বড়বাজারে বিজেপি সমর্থকদের উল্লাস। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
একটা সময়ে ‘বড়বাজারের দল’ বলেই ডাকা হত তাদের। মঙ্গলবার কলকাতার পুরভোটের ফল প্রকাশের পরে সেই পুরনো তকমাই যেন ফিরে এসেছে।
ফলাফলের গতিপ্রকৃতি স্পষ্ট হওয়ার পরে এ দিন দুপুরে সবুজে সবুজ শহরের ছবি খানিক পাল্টাল আধভাঙা বিবেকানন্দ উড়ালপুলের নীচে। কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিটে, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি পার্টি অফিসের কাছে এসে অনেক দিন বাদে বিধানসভা ভোটের সময়কার আমেজ মিলল। গেরুয়া আবির উড়িয়ে তখন চলছে শীতকালীন হোলি। নাগাড়ে ছ’বার পুরভোটে বিজয়ী তথা প্রাক্তন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আমলের ডেপুটি মেয়র মীনাদেবী পুরোহিত গণনাকেন্দ্র থেকে ফিরলেন দুপুর আড়াইটে নাগাদ। তাঁর খুদে নাতনি বসুন্ধরার গলায় তখন ‘মীনা নানি জিন্দাবাদ’।
পাশের ওয়ার্ডের (২৩ নম্বর) বড়বাজার-সুলভ প্রায়ান্ধকার, নোংরা, সরু তস্য গলির ও-পারে তনসুখ লেনে বিজয়ী বিজেপির বিজয় ওঝার বাড়িতেও উৎসবের মেজাজ। কুলদেবী দধিমাতার (দুর্গারএকটি রাজস্থানি রূপ) মন্দিরে প্রণাম সেরে সপার্ষদ বিজয় তখন জয়ের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। ১৫৬৫৭ ভোটের মধ্যে মাত্র ৬৪৫৩ ভোট পড়েছিল। এই নিয়ে তৃতীয় বারের জয়ী বিজয়, সেই ভোটের থেকে ৪৩৫২ ভোট নিজের ঝুলিতে পুরেছেন। এই ওয়ার্ডেই একাধিক বুথে ছাপ্পার অভিযোগ উঠেছিল। তাঁর দল গোটা ভোটকে প্রহসন আখ্যা দিলেও বিজয়ের দাবি, ‘‘ছাপ্পা না-হলে আমার ব্যবধান আরও বাড়ত। আসলে মানুষ ভোট দিলে হার সহজে হয় না।’’ মীনাদেবীর ওয়ার্ডের সিআইটি পার্ক কমিউনিটি হলের মারপিটের ছবিও এলাকার বিজেপি কর্মকর্তাদের ফোনে ফোনে ঘুরছে। অভিষেক গুপ্ত নামে এক যুবক বেদম মার খাওয়ার অভিযোগ করছিলেন। জয়ের ব্যবধান কমলেও ২৩টির মধ্যে ১৯টি বুথে এগিয়ে থেকে জয়ী মীনার মতে, ‘‘শুধু ছাপ্পার জোরে হারানো সম্ভব নয়।’’
২২, ২৩ এবং ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে কিছু গোলমালের কথা ভোটের দিন তৃণমূলও মেনে নিয়েছিল। এই তিন ওয়ার্ডেই শাসক দল হেরেছে। এলাকার তৃণমূল নেতাদের দাবি, ভোটে অনিয়ম হলে কী
ভাবে এমন ফল হল? ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে পরাজিত বিজেপি প্রার্থী রাজীব সিংহের আবার অভিযোগ, দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তাঁর পাশে ছিলেন না। ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচ বারের কাউন্সিলর সুনীতা ঝাওয়ারের হেরে যাওয়াটা যে বিজেপির কাছে ধাক্কা, তা মানছেন নেতারা। ভোটের আগে শেষ মুহূর্তে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে আসা মহেশ শর্মা ওই ওয়ার্ডে জয় ছিনিয়েছেন। বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা আশুতোষ সিংহ বা রাজাকাটরার তাপস মুখোপাধ্যায়দের দাবি, করোনাকালে মানুষের পাশে থাকাই মহেশকে জিতিয়ে দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের অনেকেরই বক্তব্য, বড়বাজারের বড় সমস্যা হল, ভোটারেরা অনেকেই দূরে থাকেন। আর বড়বাজারের পুর পরিষেবা যাঁদের দরকার, সেই ব্যবসায়ীরা অনেকেই স্থানীয় ভোটার নন। তাপস বলছিলেন, ‘‘পার্কিং, গলি পরিষ্কার, নালা সাফাই— অনেক সমস্যায় কাউন্সিলরদের কোনও সাড়া মেলে না।’’
অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের আবহেও এই তল্লাটে ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে ফের জিতেছেন কংগ্রেসের সন্তোষ পাঠক। ভোটের দিন সন্তোষের সহযোগী, কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তীর মার খাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সেই অমিতাভ বলছিলেন, ‘‘গোলমালের বুথ, জৈন বিদ্যালয়ে সকালের অল্প লিড দেখেই বুঝে যাই, আমরা জিতছি। ওয়ার্ডের ফলাফল বলছে, এখনও মানুষ এখানে কংগ্রেসকেই চায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy