শনিবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য অফিসার, চিকিৎসক, প্রশাসকমণ্ডলীর ভাইস চেয়ারম্যান অতীন ঘোষের সঙ্গে বৈঠক করেন। নিজস্ব চিত্র।
জরুরি ভিত্তিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাগরিকদের স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা। থার্মাল স্ক্যানার, পালস অক্সিমিটার দিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করবেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। শারীরিক পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে তাঁদের রাখা হবে ‘সেফ হোমে’। কেউ করোনা আক্রান্ত হলে অথবা মারা গেলে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
কলকাতায় করোনা সংক্রমণের সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগে চিকিৎসকেরা। প্রতি দিনই আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। শনিবার কন্টেনমেন্ট জোনের সংখ্যা ২৪ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩২ হয়েছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১২ হাজার। বেশ কয়েকটি বাজারের ঝাঁপও পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে কলকাতা পুরসভার নোডাল অফিসার হিসাবে নিয়োগ করেছে রাজ্য সরকার। শনিবার আলাপনবাবু পুরসভার স্বাস্থ্য অফিসার, চিকিৎসক, প্রশাসকমণ্ডলীর ভাইস চেয়ারম্যান অতীন ঘোষের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে করোনা সংক্রমণ কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, সে বিষয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ সিদ্ধান্তও।
আজকের বৈঠকের পর আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাড়ি বাড়ি গিয়ে নজরদারি বাড়ানো হবে। স্বাস্থ্যকর্মীরা পালস অক্সিমিটার, থার্মাল স্ক্যানার নিয়ে যাবেন। শরীরের তাপমাত্রা দেখা হবে। পালস রেট, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রার বিষয়েও সেখান থেকে একটি আঁচ পাওয়া যাবে। যার ভিত্তিতে কোভিড-১৯ সন্দেহভাজন কি না, তা বোঝা যাবে।”
ওই আলোচনায় উঠে এসেছে, কলকাতার বস্তি এলাকায় সংক্রমণের হার কমছে। অন্য দিকে ফ্ল্যাট-বাড়িতে সংক্রমণের হার বেড়েছে। ২৮ জুন থেকে মাত্র ১৭৪টি সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে বস্তি এলাকায়। পাড়া এলাকায় বাড়িতে থাকেন, এমন জায়গায় ১ হাজার ২০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের মধ্যে ১ হাজার ৪০০টি আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।
শহর জুড়ে চলছে করোনা পরীক্ষা। ছবি- পিটিআই
আলাপনবাবু জানিয়েছেন, বস্তি এলাকায় সংক্রমণের মাত্রা কমেছে। ফ্ল্যাট-বাড়িতে সংক্রমণের হার বেড়েছে। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সব রকমের ব্যবস্থা নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা মতো গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে খুব শীঘ্রই ১৩০টি বেড চালু হয়ে যাবে। কিশোরভারতী স্টেডিয়ামে পূর্ত দফতরের কাজ চলছে। কসবায় আর একটি সেফ হোম চলবে ২০০ বেড নিয়ে। চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তাঁরা থাকবেন। গরিব মানুষ বিনা পয়সায় প্রতিষেধক ওষুধ পাবেন। রোগ ধরা পড়লে পুরসভার খরচে তাঁদের রাখা হবে। তাঁর কথায়, “অ্যাম্বল্যান্স আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। ১০টি অ্যাম্বুল্যান্স ছিলই, এ বার শহরের বিধায়ক এবং সাংসদদের যে অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে, তা পুরসভার কাজে লাগানো হবে।’’
শববাহী গাড়ির সংখ্যা যথেষ্ট নেই বলে অভিযোগ ওঠে। আলাপনবাবুর দাবি, ‘‘৫টি গাড়ি আগেই ছিল। আরও দুটোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বেসরকারি সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ করে ব্যবস্থা হয়েছে।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, শবদেহ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যথাযথ সম্মানের সঙ্গে শেষকৃতের ব্যবস্থাও করবে পুরসভা।
কলকাতায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচশো। সেই সঙ্গে গোটা রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণের হারও বাড়ছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্টসচিব আজ বলেন, “অতিমারি বাড়ছে। কারও হাতে নেই। বিজ্ঞানীরা চর্চা করছেন। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের শক্তি বাড়ানোর। দুর্বলতা কমানোর।”
আরও পড়ুন: রাজস্থানে ক্ষমতা বজায় রাখার সংখ্যা রয়েছে, দাবি গহলৌতের মন্ত্রীর
অন্য দিকে, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে কাজ করা ১৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তার ফলে আপাতত সুড়ঙ্গের কাজ বন্ধ হয়েছে। কেএমআরসিএল-এর অফিসেও তালা পড়েছে।
আজ সুরক্ষা বর্ম এবং স্বাস্থ্য নিরাপত্তার দাবিতে পুরসভার একাংশের কর্মীরা প্রতিবাদ জানান। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মী আরজিকর হাসপাতালে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর, ওই কর্মীরা এই দাবি জানান। কারও কারও মতে ওই কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। এ বিষয়ে পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আমরা একটি পরিবার। যেখানে যা প্রয়োজন হবে দেব। পুরসভার কর্মী মারা যাওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। শৌচালয়ে গিয়ে তিনি বুকে যন্ত্রণা অনুভব করার পরেই মারা গিয়েছেন। তাঁর লালারসের নমুনা নেওয়া হয়েছে। সেই রিপোর্ট পাওয়া যায়নি এখনও।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy