Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

বায়ুদূষণ, বন্যা: শহরের মাথায় জোড়া খাঁড়ার শঙ্কা

ডাঙায় বাঘ আর জলে কুমির প্রবাদটা সুন্দরবনের ক্ষেত্রে খাটে। কিন্তু পরিবেশবিদেরা বলছেন, সুন্দরবন থেকে বহু কিলোমিটার দূরে খাস কলকাতাতেও সেই প্রবাদ সত্যি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে!

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ০২:২৫
Share: Save:

ডাঙায় বাঘ আর জলে কুমির প্রবাদটা সুন্দরবনের ক্ষেত্রে খাটে। কিন্তু পরিবেশবিদেরা বলছেন, সুন্দরবন থেকে বহু কিলোমিটার দূরে খাস কলকাতাতেও সেই প্রবাদ সত্যি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে!

ধর্মতলা, বিবাদী বাগ কিংবা মৌলালিতে হয়তো বাঘ-কুমির হামলে পড়বে না। তবে পরিবেশ দূষণের ফলে কলকাতার সামনে এখন জোড়া বিপদ! কী ভাবে? পরিবেশবিদেরা বলছেন, এক দিকে ক্রমাগত বিষিয়ে যাচ্ছে শহরের বায়ু। যা বাড়িয়ে দিচ্ছে নাগরিকদের ক্যান্সার, শ্বাসকষ্টের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির আশঙ্কা। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) যে সমীক্ষা করেছে, তাতেও একই ছবি উঠে এসেছে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা এবং সুক্ষ্ম ধূলিকণা, দু’টোর পরিমাণই ৪০ শতাংশ করে বেড়েছে।

বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাগরের জলতল যে ভাবে বাড়ছে, তাতে উপকূলবর্তী এলাকাগুলি যে বিপদে পড়বে, তা বহু দিন ধরেই বলে আসছে বিভিন্ন পরিবেশ গবেষণা সংস্থা। সম্প্রতি এ ব্যাপারে সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ব্রিটেনের একটি সংস্থা। তাতে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের যে ক’টি শহরের বাসিন্দারা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তার তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে কলকাতা। জনসংখ্যার নিরিখে তালিকায় তার স্থান এক এবং সম্পদের নিরিখে চার। কলকাতার গায়ে গা লাগিয়েই রয়েছে আরব সাগর পাড়ের মুম্বই। এই পরিস্থিতিতে এক পরিবেশবিদের মন্তব্য, ‘‘কলকাতার মাথার উপরে এখন জোড়া খাঁড়া ঝুলছে!’’

পরিবেশবিদদের অনেকেই অবশ্য বলছেন, কলকাতার এই দুই বিপদ অবশ্য নতুন নয়। দীর্ঘ দিন ধরে এই বিপদ নিয়ে নানা পর্যায়ে আন্দোলন, আলোচনা সবই হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনও সুরাহা হয়নি। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, কলকাতার বায়ুদূষণের পিছনে সব থেকে বড় কারণ দূষিত যানবাহন। মূলত ডিজেলচালিত বাস এবং পণ্যবাহী গাড়ি থেকেই এই দূষণ ছড়ায়। কিন্তু তা রুখতে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, পরিবহণ দফতর এবং পুলিশের যে সক্রিয়তা প্রয়োজন, তা দেখা যায় না বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে পর্ষদের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, ‘‘আইন প্রণয়নের ক্ষমতা পুলিশের হাতে। তা ছাড়া, এই ধরনের অভিযানের ক্ষেত্রে যে লোকবল প্রয়োজন, তা আমাদের নেই।’’ পুলিশের অবশ্য দাবি, পরিবেশ ছাড়পত্রহীন গাড়ি ধরতে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে দূষণ কমে না কেন?

সদুত্তর মেলেনি। তবে ঘটনা হল, খোদ জাতীয় পরিবেশ আদালতে হলফনামা দিয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ তো স্বীকার করে নিয়েছে বছরের একটা বড় সময় ধরে শহরে দূষণের মাত্রা বেশি থাকে। এবং তার পিছনে পরোক্ষে গাড়ির দূষণকেই দায়ী করছেন পর্ষদকর্তারা। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। তাতে বেশ কিছু সমাধান সূত্র দেওয়া হয়েছে বলে পর্ষদ সূত্রের খবর।

পরিবেশ বিজ্ঞানের গবেষক তন্ময় রুদ্র অবশ্য বলছেন, শুধু যানবাহনই নয়, কলকাতার এই দূষণের পিছনে দায়ী নির্মাণস্থলের দূষণও। তাঁর ব্যাখ্যা, নির্মাণস্থল হোক বা রাস্তা সারাই, ধূলিকণা নিয়মিত বাতাসে মিশছে। বহু ক্ষেত্রে দূষণ ঠেকানোর জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তা-ও নেওয়া হয় না। বিভিন্ন রাস্তার ধার থেকে নির্বিচারে গাছ কাটায় এই দূষণ আরও বাড়ছে। রাস্তার পিচ প্রকাশ্যে গলানোর ফলেও বাতাসে বিষাক্ত ধোঁয়া মিশছে বলে জানান তিনি।

তন্ময়বাবুর এই ব্যাখ্যাকে সমর্থন জোগাচ্ছেন বহু সাধারণ মানুষও। বিরাটি, মাইকেল নগর, নিউ ব্যারাকপুরে যশোহর রোডের পাশের এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, যশোহর রোড সম্প্রসারণের জন্য গাছ কাটা হয়েছে। তার উপরে রাস্তার কাজের জন্য ধুলোর পরিমাণও বেড়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে বছর খানেক ধরে দূষণ যন্ত্রণায় হাসফাঁস করতে হচ্ছে তাঁদের। পরিবেশকর্মীদের দাবি, এই পরিস্থিতি শীঘ্র না বদলালে আগামী দিনে কলকাতায় শ্বাস নেওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

একই ভাবে বিপদের আশঙ্কা বাড়ছে বন্যা নিয়ে। পরিবেশবিদদের মতে, পর্যটনের নামে সুন্দরবনে যে ভাবে পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে এবং শহরে অপরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে, তাতে আগামী দিনে অতিবৃষ্টিতেই হয়তো বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে কলকাতা। কলকাতা পুরসভা সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, এই বিপদের আঁচ করেছে তারাও। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। তবে এক পরিবেশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘কলকাতা পুরসভা যা-ই করুক না কেন, সুন্দরবনকে রক্ষা না করলে কলকাতার বিপদ কমবে না। রাশ টানতে হবে অপরিকল্পিত নগরায়ণেও।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Air pollution suffocate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy