Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

সোনা পাচারের নয়া ‘করিডর’ হাওড়া স্টেশন

গত কয়েক মাসের মধ্যে হাওড়া স্টেশন এলাকায় একাধিক বার সোনার বিস্কুট ও সোনার বাট ধরা পড়েছে। পরপর এমন ঘটনায় এমনিতেই রেলের পদস্থ কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল।

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৮ ০২:১৬
Share: Save:

কলকাতা বিমানবন্দরের পরে হাওড়া স্টেশন। পাচারকারীদের দৌলতে এটাই বর্তমানে সোনা পাচারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ করিডর।

গত কয়েক মাসের মধ্যে হাওড়া স্টেশন এলাকায় একাধিক বার সোনার বিস্কুট ও সোনার বাট ধরা পড়েছে। পরপর এমন ঘটনায় এমনিতেই রেলের পদস্থ কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। ফের বৃহস্পতিবার হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে এক কেজি সোনা সমেত এক ব্যক্তি ধরা পড়ায় রেলপুলিশের দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে। রেলের অনুমান, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আঁটোসাঁটো করে প্রচুর ধরপাকড় শুরু হওয়ায় সোনা পাচারকারীরা পরিবর্ত হিসাবে রেলপথের ব্যবহার শুরু করেছে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া স্টেশনের মাধ্যমে সোনার পাশাপাশি ভিন্ রাজ্য থেকে গাঁজা আমদানির পরিমাণও সাম্প্রতিক কালে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে।

হাওড়া পূর্ব ভারতের অন্যতম বড় স্টেশন। পাশাপাশি এটি প্রান্তিক স্টেশন হওয়ায় দীর্ঘ দিন ধরেই পাচারকারীরা এই স্টেশনকে নানা ভাবে ব্যবহার করে থাকে বলে রেল পুলিশের দাবি। হাওড়া স্টেশনে নতুন ও পুরনো দু’টি কমপ্লেক্স মিলিয়ে ২৩টি প্ল্যাটফর্ম। তার উপরে দৈনন্দিন মেল, এক্সপ্রেস ও ইএমইউ মিলিয়ে প্রায় ৬০০টি ট্রেনের ১০ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। ফলে কিছু জায়গায় নজরদারির কিঞ্চিত ঢিলেঢালা ভাবকে কাজে লাগিয়ে চলে পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য।

রেল পুলিশ সূত্রে খবর, আশির দশকের শেষ দিকে হাওড়া স্টেশনকে ব্যবহার করা হত ভিসিপি, ভিসিআর ও ইলেক্ট্রনিক্স নানা খেলনা পাচারের পথ হিসাবে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাচারের সামগ্রী বদলেছে। দিল্লি থেকে রুপো, বিহারের মুঙ্গের থেকে আনা আগ্নেয়াস্ত্র এবং সব শেষে বিশেষ প্রজাতির কচ্ছপ পাচার করাও হত এই স্টেশন ব্যবহার করেই।

সম্প্রতি মুম্বই, গুয়াহাটি-সহ আরও কয়েকটি জায়গা থেকে আসা ট্রেনে সোনার বিস্কুট উদ্ধার হওয়ার পরে বিষয়টি রেলরক্ষী বাহিনীর নজরে আসে। রেলরক্ষী বাহিনীর এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘এর আগে প্রচুর পরিমাণে রুপোর বাট পাচার করা হতো। কিন্তু সোনার বিস্কুট পাচারের বিষয়টি সামনে আসতেই আমরা সতর্কতা বাড়িয়ে দিয়েছি।’’ কিন্তু এর মধ্যেই রেল পুলিশের এক অফিসারের কাছে গুয়াহাটি থেকে আসা ফোনে ফের নতুন করে চিন্তার খোরাক মেলে। রেল পুলিশ সূত্রে খবর, ওই অফিসারের এক পুরনো ‘সোর্স’ তাঁকে ফোন করে জানান, এক কাপড়ের ব্যবসায়ী গুয়াহাটি থেকে দামি কাপড় ভর্তি পার্সেল হাওড়ায় পাঠানোর সময় তার ভিতরে দু’কেজি সোনা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই কাপড় পার্সেল থেকে উধাও হয়ে যাওয়ায় কয়েক কোটি টাকার সোনাও উধাও।

হাওড়ার ডিআরএম মনু গোয়েল বলেন, ‘‘আমার কাছেও এই স্টেশন থেকে সোনার বিস্কুট ও গাঁজা উদ্ধারের অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি রেলের আধিকারিকদের জানিয়েছি।’’

এখন হাওড়া স্টেশন যে সোনা ও গাঁজা পাচারকারীদের কাছে কার্যত ‘নিরাপদ করিডর’ হয়ে গিয়েছে তা মেনে নিয়েছেন হাওড়া জিআরপি-র এক পদস্থ কর্তা।
তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবারই এক ব্যক্তিকে অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস থেকে ২ কেজি সোনা সমেত গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রায় প্রতি দিনই গুয়াহাটি-আজিমগঞ্জ পর্যন্ত ট্রেনে করে প্রচুর পরিমাণ গাঁজা আসছে। তার পরে সেই গাঁজা সড়কপথে কাটোয়া হয়ে শহরে ঢুকছে বলে আমরা খবর পেয়েছি।’’

ওই পুলিশকর্তা আরও জানান, হাওড়া স্টেশনের নতুন কমপ্লেক্সে ওডিশা থেকে আসা ট্রেনে বহু বার গাঁজা ধরা পড়েছে। তবে বহু ক্ষেত্রেই মহিলারা তাঁদের ব্যাগের আড়ালে গাঁজা নিয়ে আসায় সব সময় তল্লাশি করা সম্ভব হয় না।

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah Station Gold Trafficking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy