে সাতশো থেকে আটশো টাকায়। মাছ ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো। আমিষাশীরা মাছের বাজার গরম করে রেখেছেন কেনাকাটায়। এর থেকে উপরে ওষুধের দোকানগুলো। হাত ধোয়া আর মুখ ঢাকা— সরবরাহ করে উঠতে পারছে না। যে ভাবে শহরবাসী পেঁয়াজ নিয়ে আলোড়িত ছিল, এ বারও তার থেকে কিছু কম নয়। যত অর্থ লাগে লাগুক, ওই দু’টি বস্তু চাই-ই চাই। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আতঙ্ক। শহরের চিকিৎসকদের এক বিরাট অংশ কাশি-হাঁচি-সর্দি আরও নানা উপসর্গ নিয়ে ব্যস্ত। তবে কিনা কল্লোলিনী তিলোত্তমার পথে ঘাটে পার্কে ময়দানে যে সুন্দর-সুন্দরী মুখগুলো দেখা যেত সে সব এখন বহুল পরিমাণে করোনা-আতঙ্কে ঢাকা পড়েছে। কিন্তু তাতে কী? না না তাতে কিছু না। কথায়ই তো বলে, ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’।
দরবারে পদাবলি
‘দাক্ষিণাত্যে মন্দিরগাত্রের রাসলীলা ভাস্কর্যে যে দৃশ্য উৎকীর্ণ রয়েছে তা জয়দেবের গানে প্রতিফলিত’, বলছিলেন শিল্পী দেবলীনা ঘোষ, ‘লক্ষ্মণসেনের সভাকবি জয়দেব শুধু বাংলায় নয়, বরং সারা দেশে বহুচর্চিত।’ বাংলার পদাবলির রয়েছে সুদীর্ঘ প্রায় ৫০০ বছরের পথচলার সমৃদ্ধ ইতিহাস। ক্যাটালিস্ট-এর উদ্যোগে সম্প্রতি বিড়লা অ্যাকাডেমি সভাগৃহে আয়োজিত হয়েছিল ‘দরবারে পদাবলি’ শীর্ষক একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান। শিল্পীর সঙ্গে কথকতায় ছিলেন দেবাশিস বসু। পদাবলির ইতিহাস নিয়ে দু’জনের আলোচনার ফাঁকেই দেবলীনা শুনিয়েছেন এই স্বর্ণভাণ্ডারের কিছু গান। ছুঁয়ে গিয়েছেন জয়দেব, বিদ্যাপতি বা চৈতন্যদেবকে। আসলে পদাবলি-কীর্তন হল কাব্য, সুর এবং দর্শনের এক ত্রিবেণী সঙ্গম। কিছু কাল আগেও কীর্তন ছিল বাঙালি জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এই পদাবলি-কীর্তন আজকের জীবনেও প্রাসঙ্গিক। এক কালের এই প্রাচীন পরম্পরা আজ বিলুপ্ত হতে বসেছে। কীর্তন এবং পদাবলি নিয়ে এমত নানাবিধ প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল এ দিনের অনুষ্ঠানে এবং শোনা গেল বিরল কিছু গান।
পাহাড়ে সঙ্গীত
এ বার ভ্রমণপিপাসুদের কাছে হাতছানি দেবে জীবন্ত-সঙ্গীতের মূর্ছনা। পাহাড়ের কোল চিরে এঁকেবেঁকে চলেছে ঝকঝকে মসৃণ রাস্তা। বাঁকে বাঁকে; বলা ভাল তার খাঁজে খাঁজে দেখা যায় নীল আকাশ, সূর্যের উঁকিঝুঁকি। ফুলেদের বর্ণিল বাহার, পাখিদের গানে নির্জনতা ভাঙার ডাক। যেন কখনও নিঃশব্দ, কখনও সঙ্গীতের মূর্ছনা। প্রকৃতির মধ্যে সর্বত্রই সুর, ছন্দ খেলা করে। এ বার সেই নৈসর্গিক নির্জনতার মধ্যেই, অর্থাৎ আগমলোক মনাস্ট্রি গ্রাউন্ডে (পূর্ব সিকিম) তিতলি রিসর্ট সংলগ্ন মাঠে সম্প্রতি ‘মাউন্টেন মিউজ়িক ফেস্টিভ্যাল’ (সিজ়ন-১) শীর্ষকে এক সঙ্গীত উৎসবের আয়োজন করা হয়। উৎসবে কলকাতার শিল্পী সিধু, ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়, পণ্ডিত প্রদ্যুৎ মুখোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের পাশাপাশি পাহাড়ের কোলে বেড়ে ওঠা শিল্পীরাও ছিলেন। শোনা গেল রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের প্রার্থনা সঙ্গীত, পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সঙ্গে ফিউশন, পুরনো দিনের হিন্দি ছবির গান থেকে ব্যান্ডের গান। এই অভিনব অনুষ্ঠানের মূল ভাবনা ও আয়োজনে সুদীপ্ত চন্দ।
সাইকেল যাত্রা
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষ ও বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষকে বিশেষ ভাবে শ্রদ্ধা জানাতে ২১ জন সাইকেল আরোহী ৮ দিনের কলকাতা-ঢাকা সাইকেল শোভাযাত্রা করেন। কলকাতার ভাষাসূত্র কমিটির সহযোগিতায় শোভাযাত্রার আয়োজক ‘হান্ড্রেড মাইলস’। ১৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতা প্রেস ক্লাব থেকে ঢাকার উদ্দেশে সাইকেল যাত্রা শুরু হয়। প্রেস ক্লাব থেকে বাদুড়বাগানে বিদ্যাসাগরের মর্মর মূর্তিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে কলকাতা, বারাসত, রানাঘাট, বগুলা, গেদে, দর্শনা, মুজিবনগর, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ, সাভার হয়ে ঢাকা পৌঁছয় ২০ ফেব্রুয়ারি। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন আরোহীরা। ২২ ফেব্রুয়ারি ফিরলেও দর্শনা-র মেয়র মতিয়ার রহমানের বিশেষ আমন্ত্রণে আবার বাংলাদেশ যাত্রা আজ ১৬ মার্চ। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে ‘হান্ড্রেড মাইলস’ সাইকেল আরোহী দলের চার সদস্য-সহ দলপতি স্বরজিৎ রায়, মৌলানা আজাদ কলেজের অধ্যক্ষ শুভাশিস দত্ত উপস্থিত থাকবেন।
মোহন রাকেশ
‘আভাষ দক্ষিণ কলকাতা’ থেকে যে বাৎসরিক নাট্যপত্রটি বেরোত, সেই ‘সময় নাট্যভাষ’ শেষ বেরিয়েছিল মার্চ ২০১৫-য়। বিষয় ছিল ‘নারীবিশ্ব ও থিয়েটার’। সে বছর ডিসেম্বর মাসে একটি নাট্যোৎসবও করেছিল তারা। সেই পত্রিকা আবার বেরোচ্ছে এই মার্চে। এ বারেও উপলক্ষ একটি নাট্যোৎসব। হিন্দি ভাষার আধুনিক নাটককার মোহন রাকেশের তিনটি নাটক বাংলায় অনূদিত হয়ে কলকাতায় এই মুহূর্তে অভিনীত হচ্ছে। ১৯ মার্চ কালিন্দী নাট্যসৃজন অভিনয় করবে রাকেশের প্রথম নাটক ‘আষাঢ়ের প্রথম দিনে’, ২০ মার্চ আভাষ করবে ‘লহরীর রাজহংস’, ২১ মার্চ শোহন করবে ‘আধে আধুরে’। নির্দেশনায় যথাক্রমে শান্তনু দত্ত, শেখর সমাদ্দার এবং অনীশ ঘোষ। তিন দলের এই রাকেশ-নিবেদনের প্রাক্-মুহূর্তে প্রকাশ পাবে ‘সময় নাট্যভাষ’ পত্রিকার ‘মোহন রাকেশ বিশেষ সংখ্যা’। সম্পাদনা শেখর সমাদ্দারের। তিনটি অভিনয়ই হবে মধুসূদন মঞ্চে সন্ধে সাড়ে ৬টায়। সঙ্গে ‘লহরীর রাজহংস’ থেকে একটি দৃশ্য।
নিজভাষা নিজভূমি
২০১২ সালে শরীর যখন অনেকটাই ভেঙে এসেছে তখনও ‘আইডিয়া’ শুনে চমৎকৃত হয়েছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। জানিয়েছিলেন, বিষয় যখন বাংলা ভাষার চর্চা, আমি সঙ্গে আছি। তার পর সে বছরই শারদোৎসবের মধ্যে আকস্মিক বিদায় নিতে হয়। সেই সংস্থার নাম ‘নিজভাষা নিজভূমি’। একার হাতেই সব দিক সামলান চিত্রা লাহিড়ী। ২০১৯ থেকে শুরু করেছেন এই সাহিত্য সংস্থার অনুষ্ঠান। এর প্রধান উপদেষ্টা শঙ্খ ঘোষ, যিনি অসুস্থতার মধ্যেও খবরাখবর নিয়েছেন। রয়েছেন পবিত্র সরকার, শুভাপ্রসন্ন, বিভাস চক্রবর্তী, সুবোধ সরকার এবং শ্যামলকান্তি চক্রবর্তী। এ ছাড়া বহু কবি ও বাচিক শিল্পী এবং গানের জগতের মানুষেরা তো রয়েছেনই। জীবনানন্দ সভাঘরে প্রায় একশোরও বেশি কবি-শিল্পীকে নিয়ে হয়ে গেল অনুষ্ঠান এক বুধসন্ধ্যায়। যে বুধসন্ধ্যাকে সুনীল অতি পছন্দ করতেন। সভাঘর উপচে উঠেছিল কবিতা শোনার ভিড়ে। গোটা অনুষ্ঠানটিই পরিচালনা করেন চিত্রা। সুনীলপ্রেমী, সুনীলমুগ্ধ অজস্র মানুষের মনে প্রশ্নই ছিল অথবা সিদ্ধান্তও— এই জীবনানন্দ সভাঘরেই কোথাও ‘নিজভাষা নিজভূমি’র অনুষ্ঠানে সুনীল এসেছেন—।
গল্প সংগ্রহ
‘আলো-অন্ধকারে যাই— মাথার ভিতরে স্বপ্ন নয়, কোন এক বোধ কাজ করে’— রহস্যময়তায় মাখা জীবনানন্দীয় এই উক্তি ঘিরে রয়েছে এই ‘গল্প সংগ্রহ’-কে। যার সম্পর্কে চিন্ময় গুহ লিখেছেন, ‘কখনও আর্তনাদ, কখনও মন্ত্র, কখনও রক্তমাংসের গভীর থেকে জেগে ওঠা ঘূর্ণি।’ এই ‘গল্প সংগ্রহ’-এর লেখক দিবাকর ভট্টাচার্যের আগের গল্পগ্রন্থ ‘চরাচর সারে’ সম্পর্কে আনন্দবাজার পত্রিকায় ব্যক্তিগত কলম ‘যা দেখি যা শুনি...’-তে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘বইটি একবার আদ্যোপান্ত পড়া শেষ করে আবার পড়তে ইচ্ছে হয়েছে আমার। এমনই অসাধারণ সেই সব রচনা। যেমন ভাষাজ্ঞান তেমনই চিন্তার গভীরতা।’ সেই ‘চরাচর সারে’-র গল্পগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও কিছু গল্প, যা বিবর্ণ খাতাপত্রের মধ্যে অন্ধকারে ডুবে ছিল। লেখকের পুত্র রঞ্জন ভট্টাচার্য পরম মমতায়, অতি পরিশ্রমে সেগুলি উদ্ধার করে গল্প সংগ্রহ/ দিবাকর ভট্টাচার্য (পরম্পরা) প্রকাশ করলেন। ৩০৪ পাতা জুড়ে ২৪টি গল্প রয়েছে। অথচ আশ্চর্যের বিষয় জীবৎকালে দিবাকর ভট্টাচার্য নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর পর যেন সমস্ত লেখা পুড়িয়ে ফেলা হয়। তাঁর জীবদ্দশায় একটি গল্পও কোথাও প্রকাশিত হয়নি।
আত্মজন
অসুস্থ বাবা, অনিশ্চিত চাকরি নিয়ে বিপর্যস্ত বসন্ত— ‘আত্মজন’ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র। তার রূঢ়ভাষী স্বভাবের জন্যে তাকে ছেড়ে গিয়েছে স্ত্রী, তাদের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে। এ ভাবে আনুষঙ্গিক বিপর্যয়ের ফলেই তার বিরুদ্ধে জমা হয় বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণের দাবি। উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় রচিত নাটকটি সায়ক নাট্যগোষ্ঠী-র নতুন প্রযোজনা। অ্যাকাডেমিতে ২৭ মার্চ, সন্ধে সাড়ে ৬টায়। নির্দেশক মেঘনাদ ভট্টাচার্য জানালেন ‘‘ছন্নছাড়া সমাজ তো, আমাদের মূল্যবোধগুলি ক্রমশ বিলীয়মান। বসন্তের চরিত্রে অসঙ্গতি থাকলেও সে আপস করে না, তাই তার চাকরিও টলোমলো হয়ে যায়। ক্লান্ত কোণঠাসা সেই মানুষটির পাশে তখন এসে দাঁড়ায় তার ছেড়ে-যাওয়া স্ত্রী। পুনর্বন্ধনের নাটক, হারানো মূল্যবোধ আর বিশ্বাস ফিরে পাওয়ার নাটক।’’ ক্ষতবিক্ষত সময় আর ছেঁড়াখোঁড়া সম্পর্কের ভিতরে সুপ্ত মানবিক শুশ্রূষার নাটক এটি।
পুতুলনাট্য
বর্ণময়, অথচ অবহেলিত। পরম্পরা নির্ভর, অথচ বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাওয়া পুতুলনাচ কি তার পুরনো গৌরব ফিরে পাবে? অবশ্যই পাবে। এমনটাই বিশ্বাস করে ‘বঙ্গপুতুল’। আর এই বিশ্বাসে গত কুড়ি বছর ধরে বাংলার পুতুলনাচ নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে কাজ করে চলেছে এই পুতুলনাট্যগোষ্ঠী। পশ্চিমবঙ্গের সাতটি জেলায় ‘বঙ্গপুতুল’-এর প্রশিক্ষণ ও সহায়তায় তৈরি হয়েছে সাতটি দল। ‘বঙ্গপুতুল’-এর কর্ণধার শুভ জোয়ারদার বলছেন, ‘‘প্রায় চল্লিশ বছর ধরে পুতুলনাট্য ও পুতুলনাচ নিয়ে গবেষণা করে চলেছি। আমরা বেশ কয়েক জন মিলে পুতুলনাচের উপর যে কাজ করে চলেছি তাতে বাংলার এই প্রাচীন নৃত্যকলা তার গৌরবের অনেকটাই ফিরে পেয়েছে বলে আমরা মনে করি।’’ ২১ মার্চ বিশ্ব পুতুলনাট্য দিবস। ২৩ মার্চ, সোমবার রবীন্দ্রসদনে সন্ধে ৬টায় এই সংগঠনের কুড়ি বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠান। থাকবেন নাট্যব্যক্তিত্ব অরুণ মুখোপাধ্যায় ও পুতুলনাট্য গবেষক অতসী নন্দ গোস্বামী। পরম্পরার বেনেপুতুল নাচ দেখাবেন রামপদ ঘোড়ুই। থাকবে অসিত বসুর পুতুলনাট্য বিষয়ক তথ্যচিত্র ‘দ্য রড পাপেট অব বেঙ্গল’। গানে পীযূষকান্তি সরকারের পুত্র পুলহ সরকার। এ ছাড়াও থাকবে ‘বঙ্গপুতুল’-এর সমকালীন দণ্ডপুতুল নাটক ‘বাঁশিওয়ালা’।
স্মারক সঙ্কলন
‘মধুবংশীর গলি’ বা ‘নবজীবনের গান’-এর কালজয়ী স্রষ্টা জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র (১৯১১-১৯৭৭) ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার, সুরকার, গায়ক, রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ। স্বভাবলাজুক, বিনয়ী এই মানুষটি বরাবর নিজেকে সরিয়ে রাখতেন প্রচারের আলো থেকে। বাঙালির শিল্পসংস্কৃতিতে তাঁর অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে পারিবারিক প্রচেষ্টায় ২০১১-য় তাঁর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন হয়, প্রারম্ভিক ভাষণ দেন প্রয়াত অশোক মিত্র। ২০১২ থেকে প্রতি বছর তাঁর জন্মদিনে জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র মেমোরিয়াল ট্রাস্ট-এর উদ্যোগে শুরু হয় ‘জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র স্মারক বক্তৃতা’। পর পর পাঁচ বছর বক্তৃতা দেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় অমিয়কুমার বাগচী মার্টিন কেম্পশেন উমা দাশগুপ্ত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ট্রাস্ট-এর তরফ থেকে এই পাঁচটি বক্তৃতা সঙ্কলিত করে প্রকাশিত হল জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র স্মারক বক্তৃতামালা ১ (সপ্তর্ষি প্রকাশন)। পরবর্তী বক্তৃতাদি প্রকাশ পাবে দ্বিতীয় সঞ্চয়নে।
মহাভারত
মহাভারত আমাদের মাতিয়ে রেখেছে আবহমান কাল ধরে। এর ব্যাপ্তি, রহস্যময়তা, সর্বোপরি আধুনিকতা আচ্ছন্ন করে রাখে আমাদের সব সময়। এর সমাজ বা ধর্মযুদ্ধ আমাদের প্রতি দিনের জীবনে এতটাই প্রাসঙ্গিক যে তা বরাবর আকর্ষক হয়ে উঠেছে শিল্পী-সাহিত্যিকদের কাছে। রবীন্দ্রনাথ তো তাঁর সৃষ্টির অপরিহার্য অঙ্গ করে তুলেছিলেন মহাভারতকে, আর সত্যজিৎ রায় অভিলাষী হওয়া সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত ছবি করে যেতে পারেননি মহাভারত নিয়ে। শিল্পী শুভাপ্রসন্ন এখন তাঁর ছবি আঁকার বিষয় করে তুলেছেন মহাভারতকে। তাঁর মনে হয়েছে, এক দিকে এ মহাকাব্যের প্রেম রাজনীতি যৌনতা প্রতিশোধস্পৃহা, অন্য দিকে পরিব্যাপ্ত মানবিকতা যেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে দ্বন্দ্বময় করে তুলছে প্রতিনিয়ত। “এই সময়ে দাঁড়িয়ে মহাভারতের স্থানাদি, ঘটনাবলি, বা পিরিয়ড-কে অ্যাবস্ট্রাক্ট ফর্মে, স্পর্শকের মতো কম্পোজ়িশনে গ্রথিত করতে চাইছি আমার ছবির মধ্যে। ভারতীয় চিত্রকর হিসেবে মহাভারতকে এক ম্যাজিক রিয়ালিস্ট ক্যানভাসের ভিতর দিয়ে আমার দীর্ঘ জীবনের চিত্রকলা-চর্চায় পৌঁছতে চাইছি দর্শকের কাছে।” কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটিতে গত কাল প্রীতীশ নন্দী উদ্বোধন করলেন শুভাপ্রসন্নের প্রদর্শনী ‘দ্য মিস্টিক অব দি এপিক’। চলবে ২৫ মার্চ পর্যন্ত, ১১-৭টা। সঙ্গে তারই একটি ছবি।
পূর্ণ দাস বাউলকে নিয়ে তথ্যচিত্র
গ্রামের হতদরিদ্র ছেলেটি পাঠশালায় পড়ার অদম্য ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল, সে সেই বাউল সম্প্রদায়ের মানুষ যাঁরা কেবল ‘মাধুকরী’কেই (গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ) একমাত্র পন্থা করে দিনযাপন করতেন। গ্রামের জমিদার চাননি তাঁর ছেলে আর ওই দরিদ্র বৈরাগীর ছেলে একই পাঠশালায় পড়ুক, তিনি শিক্ষককে নির্দেশ দেন যেন বালক বৈরাগীকে বহিষ্কার করা হয় পাঠশালা থেকে। বহিষ্কৃত বালকটিই পরবর্তী কালে পূর্ণচন্দ্র দাস বাউল। বাবা নবনী দাস খ্যাপা বাউল ছিলেন জনপ্রিয় ও রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ। কিন্তু সংসারের প্রতি উদাসীন থাকার কারণে প্রায়শই এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে চলে যেতেন ভবঘুরে মানুষটি, ফলে দারিদ্রের মধ্যেই দিন কাটত সন্তানদের। পরিবারের মুখে অন্ন জোগানোর জন্য দিদিকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের পথে পথে ‘মাধুকরী’ করতে বেরোতে হত পূর্ণচন্দ্রকে, গান শিখিয়ে দিতেন মা ব্রজবালা দাসী। তখনই এক-দু’খানি গান বারেবারে গাইতে গাইতে টের পান পূর্ণচন্দ্র— তাঁর গানের ঝুলি ভরিয়ে ফেলতে হবে। এই উপলব্ধি আর প্রতিভাই তাঁকে শুধু বঙ্গদেশে বা ভারতে নয়, বিশ্বের দরবারে সম্মাননীয় করে তুলল। বছরখানেক তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে এবং ঘুরে-ঘুরে যাবতীয় তথ্যনথি জড়ো করে তাঁকে নিয়ে ছবি বানিয়েছেন অভিজিৎ দাশগুপ্ত: ‘এ গাড়ী চলছে আজব কলে’। বললেন ‘‘সাধারণ তথ্যচিত্রের তকমায় বাঁধতে চাইনি ছবিটাকে, চেয়েছি পূর্ণদার নিজের জীবনটাই যেন হৃদয়স্পর্শী হয়ে ফুটে ওঠে দর্শকের কাছে। জীবন্ত কিংবদন্তি তিনি, আজ ৮৭ বছর বয়সেও সুর নিয়ে তারসপ্তকে খেলা করেন অনায়াসে, বিভিন্ন দেশের ভিন্নভাষী মানুষজন মুগ্ধ হয়ে শোনেন তাঁর গান।’’ আজ সন্ধে ৬টায় নন্দনে দেখানো হবে ছবিটি। আয়োজনে ও প্রযোজনায় বাউল অব বেঙ্গল ও কলকাতা সুকৃতি ফাউন্ডেশন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy