খুব ছোটবেলায় সে বলেছিল যে, বড় হয়ে ‘জার্মানি থেকে শিখে এসে’ খুব ভালো ফিল্ম তৈরি করবে।” মানিক ওরফে সত্যজিতের ছেলেবেলার এমন আরও গল্প তাঁর দিদি, মেজোপিসিমার মেয়ে নলিনী দাশ স্মৃতির ঝুলি (সত্যজিতের ছেলেবেলা/ নিউস্ক্রিপ্ট) উপুড় করে শুনিয়েছেন। যেমন, দশ-বারো বছর বয়সেই বক্স ক্যামেরায় চমৎকার ছবি তুলতেন সত্যজিৎ, “সেখানে ফটোগ্রাফারের কৃতিত্ব দেখাবার সুযোগ ছিল একমাত্র বিষয় ও দৃষ্টিকোণ নির্বাচনে,” লিখেছেন নলিনী। এ সব থেকে সত্যজিতের আবাল্য ‘ভিস্যুয়াল সেন্স’-এর যে আন্দাজটা পাওয়া যায়, তা কী ভাবে ক্রমশ সিনেমা-আসক্তিতে পরিণত হচ্ছিল, পিতৃবিয়োগের পর মা’র সঙ্গে ভবানীপুরে মামাবাড়িতে থাকাকালীন, সে সন্ধানেরও সাক্ষী নলিনী-স্মৃতি: ‘‘ছোটবেলা থেকেই মাণিক সিনেমা দেখতে ভালবাসত। তখন আমরা সিনেমাকে বলতাম ‘বায়োস্কোপ’... তার মামাবাড়ির সকলের নানা বিষয়ে উৎসাহ ছিল, তাই ভাল ছবির দেখার সুযোগও সে অনেক পেত।”
সুযোগের সদ্ব্যবহার কেমন করতেন, কেমন ও কতটা নিয়মিত ছবি দেখতেন, এ বার তা জানা যাবে তাঁর ডায়েরি থেকে, এই প্রথম যা প্রকাশিত হতে চলেছে ধারাবাহিক ভাবে সন্দেশ পত্রিকায়, সত্যজিৎ-জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে। “১৯৩৫, ’৩৬ ও ’৩৯-এ লেখা বাবার তিনটি ডায়েরি পাওয়া গেছে। ছোট ডায়েরি, তিন ইঞ্চি বাই সাড়ে চার ইঞ্চি। বাবার ছোটকাকা সুবিমল রায় নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন, যদ্দূর মনে হয় ওঁর দেখাদেখিই বাবার ডায়েরি লেখা শুরু। আত্মীয়-বন্ধুদের কথা লিখেছেন, ফুটবল-ক্রিকেটের খবর, কারও মৃত্যুসংবাদ থেকে নিজের স্কুল বা পড়াশোনার খবর, সরস্বতী পুজোর খাওয়া থেকে মণিপুরি নাচ দেখা... আর অবশ্যই যে সব সিনেমা দেখতেন তার বিবরণ,” জানালেন সম্পাদক সন্দীপ রায়: “তখন হলিউডের পোকা ছিলেন তা এই ডায়েরি পড়লেই বোঝা যায়। তাঁর দেখা ছবির তালিকায় বাংলা বা হিন্দি ছবির নামগন্ধ পর্যন্ত নেই!” তিনটি ডায়েরির শেষেই গুরুত্বপূর্ণ ছবির তালিকা দিয়েছেন সত্যজিৎ, ছবিগুলির রেটিং-ও করেছেন। ছবির বিবরণের পাশাপাশি শেষ ডায়েরিতে লিখতে শুরু করেছেন চলচ্চিত্র সমালোচনাও!
চোদ্দো থেকে আঠারো বছর পর্যন্ত ডায়েরি লিখেছেন সত্যজিৎ, তাতে তিরিশের দশকের ব্রিটিশ-শাসিত কলকাতায় মুক্তি-পাওয়া হলিউডের ছবি যেন খোলা হাওয়া, দেখে তাঁর মনে হত অনেক কিছু শেখার আছে। চলচ্চিত্রের ক্রমপ্রসারিত চালচিত্র বদলে দিচ্ছিল কলকাতাকে, তারও ছবি ১৯৩৫-এর ডায়েরিতে, লিখছেন: “কলকাতার Latest Luxury theatre ‘বিজলী’ open করল।” (ডান দিকের ছবি) ওই একই বছরে চালু হল মেট্রো প্রেক্ষাগৃহও। অপ্রকাশিত ডায়েরির সঙ্গে ১৯৪২-এ তাঁর অজন্তা-ইলোরা ভ্রমণের সময় মা’কে লেখা চিঠির গুচ্ছও এ বারের সন্দেশ-এ। ১৯৩৯-এর মাঝপর্বে এসে আচমকা থেমে যায় তাঁর দিনলিপি লেখা, আর কখনও লেখেননি বাকি জীবনে। সে বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল বলেই কি? ছবিতে বাঁ দিকে ১৯৩৫ সালে কিশোর সত্যজিৎ। ছবি সৌজন্য: সন্দীপ রায়
রবীন্দ্রময়
চলে গেলেন সুধীর চন্দ (১৯২৯-২০২১) (ছবিতে)। প্রচারবিমুখ, অকৃতদার মানুষটি এক অন্য যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। কুমিল্লা, কলকাতা, শান্তিনিকেতন হয়ে দিল্লি, সেখানে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন শুদ্ধ রবীন্দ্রগানের সুবাস। শান্তিনিকেতনে শিক্ষা ভবনের ছাত্র আপন করে নিয়েছেন রবীন্দ্রগান, নিরন্তর অনুধ্যানে আত্মস্থ করেছেন রবীন্দ্রদর্শনকে। দিল্লিতে ৫৭ বছরের প্রবাসজীবনে তা বিলিয়েছেন তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘রবিগীতিকা’-র অগণিত ছাত্রছাত্রীর মধ্যে। লিখেছেন অমূল্য কিছু গ্রন্থও— শান্তিনিকেতায়ন, রবীন্দ্রসংগীত: রাগ-সুর নির্দেশিকা, রবীন্দ্রসুরের নির্মাণ, রবীন্দ্রসুরের দিগন্ত। আত্মজৈবনিক গ্রন্থ সাত ঘাটের জল-এ ছড়িয়ে আছে তাঁর বিচিত্র যাপনকথা। শারীরিক কারণে দিল্লিকে বিদায় জানিয়ে কলকাতার নেতাজিনগরে পৈতৃক আবাসে ছিলেন গত কয়েক বছর। ৯২ বছর বয়সে চলে গেলেন গত ১৩ ফেব্রুয়ারি।
বই-ঠিকানা
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহর পেল নতুন বই-ঠিকানা, কলেজ স্ট্রিট বইপাড়াতেই। বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটে নিজেদের ঠিকানার কাছেই লালমাটি প্রকাশন গড়ে তুলেছে নতুন বই-বিপণি ‘বর্ণ-বইমহল’। সেখানে শুধু পছন্দের বই হাতে নিয়ে দেখতে বা কিনতেই নয়, ইচ্ছে হলে বসে বই পড়তেও পারবেন বইপ্রেমী পাঠকেরা। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যুক্ত পাঠক হুইলচেয়ারে ঢুকতে পারবেন অক্লেশে। নিজেদের বই তো বটেই, অন্য পরিচিত প্রকাশনার বইপত্রও রাখছেন কর্তৃপক্ষ। গতকাল দুপুরে এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে বর্ণ-বইমহল উদ্বোধন করলেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন বারিদবরণ ঘোষ, ভবেশ দাস, সুশোভন অধিকারী-সহ বিশিষ্টজন।
ভাষার জন্য
‘চাই ভাষা গণতন্ত্র’। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আবহে লেখক-শিল্পী, পত্রপত্রিকা সম্পাদক ও প্রকাশক থেকে শুরু করে বাংলাভাষী সকল মানুষের কাছে এই আহ্বান পৌঁছে দিতে পুস্তিকা প্রকাশ করেছে ঐকতান গবেষণাপত্র (সম্পাদনা: নীতীশ বিশ্বাস)। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া লিটল ম্যাগাজ়িন মেলায় পাওয়া যাচ্ছিল নতুন বছরে প্রকাশিত তাদের ‘নয়া শিক্ষানীতি সংখ্যা’, সেখানে ভারত সরকারের প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-র প্রতিটি অনুচ্ছেদ ধরে বিশ্লেষণ করেছেন অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য, দেখিয়েছেন কেন এই নীতি শিক্ষার পরিসরে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও প্রসারের পরিপন্থী। আছে মাতৃভাষা: শিক্ষানীতি, বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য, বাংলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও তাঁদের সমাজ-শাসনে ভূমিকা-র মতো প্রবন্ধ। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদ্যাপন তো বটেই, তার আগের দিন ২০ ফেব্রুয়ারি বহুবিধ কর্মসূচিতে ‘বাংলা ভাষার অধিকার দিবস’ পালন করেছে সর্বভারতীয় বাংলা ভাষা মঞ্চ ও ঐকতান গবেষণা সংসদ।
রংমশাল
চার দিক ভরে উঠবে প্রাণের শিল্পের খেয়ালখুশি রঙে। ২৫-২৮ ফেব্রুয়ারি, উত্তর কলকাতার হেদুয়া পার্কে আয়োজিত হতে চলেছে স্ট্রিট আর্ট ফেস্টিভ্যাল ‘রংমশাল ২০২১’। উদ্দেশ্য বাংলার লোকশিল্পসম্ভারের উদ্যাপন ও রক্ষণ। উত্তর কলকাতার সিমলার ‘A বং পজিটিভ’ নাট্যদলের উদ্যোগ এ বার চতুর্থ বছরে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসছেন প্রায় ৩০০ শিল্পী। ধামাইল থেকে বিহু, বাঁকুড়ার পটের গান থেকে বীরভূমের বহুরূপী ও বাউল গানের দল, পুরুলিয়া থেকে ছৌ ও রায়বেঁশে নাচের দল, লিলুয়া থেকে কলকেপাতরি শিল্পীরাও। থাকবে পুতুল নাচ, মূকাভিনয়, পথনাটিকাও। শিল্পহাটে উপস্থিত থাকবেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দন সেন, দেবশঙ্কর হালদার, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-সহ শিল্পী ও গুণিজন, সমাপ্তির দিনে নাট্য সম্মান অর্পণ করা হবে শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, পঙ্কজ মুন্সি, নিমাই ঘোষকে।
চিরায়ত
সুরে, স্বরে, কাব্যে ও শরীরে উদ্যাপন— প্রেমের, পুরাণের, জীবনের। তারই মঞ্চায়িত রূপ ‘কসবা অর্ঘ্য’ নাট্যদলের নতুন নাটক নাগ নাগিনী কথা-য়। যোগতত্ত্বে কুলকুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণ বর্ণিত হয়েছে সর্পের রূপকল্পে। বিশ্ব সাহিত্য ও লোকগাথাতেও জড়িয়ে সর্প-উপস্থিতি। মণীশ মিত্রের নির্দেশনায় সেই সবই তুলে ধরেছেন প্রায় পঞ্চাশ জন তরুণ শিল্পী। নাটকে সংযোজিত হয়েছে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প নারী ও নাগিনী— সাপুড়ে ও সর্পিণীর প্রেম ঘিরে বাংলার গ্রামজীবনের চিরায়ত ছবি। আছে গিরিশ কারনাডের নাগমণ্ডল নাটকের কেন্দ্রস্থ কন্নড় লোকগাথা, গ্রিক পুরাণ ও কম্বোডিয়ার লোককাহিনি। লোকনাট্য-সংস্কৃতির আঙ্গিক এসে মিশেছে ধ্রুপদী সরোদ-এস্রাজ-পাখোয়াজ-কণ্ঠসঙ্গীতে। ২৮ ফেব্রুয়ারি, রবিবার সন্ধে সাড়ে ৬টায় অ্যাকাডেমি মঞ্চে প্রথম অভিনয়।
নারী ও হিংসা
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র তথ্য অনুযায়ী, ভারতে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা বাড়ছে। বিভিন্ন সমীক্ষাতেও স্পষ্ট, করোনাকালে বেড়েছে গার্হস্থ্য হিংসা। মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসার বাস্তব চিত্রটি অনেক ক্ষেত্রেই পুরোপুরি তুলে ধরতে পারে না পরিসংখ্যান, তার কারণ পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পরিবার বা রাষ্ট্র এগুলিকে স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৪-২৬ ফেব্রুয়ারি, ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ় কলকাতা (আইডিএসকে)-র উদ্যোগে হচ্ছে অনলাইন সম্মেলন, ‘এগজ়ামিনিং জেন্ডার্ড ভায়োলেন্স ইন ইন্ডিয়া’। বলবেন তনিকা সরকার, অশ্বিনী দেশপান্ডে, পদ্মিনী স্বামীনাথন প্রমুখ। ‘জেন্ডার্ড ভায়োলেন্স ইন দ্য পাবলিক স্পেস’ বিষয়ক আলোচনাচক্রে বক্তা কল্পনা কান্নাবীরন, পলা বন্দ্যোপাধ্যায়, আজাইলিউ নিউমাই ও মিনা মেনন।
না-দেখা ছবি
সারা জীবন নীরবে, নিজেকে আড়ালে রেখেই শিল্পের সাধনা করে গেছেন রেবা হোর (১৯২৬-২০০৯)। অর্থনীতির স্নাতক, পরে গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলে ভর্তি হন, তার আগেই ১৯৪৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। চাকরি করেছেন স্কুলে, ১৯৫৪ সালে শিল্পী সোমনাথ হোরের সঙ্গে বিয়ে, সে বছরেই চৌরঙ্গি টেরেসে সোমনাথ-রেবার যুগ্ম প্রদর্শনী। কলকাতা, দিল্লি, শান্তিনিকেতন, সবই ছিল রেবার ঠিকানা, শিল্পী জয়নুল আবেদিন তাঁর শিল্পজীবনের পথপ্রদর্শক। রেবা হোরের অদেখা শতাধিক কাজ নিয়ে প্রদর্শনী ‘লাইট অব স্প্রিং’ চলছে দেবভাষা বই ও শিল্পের আবাস-এ, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে। আছে প্যাস্টেল, তেলরং, জলরং, মিশ্র মাধ্যমের ছবি, টেরাকোটার কাজ, সবই শিল্পী-কন্যা চন্দনা হোরের সৌজন্যে পাওয়া (ছবিতে তারই একটি)। “চেতন-অবচেতন চেষ্টা মিলে ছবি হয়,” লিখেছিলেন শিল্পী। সেই মগ্ন শিল্পচৈতন্যেরই সন্ধান প্রদর্শনীতে। ৮ মার্চ অবধি, মঙ্গলবার বাদে রোজ দুপুর আড়াইটে থেকে রাত সাড়ে ৮টা।
গুড়চরিত
শহর গড়ে ওঠার পর গুড়ের চাহিদা মেটাতে বাংলার নানা জায়গা থেকে নৌকায় গুড়ের হাঁড়ি আসত কলকাতায়। শহরের অন্যতম প্রাচীন গুড়পট্টি তাই গড়ে ওঠে নদীর ধার ঘেঁষে। তখন আড়তের সব দোকান ছিল খোড়ো ছাউনির মাটির ঘর, আড়ত থেকে গুড় যেত গরুর গাড়িতে। শোভাবাজারের দুই শতক পেরনো ‘শ্রীমন্ত গুড়ের আড়ত’-এর বর্তমান কর্ণধার তন্ময় বেরা বড় হয়েছেন এই সব শুনেই। এই আড়তে খেজুর গুড়ের মরসুম চলে ফেব্রুয়ারিভর। শহরের নামী মিষ্টি বিক্রেতারা এখান থেকে নিয়ে যান সারা বছরের গুড়ের জোগান, তাতেই উতরোয় জামাইষষ্ঠী থেকে বিজয়া। ভাল খেজুর গুড় আসে আড়ংঘাটা, মাজদিয়া, বাঁকুড়া থেকে; জলঙ্গি, দেবীপুর থেকে পাটালি; উত্তরপ্রদেশ ও বিহার থেকে আখের গুড়। লকডাউনে এই গুড় দিয়েই স্বাদ মিটিয়েছে শহর।
দুই মলাটে
সারা বছরের সাহিত্যের খবরাখবর... কোথায় কবে সাহিত্যসভা বা কবি-সম্মেলন হল, কোন লেখক কবে কোথায় সংবর্ধিত হলেন, এবং সেই সঙ্গে কবি-সাহিত্যিকদের তো বটেই, পত্রপত্রিকা, প্রকাশক, শিল্প-সাহিত্য সংস্থার খোঁজ, নামী থেকে প্রান্তিক সকলের, এমনকি তাদের ওয়েবসাইট পর্যন্ত, প্রতি বারের মতো এ বছরেও দু’মলাটে ভরে প্রকাশ পেয়েছে জাহিরুল হাসান প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যের ইয়ারবুক/ ঠিকানাপঞ্জি ২০২১ (সম্পাদনা: বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য)। ঠিকানাপঞ্জি শুধু পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশেরই নয়, অসম-ত্রিপুরা আর ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়ানো সাহিত্যিক-প্রকাশকদেরও। “আমি রোমন্থন করতে পারছি আমার নামটি দেখতে পাওয়ার আনন্দ।”— ভূমিকায় লিখেছেন স্বপ্নময় চক্রবর্তী, “খুবই ভালো লেগেছে সবাইকে সমগুরুত্বে দেখা। বিখ্যাত ও বাজারসফল লেখকদের জন্য আলাদা ফন্ট নয়, বেশি জায়গাও নয়। সবাই সমান।” প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী হিরণ মিত্র।
অনন্য জীবন
‘রবীন্দ্রাচ্ছন্ন’ সন্তোষকুমার ঘোষকে (১৯২০-১৯৮৫) কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখেছেন ‘জননান্তর সৌহৃদানি’র স্পষ্টতায়। আবার মেয়ের বিয়েতে প্রিয় বন্ধু হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিমন্ত্রণ করতে ভুলে গেছেন সন্তোষকুমার, ঘটেছে এমনও। ঘটনাচক্রে তাঁর বাড়ি এসে হেমন্তবাবু দেখেন, বিয়ের ম্যারাপ বাঁধা! এমনই সব ঘটনা ও স্মৃতিচিত্রে ভরা সন্তোষকুমার ঘোষ: জন্মশতবর্ষ স্মারক গ্রন্থ (সম্পাদনা: শুভাশিস চক্রবর্তী)। সুভাষ মুখোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, তপন সিংহ, অম্লান দত্ত, সমরেশ বসুর স্মৃতিকথা, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা, অপ্রকাশিত কার্টুন ও দুষ্প্রাপ্য আলোকচিত্র, সটীক চিঠিপত্র, অলঙ্করণ-গুচ্ছ, গ্রন্থপঞ্জি, পাণ্ডুলিপির মুদ্রণে অনন্য উড়োপত্র প্রকাশনার এই বই। আছেন ‘কবি সন্তোষকুমার’ও। প্রয়াণদিনে ২৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সভাঘরে সন্ধে সাড়ে ৫টায় বইটির প্রকাশ অনুষ্ঠান, অহর্নিশ পত্রিকার উদ্যোগে। ছবিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তরুণ সন্তোষকুমার ঘোষ।
দেখি বিস্ময়ে
‘বাংলা সংস্কৃতির নিরুপম মহীরুহ’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে একটি বইয়ের ঘেরাটোপে বাঁধার প্রয়াস সহজ নয় মোটেই। সে কাজই করেছেন সৌমিত্র মিত্র, তাঁর সম্পাদিত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়/ দেখি বিস্ময়ে বইয়ে। অপরিমেয় ব্যাপ্তির মানুষটিকে দু’মলাটে ধরার কঠিন কাজ সহজ হয়েছে দে’জ পাবলিশিং-এর শুভঙ্কর দে’র সহযোগিতায়। পৌলমী চট্টোপাধ্যায় দিয়েছেন অনেকগুলি আলোকচিত্র, ছবি এঁকেছেন যোগেন চৌধুরী ও শুভাপ্রসন্ন, স্কেচ হিরণ মিত্র। বইয়ে ব্যবহৃত আরও বহু মূল্যবান ছবি দিয়েছেন সন্দীপ রায়, গৌতম ঘোষ-সহ বিশিষ্টজন। পঞ্চাশটিরও বেশি লেখায় ঋদ্ধ এই বইয়ের লেখক-তালিকা ঈর্ষণীয়, প্রথম লেখাটি সৌমিত্রবাবুর মা আশালতা দেবীর— মাইকেলের ‘সৌমিত্রকেশরী’ অনুসারে আমার দ্বিতীয় সন্তানের নাম রেখেছিলাম ‘সৌমিত্র’। আছে শিল্পীর বংশলতিকা, চলচ্চিত্রপঞ্জি, মঞ্চনাটক, দূরদর্শনের কাজ, ক্যাসেট-সিডির তালিকা, তাঁর ও তাঁকে নিয়ে লেখা বইয়ের খোঁজ। ‘পূর্ব পশ্চিম’ নাট্যদল ও দে’জ পাবলিশিং-এর যৌথ উদ্যোগে এই বইয়ের প্রকাশ ২৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সন্ধে ৬টায় শিশির মঞ্চে, দীপা চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে।
আ মরি
সকালেই যা তরতাজা, দিন ফুরোলেই তা বাসি। পুজোর দিন ঠাকুরকে নিয়ে অত ঘটাপটা, পরের দিনই ফাঁকা মণ্ডপ, করুণ ম্লানিমা। একুশে ফেব্রুয়ারি চলে গেল গতকাল, মাতৃভাষা নিয়ে সেই উত্তেজনা কি আজও একই রকম? না কি রোজকার ভিন্গন্ধী বাংলা উচ্চারণ, বানান, অনুবাদের ভুল-ভুলাইয়াতেই ক্রমশ হারিয়ে, তলিয়ে যাওয়া আবারও?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy