ধৃতের থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। নিজস্ব চিত্র
কলকাতায় বসে ইংল্যান্ডে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির অন্যতম পান্ডাকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশের ব্যাঙ্ক প্রতারণা শাখার গোয়েন্দারা। বুধবার রাতে, গোয়েন্দারা ধৃত অভিযুক্তের বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছেন জালিয়াতির প্রায় ৭ কোটি টাকা।
গত অগস্ট মাসে ভারতের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কলকাতা দফতর থেকে ওই প্রতারণার বিষয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছিল কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে। কলকাতা পুলিশ শেক্সপিয়র সরণি থানায় ব্যাঙ্ক জালিয়াতির মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে।
সেই তদন্তের সূত্র ধরেই জানা যায় বেহালার বাসিন্দা গৌরব সাতওয়ানির নাম। বুধবার রাতে পুলিশ গৌরবের বাড়িতে হানা দেয়। উদ্ধার হয় জালিয়াতির ৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: যোগী আমলে ধর্ষণ করে খুনের রমরমা ‘উত্তমপ্রদেশে’
ঘটনার সূত্রপাত এ বছরের জুন মাসের শেষ সপ্তাহে। ভারতের একটি প্রথম সারির বেসরকারি ব্যাঙ্কের ইংল্যান্ডের একটি শাখায় গিয়ে এক গ্রাহক ব্যাঙ্ক জালিয়াতির অভিযোগ জানান। জন্মসূত্রে ভারতীয় কিন্তু ইংল্যান্ডের নাগরিক ওই গ্রাহকের অভিযোগ, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ভারতীয় অর্থমূল্যে প্রায় ৮৭ লাখ টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে। তার ফলে বিশাল ক্ষতি হয় ব্যাঙ্কের। শুরু হয় ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ তদন্ত।
ইতিমধ্যে ইংল্যান্ডের গ্রাহকের টাকা কী ভাবে জালিয়াতি হয়েছে তা নিয়েও প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট আসে সে দেশ থেকে। জানা যায়, ওই গ্রাহক একটি ফোন পেয়েছিলেন কোনও অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে। সেই ব্যক্তি ওই গ্রাহককে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলেন। জানানো হয়, একটি বিশেষ পরিষেবা পাওয়া যাবে ওই অ্যাপ থেকে। ওই অ্যাপ ডাউনলোড হওয়ার পরেই গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক দফায় মোটা অঙ্কের টাকা উধাও হয়ে যায়। তদন্তকারীরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, আসলে ওই অ্যাপের আড়ালে ছিল একটি বিশেষ লিঙ্ক যা জামতাড়ার প্রতারকরাও ব্যবহার করে ‘টার্গেট’-এর মোবাইলের নিয়ন্ত্রণ নিতে। ওই লিঙ্কে ক্লিক করা মাত্র গ্রাহকের মোবাইলের সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ চলে যায় প্রতারকের হাতে। আর সেই নিয়ন্ত্রণ নিয়েই মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা লোপাট করেছে জালিয়াতরা।
সেই তদন্তে উঠে আসে, ইংল্যান্ডের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে জালিয়াতির টাকা সোজা এসেছে ভারতে। কলকাতার কয়েকটি অ্যাকাউন্টের হদিশ পাওয়া যায়। যেখানে ওই টাকা জমা পড়েছে। তদন্তে উঠে আসে, যে অ্যাকাউন্টগুলোতে ওই টাকা জমা পড়েছে সেগুলোয় ওই গ্রাহকের টাকা ছাড়াও, ইংল্যান্ডের আরও বেশ কিছু নাগরিকের টাকা জমা পড়েছে গত কয়েক সপ্তাহে। সেই টাকার মোট অঙ্ক দেড় কোটিরও বেশি।
আরও পড়ুন: আজ যাচ্ছেন রাহুল-প্রিয়ঙ্কা, হাথরস কাণ্ডে আরও চাপে যোগী
কলকাতার এ রকম প্রায় ৩৫টি অ্যাকাউন্টের হদিশ পান তদন্তকারীরা। যে অ্যাকাউন্টগুলোতে গত কয়েক সপ্তাহে ইংল্যান্ডের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা জমা পড়েছে। ওই অ্যাকাউন্টগুলোর পুরনো লেনদেন খতিয়ে দেখতে গিয়ে তাজ্জব হয়ে যান তদন্তকারীরা। দেখা যায়, বছর দুয়েক ধরে প্রতিটি অ্যাকাউন্টই ব্যাঙ্কিং পরিভাষায় ‘ডরম্যান্ট’ বা নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। যখন সক্রিয় ছিল অ্যাকাউন্টগুলো, তখনও লেনদেনের অঙ্ক হাজারের গণ্ডি ছাড়ায়নি। প্রত্যেকটি অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রেই একটি অদ্ভুত মিল খুঁজে পান তদন্তকারীরা। দেখা যায়, প্রতিটি অ্যাকাউন্টই একটি নির্দিষ্ট সময়ে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এবং সেখানে ইংল্যান্ড থেকে মোটা অঙ্কের টাকা জমা পড়েছে। টাকা জমা পড়ার পর পরই তা আবার চলে গিয়েছে অন্য অ্যাকাউন্টে। ব্যাঙ্কের এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘অ্যাকাউন্ট যাঁদের নামে রয়েছে, তাঁদের সম্পর্কে খোঁজ খবর করতে গিয়েও আমরা জানতে পারি, বিদেশ থেকে মোটা অঙ্ক আসার মতো কোনও যোগ তাঁদের নেই।”
ওই সূত্র ধরে তদন্ত করতে গিয়েই গোয়েন্দারা একাধিক এটিএমের হদিশ পান, যেখান থেকে ওই ‘ভাড়া’-র অ্যাকাউন্টে আসা টাকা তোলা হয়েছে। সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কয়েকজনকে প্রাথমিক ভাবে সনাক্ত করা হয়। তাদের সূত্র ধরেই গৌরবের হদিশ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের দাবি, শহরের বুকেই ‘মিনি জামতাড়া’ তৈরি করেছিল ওই গ্যাং। এই চক্রে আরও অনেকে যুক্ত বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy