ছবি: সংগৃহীত
এডিস মশার প্রজাতি প্রায় হাজার খানেক। তার মধ্যে একটি প্রজাতি, এডিস ইজিপ্টাই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কলকাতায়। তবে গ্রামীণ এলাকায় দেখা মেলে এডিস অ্যালবোপিকটাসের। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শহরের গাছগাছালি ভরা এলাকায় দ্বিতীয় প্রজাতির অস্তিত্বও। অ্যানোফিলিস মশার প্রজাতি সারা বিশ্বে ৪২৩টি। তার মধ্যে ১০টি প্রজাতি ভারতে ম্যালেরিয়ার বাহক। এর মধ্যে কলকাতায় একটি প্রজাতিরই (অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাই) রমরমা। একই ভাবে শহরে রয়েছে ফাইলেরিয়া রোগ ছড়ানো কিউলেক্সের একটি প্রজাতির দাপটও।
কিন্তু এদের আলাদা করে চেনে কে? মশার নানা ধরনের প্রজাতির লার্ভা চিহ্নিত করে, তাদের বাসস্থান খুঁজে বার করে তা ধ্বংস করার দক্ষ কর্মী কোথায়? মশা দমন অভিযানের ক্ষেত্রে সমস্যা হল, লার্ভা আলাদা আলাদা করে চেনা ও তাদের ধ্বংস করা। কলকাতা পুরসভা বাদে আশপাশের কোনও পুরসভারই লার্ভা চিনে তাদের আঁতুড়ঘর ধ্বংস করার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। ডেঙ্গির প্রকোপ নিয়ে
নাজেহাল কলকাতা পুরসভার কর্তারা এ বার মশা নিয়ে ভোগান্তি কিছুটা কমাতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠাল। যে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মশার লার্ভা কী, কী রকম তাদের দেখতে, কী ভাবে তাদের বিনাশ করা যায়, সে সম্পর্কে পড়শি পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবে কলকাতা।
হঠাৎ পড়শিদের প্রতি এমন সদয় হওয়ার কারণ? কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, সংলগ্ন পুরসভাগুলিতে মশা দমন অভিযান সঠিক পথে না চলায় ওই মশক বাহিনী শহরের সীমানার মধ্যে ঢুকে পড়ে রোগের আরও বাড়বাড়ন্ত ঘটাচ্ছে। যা নিয়ে এর আগেও সরব হয়েছিলেন তাঁরা। এমনকি, ধাপে ধাপে মহেশতলা, মধ্যমগ্রাম, বরাহনগর, বিধাননগর-সহ একাধিক পুরসভার কর্মীদের প্রশিক্ষণও দিয়েছিল পুরসভা। এ বার সেই পরিধি আরও বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
ডেপুটি মেয়র তথা মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘ডিসেম্বরের পর থেকে যে সময়টা শুরু হচ্ছে, তখন পড়শি পুরসভার কর্মীদের হাতেকলমে মশা চেনানোর প্রশিক্ষণ দিতে চাই।’’
পতঙ্গবিদ অমিয়কুমার হাটি বলছেন, ‘‘অভিযানে বেরোলাম অথচ মশার লার্ভা চিনলাম না, কোথায় মশা জন্মাতে পারে, তা জানলাম না। তাতে কিন্তু কোনও লাভ নেই।’’ আর এক পতঙ্গবিদ গৌতম চন্দ্র জানাচ্ছেন, এডিস, অ্যানোফিলিস ও কিউলেক্স মশার লার্ভার শারীরিক গড়ন তো আলাদাই। তাদের বাসস্থানও আলাদা। যেমন, অ্যানোফিলিসের লার্ভার শ্বাসনল (রেসপিরেটরি সাইফন) নেই। কিউলেক্স ও এডিস, দুই লার্ভার শ্বাসনল থাকলেও তাদের গঠনে পার্থক্য রয়েছে। এডিস লার্ভার শ্বাসনল বেঁটে ও মোটা। কিউলেক্সের লার্ভার শ্বাসনল সরু এবং লম্বা।
কিন্তু যে লার্ভাই মারা হোক না কেন, তাতে তো মশার উপদ্রব কমবে। তা হলে ক্ষতি কোথায়? পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, ক্ষতি রয়েছে। কারণ, ক্ষতিকর প্রজাতির বদলে অন্য প্রজাতির মশা মারলে ক্ষতিকর প্রজাতির মশারা
বাড়তি সুবিধা পায়। পতঙ্গবিদ কুন্তল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পরিণত মশারা খাবারের জন্য নিজেদের মধ্যে আন্তঃপ্রজাতি প্রতিযোগিতা করে থাকে। এখন যদি অভিযানে বেরিয়ে আর্মিজেরিস মশার লার্ভা মেরে আসেন স্বাস্থ্যকর্মীরা, তাতে হয়তো মশার কামড় কম খেতে হবে, কিন্তু খাবার সংগ্রহের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পেয়ে যাবে এডিস। তাতে তাদের আরও শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে।’’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, অনেক পুরসভাই ‘রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা’র কারণে অদক্ষ কর্মীদের নিয়োগ করে থাকে, যাঁদের মশা দমন অভিযানের ন্যূনতম অভিজ্ঞতাটুকু নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ডেঙ্গির মধ্যে কিন্তু রাজনীতিও ঢুকে পড়েছে। যার প্রভাব দেখা যায় অদক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে। তার জন্য শুধু ডেঙ্গিই নয়, সার্বিক স্বাস্থ্য পরিষেবার উপরেই প্রভাব পড়ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy