উদ্ধার: নমিতার সঙ্গে তার মালিক গোপী মল্লিক (মাঝে) এবং পুলিশ অফিসার অমিত রায়চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র
রাস্তা হারিয়ে টলমল পায়ে গাড়ির ফাঁক গলে এক দিক থেকে অন্য দিকে হাঁটছিল সে। যে কোনও মুহূর্তেই বিপদ ঘটতে পারত পথভোলা সেই শিশু ঘোড়ার। জানতে পেরে ঘটনাস্থল থেকে ঘোড়াটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
বুধবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সেই শিশুকে পাহারা দেওয়ার সঙ্গেই চলল দিনভর খাওয়ানোর চেষ্টাও। যদিও কাঁচা ছোলা, কলা কিছুই তার মুখে রোচেনি। তবে দুধ ও জল মিশিয়ে দেওয়া হলে তা কিছুটা খেয়েছে সে। পরে রাতের দিকে তার মালিকের খোঁজ মিললে দারোগাদের থেকে বিদায় নিয়ে সে রওনা দেয় ময়দানের দিকে।
পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার সকাল থেকেই শিশুটিকে জোড়াবাগান থানা এলাকার মহর্ষি দেবেন্দ্র রোডে কেএমসি-র অফিসের সামনে ঘুরতে দেখা যাচ্ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা তা দেখে ওই থানার সার্জেন্ট ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তকে খবর দেন। তিনি এবং থানার দুই অফিসার, অমিত রায়চৌধুরী ও সাধন সাহা গিয়ে দেখেন, ঘোড়াটি উদ্ভ্রান্তের মতো রাস্তার এক দিকে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁরাই থানায় নিয়ে যান তাকে।
সমস্যা দেখা দেয় অন্যত্র। পুলিশকর্মীদের কারও ধারণা ছিল না, শিশু ঘোড়া কী খায়? এমনকি থানার কোথায় কী ভাবে তাকে রাখা হবে, তা নিয়েও ধন্দ দেখা দিয়েছিল। তবুও মালিকের খোঁজ মেলার আগে পর্যন্ত ছোট্ট অতিথিকে তাঁরাই যত্নআত্তি করবেন বলে স্থির হয়। শিশুটির নজরদারি এবং আপ্যায়নের দায়িত্ব পড়ে এক অফিসারের উপরে। প্রথমে আনানো হয় ছোলা। কিন্তু তা সামনে ধরায় অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় ঘোড়াটি। এর পরে আনা হয় কলা। তা-ও তার মুখে না রুচলে দেওয়া হয় দুধ। দুধের সঙ্গে জল মেশাতেই তা খেয়ে নেয় ঘোড়াটি।
এর মধ্যেই পুলিশের তরফে তার ঠিকানার খোঁজ শুরু করা হয়। লালবাজার কন্ট্রোল রুম মারফত খবর যায় ঘোড়সওয়ার পুলিশের কাছে। তারা যোগাযোগ করে ময়দান থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ার ইরশাদ হোসেন ওরফে সানির সঙ্গে। ময়দানের সঙ্গে সানির যোগ অবশ্য আগে থেকেই। গড়ের মাঠে খোঁজ নিতে গিয়ে সানি জানতে পারেন, গোপী মল্লিক নামে এক ঘোড়ার মালিক বুধবার সকাল থেকে মাঠে বসেই কাঁদছেন। সানিকে তিনি জানান, আগের রাত থেকে খোঁজ নেই তাঁর পোষ্য ঘোড়ার এক মাসেরও কম বয়সি শাবক নমিতার। ঝড়-বৃষ্টির পর থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে সে। এর পরেই সানি হোয়াটসঅ্যাপে জোড়াবাগান থানা থেকে হারানো ঘোড়ার ছবি আনিয়ে দেখান। গোপী জানান, সেটিই তাঁর নমিতা। রাতেই গোপীকে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়।
পুলিশ জানায়, গোপীকে দেখেই বদলে যায় নমিতার হাবভাব। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে থানা থেকে নমিতাকে নিয়ে বেরোতে বেজে যায় সাড়ে এগারোটা। মালিকের সঙ্গে ফেরার পথে চিঁ-চিঁ শব্দে ডাক দিচ্ছিল সে। নিজের ভাষায় পুলিশকর্মীদের সেটা ধন্যবাদ দিতেই কি না, তা অবশ্য বোঝার উপায় ছিল না কারও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy