আড়াই বছরে আড়াই লক্ষেরও বেশি মামলা দায়ের হয়েছে অবাঞ্ছিত হর্ন বাজানোর অভিযোগে। যার মধ্যে দু’লক্ষ ৩২ হাজার মামলা হয়েছে শুধু ‘নো হর্ন জ়োন’-এ। প্রতীকী ছবি।
বছরখানেক আগে কলকাতা পুলিশের প্রকাশ করা ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ অনুযায়ী, আড়াই বছরে আড়াই লক্ষেরও বেশি মামলা দায়ের হয়েছে অবাঞ্ছিত হর্ন বাজানোর অভিযোগে। যার মধ্যে দু’লক্ষ ৩২ হাজার মামলা হয়েছে শুধু ‘নো হর্ন জ়োন’-এ। সেই কারণেই নতুন বছরে শহরের ‘নো হর্ন জ়োন’, অর্থাৎ, সরকারি হাসপাতালগুলির সামনে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। তাতে গত ১০ দিনে ২০০-র কাছাকাছি মামলা রুজু করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। কিন্তু, এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েও অনেকে বলছেন, দিনের ছ’ঘণ্টা নজরদারির সময় পেরিয়ে গেলে কী হবে? এ-ও প্রশ্ন উঠছে, বাকি শহরে না হলেও অন্তত ‘নো হর্ন জ়োন’গুলির কাছে মুম্বইয়ের মতো ‘পানিশিং সিগন্যাল’ কেন চালু করা হবে না?
বছরকয়েক আগে মুম্বই পুলিশের একটি পদক্ষেপ নিয়ে দেশ জুড়ে আলোচনা শুরু হয়। ট্র্যাফিক সিগন্যাল লাল দেখেও অনেকে অকারণ হর্ন বাজান। জরিমানা করেও সেই প্রবণতা রোখা যায় না। তাই নয়া দাওয়াই হিসাবে সিগন্যালগুলিতে শব্দ মাপার যন্ত্র বসায় মুম্বই পুলিশ। ওই রাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও সিগন্যালের কাছে হর্নের আওয়াজ ৮৫ ডেসিবেলের বেশি হলেই জানান দেবে সেই যন্ত্র। তার পরেই আরও ৯০ সেকেন্ডের জন্য লাল হয়ে যাবে সিগন্যাল। অতএব, ‘যদি সিগন্যালেই দাঁড়িয়ে থাকতে চান, নিশ্চিন্তে হর্ন বাজান!’ এই নিয়ম চালু হওয়ার পরে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, এতে তো সিগন্যালে দাঁড়ানো, নিয়ম না ভাঙা গাড়িও শাস্তি পাবে! পুলিশ বোঝায়, বিনা দোষে কেউ আটকে গেলে দোষীকেই নিশানা করবেন। আদতে ভয়েই কমে আসবে অবাঞ্ছিত হর্ন বাজানোর প্রবণতা।
ওই সময়ে কলকাতার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে নানা মহল থেকে অভিযোগ মেলে। বিষয়টি গড়ায় আদালতে। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ জমা দিয়ে জানায়, ২০১৯-এর জুন থেকে ২০২১-এর নভেম্বর— এই সময়সীমার মধ্যে লাগামছাড়া হর্নের ধারায় নথিভুক্ত মামলার সংখ্যা প্রায় ২.৬ লক্ষ। যার মধ্যে ‘নো হর্ন জ়োন’-এ নথিভুক্ত হওয়া মামলা ২,৩১,৯০২টি। দেখা যায়, ওই বছরের ডিসেম্বরেই আরও প্রায় ৩৪ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। সেই সময় থেকেই পুলিশকে এ বিষয়ে বাড়তি সতর্ক হতে বলা হয়।
এরই প্রেক্ষিতে চলতি বছরে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে পুলিশি নজরদারি চালানো হয়েছে। গত দু’দিন ধরে এমন পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরেও। এর পরে আর জি কর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনেও একই পদক্ষেপ করার কথা। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) সুনীলকুমার যাদব বলেন, ‘‘দূষণের বিরুদ্ধে কাজ তো চলছিলই, শব্দদূষণের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ পুলিশের হিসাব বলছে, গত দশ দিনে দুশোটির কাছাকাছি মামলা করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দু’হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র পথ নিরাপত্তা সপ্তাহেই শহরে এমন মামলার সংখ্যা ১৬১টি।
‘অ্যান্টি পলিউশন সেল’ মামলা করেছে ১১০টি। বাকিগুলি কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক গার্ডগুলির তরফে করা। কিন্তু, এই পদক্ষেপেও কি পরিস্থিতি বদলাবে? লালবাজারের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘যে ভাবে কড়া পদক্ষেপ করে হেলমেটহীন মোটরবাইক চালকদের নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে, হর্নের ক্ষেত্রেও আগামী ছ’মাসের মধ্যে তা করা সম্ভব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy