Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সজলের বাড়িতে ক্ষোভের মুখে মেট্রো

গত শনিবার ভিড় মেট্রোয় ওঠার সময়ে দরজায় হাত আটকে যায় সজলবাবুর। মেট্রোর দরজায় ঝুলে ঝুলে যেতে গিয়ে পড়ে মারা যান কসবার ওই বাসিন্দা। শীতলা মন্দিরের কাছে বাড়িতে মঙ্গলবার সজলবাবুর পারলৌকিক কাজ হয়।

তৎপর: বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশনে যাত্রীকে শেষ মুহূর্তে ঠেলে কামরায় ঢুকিয়ে দিচ্ছেন এক আরপিএফ কর্মী।  ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

তৎপর: বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশনে যাত্রীকে শেষ মুহূর্তে ঠেলে কামরায় ঢুকিয়ে দিচ্ছেন এক আরপিএফ কর্মী। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০২:৫৪
Share: Save:

অন্ত্যেষ্টিতে আসেননি। কিন্তু পারলৌকিক কাজের দিন মেট্রো দুর্ঘটনায় মৃত সজলকুমার কাঞ্জিলালের বাড়িতে পৌঁছলেন মেট্রোর পদস্থ কর্তারা। সামনে মেট্রোকর্তাদের পেয়ে একপ্রস্ত ক্ষোভও উগরে দিলেন সজলবাবুর পরিবারের লোকজন। এমনকি সজলবাবুর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হিসেবে মেট্রোর কাছে চাকরির দাবিও করা হয়। তবে মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক (সিপিআরও) ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় সজলবাবুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে জানান, আপাতত দুর্ঘটনার তদন্ত চলছে। তার পরেই ক্ষতিপূরণের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হবে।

গত শনিবার ভিড় মেট্রোয় ওঠার সময়ে দরজায় হাত আটকে যায় সজলবাবুর। মেট্রোর দরজায় ঝুলে ঝুলে যেতে গিয়ে পড়ে মারা যান কসবার ওই বাসিন্দা। শীতলা মন্দিরের কাছে বাড়িতে মঙ্গলবার সজলবাবুর পারলৌকিক কাজ হয়। তাঁর পরিবারের সঙ্গে সেখানে দেখা করতে যায় ইন্দ্রাণী-সহ মেট্রোর দশ সদস্যের একটি দল। সেই দলে ছিলেন মেট্রোর চিফ অপারেশনস্‌ ম্যানেজার সাত্যকি নাথ, পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনের ম্যানেজারের মতো অনেকেই। দুর্ঘটনার দিন তাঁদের কয়েক জনই সজলবাবুর দেহ সুড়ঙ্গ থেকে তুলে এনেছিলেন।

তাঁদের সকলকে একসঙ্গে সামনে পেয়ে এ দিন সজলবাবুর আত্মীয়েরা ক্ষোভ ও অভিযোগ জানান। কেন দুর্ঘটনার পরে মেট্রোর তরফে তাঁদের কাছে কেউ সমবেদনা জানাতে আসেননি, সে প্রশ্নও তোলা হয়। ঘটনার তিন দিন পরে, মঙ্গলবার সজলবাবুর বাড়িতে গিয়ে সেই ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করলেন মেট্রোকর্তারা।

মঙ্গলবার কসবার বাড়িতে সজলকুমার কাঞ্জিলালের পারলৌকিক কাজ সম্পন্ন হয়।

এ দিন দুপুর একটার পরে সজলবাবুর পারলৌকিক কাজ চলার সময়েই তাঁর বাড়িতে যান মেট্রোর প্রতিনিধিরা। সজলবাবুর আত্মীয়েরা তাঁদের বাড়ির অন্য একটি ঘরে নিয়ে যান। বাড়িতে তখন সংবাদমাধ্যমেরও ভিড়। মেট্রোর তরফে সজলবাবুর ছবিতে মালা দেওয়া হয়। মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কথা বলেন সজলবাবুর মামাতো ভাই রাজকুমার মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী শর্মিষ্ঠা ও সজলবাবুর জামাইবাবু সুব্রতকুমার দাসের সঙ্গে। সজলবাবু কী করতেন, তা-ও জানতে চান ইন্দ্রাণী। তাঁকে জানানো হয়, রবীন্দ্র সদন চত্বরে লিটল ম্যাগাজ়িন বিক্রি করে মেট্রোয় চেপে বাড়ি ফিরতেন সজলবাবু।

শর্মিষ্ঠা এবং সুব্রত মেট্রোর প্রতিনিধিদের বলেন, ‘‘প্রতিদিনই আমরা প্ল্যাটফর্মে নিরাপত্তারক্ষী দেখি। কিন্তু সে দিন তাঁরা ছিলেন না। এক জন মানুষ বাইরে ঝুলছেন আর ট্রেন চলছে, ভাবা যায় না।’’ তবে সুব্রতবাবু জানান, ওই দুর্ঘটনায় যেমন তাঁদেরও ক্ষতি হয়েছে, তেমনই সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে মেট্রোর। এ সব কথা শুনে চুপ করে থাকতেই দেখা যায় মেট্রোর আধিকারিকদের। সজলবাবুর ভ্রাতৃবধূ শর্মিষ্ঠা সিপিআরও-কে জানান, তাঁদের পরিবার দুঃস্থ। তাই পরিবারের এক জনকে যেন চাকরি দেওয়া হয়।

তৎপর: বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশনে যাত্রীকে শেষ মুহূর্তে ঠেলে কামরায় ঢুকিয়ে দিচ্ছেন এক আরপিএফ কর্মী। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

সেই দাবি শুনে অবশ্য সিপিআরও ইন্দ্রাণী জানান, কার গাফিলতিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে তার তদন্ত চলছে। ট্রেনের ভিতরে থাকা লাল বোতাম টেপা সত্ত্বেও সেটি কাজ করেছিল কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে।

কুড়ি মিনিটের কিছু বেশি সময় থাকার পরে সজলবাবুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান মেট্রোর আধিকারিকেরা। তবে তাঁরা জানান, সমন্বয়ের অভাবে তাঁরা শ্মশানে গিয়ে সমবেদনা জানাতে পারেননি। পরে সিপিআরও বলেন, ‘‘মৃতের পরিবারের পাশে দাঁড়াতেই আমরা এসেছিলাম। বৃহস্পতিবার থেকে তদন্ত শুরু হবে। তদন্ত শেষ হলে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ভাবা হবে।’’

তবে এ সবে খুশি নন সজলবাবুর ভাইয়ের স্ত্রী। শর্মিষ্ঠা বলেন, ‘‘আমরা এক জনের চাকরির কথা বলেছি। তা নিয়ে মেট্রো কিছু বলেনি।’’ অন্য দিকে সুব্রতের কথায়, ‘‘শেষকৃত্যের দিন আসবে বলেও মেট্রোর তরফে কেউ আসেননি। আজ এলেও ক্ষতিপূরণ বা নিজেদের দোষ নিয়ে ওঁরা চুপ ছিলেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death Sajal Kanjilal Kolkata Metro Park Street
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy