Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
KOLKATA POLICE

জেরা করতে ডাকলেও শারীরিক পরীক্ষা, সিঁথি-কাণ্ডের পর লালবাজারের নির্দেশিকা

শীর্ষ আধিকারিকদের এই নির্দেশিকা ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে নীচু তলার পুলিশ কর্মীদের মধ্যে।

লালবাজার। —ফাইল চিত্র।

লালবাজার। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৪:২৮
Share: Save:

সিঁথিতে পুলিশ হেফাজতে অভিযুক্তের মৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষিতে এ বার নড়েচড়ে বসল কলকাতা পুলিশ। শহরের সমস্ত থানায় নির্দেশ গেল, এখন থেকে কোনও ব্যক্তিকে জেরার জন্য সেখানে নিয়ে আসা এবং ছেড়ে দেওয়ার সময় তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা করাতে হবে। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবারই এই সংক্রান্ত নির্দেশ পৌঁছেছে কলকাতা পুলিশের সব থানার আধিকারিকদের নিয়ে তৈরি হোয়াটস্‌অ্যাপ গ্রুপে।

ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনও ব্যক্তিকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে সেখানে ঢোকা এবং জেরা শেষে বেরনোর সময় সরকারি চিকিৎসককে দিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করতে হবে। সিঁথির ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কলকাতা পুলিশ চাইছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনায় যে সব ধরনের বিতর্ক এড়ানো সম্ভব হয়।

বর্তমানে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হলে তাঁর মেডিক্যাল টেস্ট করাতে হয়। আদালতে পেশ করার আগেও ধৃতের শারীরিক পরীক্ষা করাতে হয়। কোনও অভিযুক্ত যদি পুলিশি হেফাজতে থাকেন, তা হলে প্রতি দিন তাঁর মেডিক্যাল টেস্ট করানোর নির্দেশ রয়েছে শীর্ষ আদালতের। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশে জেরার সময় চিকিৎসকের সহায়তা দেওয়া হলেও, সাধারণ ভাবে কোনও অভিযুক্তকে জেরার জন্য ডাকা হলে তাঁর শারীরিক পরীক্ষার কোনও রীতি নেই। তবে সিঁথির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতেই এই ব্যবস্থা, বৃহস্পতিবার তেমনই ইঙ্গিত দেন এক পুলিশ কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘এই নির্দেশিকা নতুন কিছু নয়। ডিকে বসু বনাম পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মামলায় শীর্ষ আদালত ১১ দফা নির্দেশিকা দিয়েছিল। সেই নির্দেশই মানতে বলা হয়েছে।”

আরও পড়ুন: পরিচারকের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে খুনের অভিযোগ

ওই নির্দেশিকায় কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নিয়ম উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কাউকে জেরা করার সময়, যে পুলিশ কর্মীরা জেরা করবেন, তাঁদের উর্দিতে নিজের নাম এবং পদ উল্লেখ থাকতে হবে এবং তা যেন স্পষ্ট দেখা যায়। পাশাপাশি গ্রেফতারের ক্ষেত্রে ধৃতের পরিবারের সদস্য বা এলাকার কোনও গণ্যমান্য ব্যক্তিকে দিয়ে ‘অ্যারেস্ট মেমো’ সই করাতে হবে।

তবে শীর্ষ আধিকারিকদের এই নির্দেশিকা ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে নিচুতলার পুলিশকর্মীদের মধ্যে। তেমনই এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এমনিতেই থানায় ধৃত অভিযুক্তদের মেডিক্যাল টেস্ট করাতে লম্বা লাইন হয় সরকারি হাসপাতালগুলোয়। সব ক্ষেত্রে যদি জেরার আগে পরে মেডিক্যাল টেস্ট করাতে হয়, তা হলে তো থানাতে এক জন সর্বক্ষণের চিকিৎসক প্রয়োজন।” নিচুতলার এক আধিকারিকদের মন্তব্য, ‘‘এমনিতেই সরকারি চিকিৎসক পাওয়া মুশকিল। এর পর এত চাপ বাড়লে জেরা করতে কাউকে থানায় আনাই দুষ্কর হবে।”তবে কিছু আধিকারিকরা মনে করছেন, এই নিয়মে পুলিশের সুবিধা হবে। বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে পারবেন থানার আধিকারিকরা।

আরও পড়ুন: অভিযানে অনিয়ম দেখলে বাতিল স্কুলগাড়ির লাইসেন্স

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, ওই নির্দেশিকা মেনে চলার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা বিভিন্ন থানার আধিকারিকদের জানিয়েছেন, কোনও ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করে হাজতে পাঠানোর সময় ভাল করে তল্লাশি করতে হবে। যাতে কোনও নিষিদ্ধ জিনিস লকআপের ভিতরে ঢুকতে না পারে। সেরেস্তা এবং লক আপের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়মিত পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে থানার আধিকারিকদের।

পুলিশকর্মীদের নিজেদের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে লালবাজারের তরফে। সূত্রের খবর, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় পুলিশকর্মীদের যাতে কোনও ভাবে ঔদ্ধত্য প্রকাশ না পায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy