অঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ
উত্তর কলকাতার রাজনীতিতে সাধন পাণ্ডে বনাম পরেশ পালের লড়াই সর্বজনবিদিত। পাশাপাশি বিধানসভার বিধায়ক বলে প্রায়ই গোষ্ঠীকোন্দলের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের দুই নেতার বিরুদ্ধে। শীর্ষনেতৃত্ব হস্তক্ষেপ করেও তাঁদের বিবাদ সব সময়ে মেটাতে পারেন না। এ বার সেই পরেশকেই মানিকতলা বিধানসভার অধীন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। কিন্তু সাধন গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। তাঁর বিধানসভা এলাকায় পরেশের মনোনয়ন পাওয়ার কথা তাঁর কানে পৌঁছয়নি।
প্রকাশ্যে বিবাদ-বিসম্বাদ না হলেও সাধনপন্থীরা মনে মনে পরেশকে নিয়ে ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে রেখেছেন। তবে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে পরেশকে প্রার্থী করা নিয়ে উত্তর কলকাতা জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, মানিকতলা বিধানসভায় বিজেপি-র যেটুকু জোর, তা ওই ৩১ নম্বর ওয়ার্ডেই। বিজেপি-র ওই ওয়ার্ড জেতার স্বপ্ন ভেঙে দিতেই এককালের ‘দাপুটে’ বিধায়ক পরেশকে পুরভোটের ময়দানে নামানো হয়েছে। বিদায়ী কো-অর্ডিনেটর সুনন্দা গুহকে প্রার্থী করা হয়নি।
সাধন সুস্থ থাকলে দলের এই সিদ্ধান্ত কি মেনে নিতেন? এমন প্রশ্ন এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে মানিকতলা এলাকার তৃণমূলের অন্দরে। প্রার্থী হয়েই বিধায়ক পরেশ হুঙ্কার ছেড়েছেন, ‘‘কেউ রুখতে পারবে না! জিতব আমরাই!’’আর পরেশের প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি-র প্রার্থী নারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘সবকিছুই জনতার ওপর নির্ভর করে। আমরা জনতার উপর আস্থা রেখেই চলতে ভালবাসি। তাই মানুষ ভোট দিতে পারলে আমার ভাল ফল না করার কোনও কারণ নেই।’’তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রে মাত্র ৮২৬ ভোটে পিছিয়েছিল বিজেপি। আর ৩১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ভাল ভোটের ব্যবধানে এগিয়েছিল বিজেপি।
কলকাতা পুরসভার ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ৩১ এবং ৩২ নম্বর— এই আটটি ওয়ার্ড নিয়ে মানিকতলা বিধানসভা। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বিদায়ী কলকাতা পুরবোর্ডের পুরপ্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ।যিনি কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়রও ছিলেন।যিনি আবার কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত বিধায়কও বটে।বাকি ওয়ার্ডগুলিও তৃণমূলের দখলে। ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে আবার তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন উত্তর কলকাতা যুব তৃণমূলের সভাপতি শান্তিরঞ্জন কুণ্ডু। ২০১৫ সালের পুরভোটে তিনি হারিয়েছিলেন কলকাতা পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী রূপা বাগচীকে। সেই ওয়ার্ডে এ বার সিপিএমের প্রার্থী নতুন মুখ জয়দীপ ভট্টাচার্য। যিনি বলছেন, ‘‘করোনা অতিমারির সময় আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে যে পরিষেবা দিয়েছি, যেভাবে মানুষের পাশে থেকেছি, তার ভিত্তিতেই আমরা মানুষের সমর্থন চাইছি। সাধনবাবুর বিধানসভাহলেও কেন পুর পরিষবা খারাপ, তা-ও এলাকায় ঘুরলেই মানুষ বুঝতে পারবেন।’’
১২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী বদল হয়েছে তৃণমূলের। বিদায়ী কো-অর্ডিনেটর প্রণতি ভট্টাচার্যের বদলে প্রার্থী হয়েছেন মীনাক্ষি গঙ্গোপাধ্যায়। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ফের টিকিট পেয়েছেন প্রাক্তন জেলা তৃণমূল যুব সভাপতি তথা আইনজীবী অনিন্দ্যকিশোর রাউত। ১৪এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিদায়ী কো-অর্ডিনেটর অমল চক্রবর্তী এবং শুক্লা ভড়েরউপরেই আস্থা রেখেছে দল। কিন্তু ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী বদল করে সাধন সাহাকে সরিয়ে নতুন মুখ স্বপন দাসকে টিকিট দেওয়া হয়েছে।
বিধানসভা ভোটের ফলাফলের পর মানিকতলার সবক’টি ওয়ার্ডেই ধরে রাখার বিষয়ে আশাবাদী তৃণমূল।আশির দশক থেকে প্রতিবার মানিকতলার ভোটে নেই সাধন। তাই তাঁর কন্যা শ্রেয়া পাণ্ডেকে ওই বিধানসভার ‘আহ্বায়ক’করেছে তৃণমূল। ভোটের ময়দানে বাবার অনুপস্থিতি নিয়ে শ্রেয়ার বক্তব্য, ‘‘আমি কেন, মানিকতলার কর্মীরাই বাবাকে মিস্ করছেন। কিন্তু তিনি যেভাবে ভোট পরিচালনার কাজ করতেন, আমরাও সেভাবেই কাজ করছি। চ্যালেঞ্জ নিয়েছি আগের বারের থেকেও বেশি ভোটে এ বার দলের প্রার্থীদের জেতাব।যাতে সুস্থ হয়ে বাবা বাড়ি ফিরলে ফলাফল দেখে তিনিও খুশি হন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy