মারফি, ফিলিপস, বুশ বা টেলেফানকেন… নামগুলো শুনলেই খুলে যায় স্মৃতির ঝাঁপি। কখনও মনে পড়ে মারফির সেই ফুলকো-গাল আঙুল ছোঁয়ানো বাচ্চাটাকে, যার ছবি দিয়ে তৈরি ক্যালেন্ডার আর পোস্টার দেখা যেত সেলুন থেকে ডাক্তারের চেম্বারের দেওয়ালে। অথবা ইন্দো-চিন যুদ্ধের সময় ফিলিপস রেডিয়োর বিজ্ঞাপন ‘গুজব নয়, অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো শুনুন’। কাঠের বাক্স, মাথায় অ্যান্টেনা, প্রতি বছর নীল রঙের লাইসেন্সে পোস্ট অফিস থেকে স্ট্যাম্প করিয়ে নেওয়া। এখনও মহালয়ার ভোরে ‘বাজল তোমার আলোর বেণু’ শুনলেই মনে পড়ে পুরনো রেডিয়োর কথা। আর বাড়ির পুরনো রেডিয়ো সারাইয়ের দরকার হলেই ঢুঁ মারতে হয় কুমোরটুলিতে। বনমালী সরকার স্ট্রিটের অমিতরঞ্জন কর্মকারের চিলতে দোকানই সম্ভবত একমাত্র জায়গা, যেখানে গত প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে পুরনো রেডিয়ো সারাই হচ্ছে। পুজোর আগে এই ক’দিন কুমোরটুলির তাঁর ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে।
সে সময় জীবনের ছোট-বড় শখ পূরণের একমাত্র সুযোগ ছিল পুজোর বাজার। অনেক বাড়িতেই পুজোর সময় ঘটা করে রেডিয়ো কেনা হত। এক বাড়িতে রেডিয়ো বাজলে আরামে শোনা যেত দশ বাড়ি থেকে। মহালয়ার ভোরেও পরের বাড়ির রেডিয়ো শোনায় গ্লানি অনুভব করতেন না মানুষ। সত্তরের দশকের শুরু থেকে এল কিস্তিতে রেডিয়ো কেনার সুবিধে। ফলে আরও বেশি মানুষের নাগালে এল রেডিয়ো। হাজার চুরাশির মা উপন্যাসে এক আটপৌরে পাড়ার বর্ণনায় ধোবিখানা, হোমিয়োপ্যাথি দোকানের মতো রেডিয়ো মেরামতের দোকানের উল্লেখও পাওয়া যায়।
সময় বদলেছে। এখন হাতে গোনা কয়েক জনই মোটে এ কাজে যুক্ত। অমিতবাবুর গর্বের স্মৃতি— তাঁর হাতে দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, পঙ্কজ রায় বা বসন্ত চৌধুরীর রেডিয়ো মেরামত হয়েছে, আবার তিন পুরুষের মালিকানায় থাকা রেডিয়ো এখনও চালু আছে তাঁর হাতের ছোঁয়ায়। তবে পুরনো লোকেদের দোকানে আসা কমছে। অন্য দিকে ক্যামেরা নিয়ে কুমোরটুলিতে ছবি তুলতে আসা এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা আবার বাপ-ঠাকুরদার স্মৃতিমাখা যন্ত্রগুলি সচল রাখার জন্য অমিতবাবুর কাছে আসেন। যেমন ক’বছর আগে এক ইউটিউবার সত্তরের দশকে মা-বাবার বিয়েতে উপহার পাওয়া রেডিয়ো সারিয়ে সেই অভিজ্ঞতার ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন সমাজমাধ্যমে। ঐতিহ্য আর নিজের শিকড়ের প্রতি একটা টান যে এ প্রজন্মের রয়ে গিয়েছে এখনও, এ তারই প্রমাণ। অমিতবাবুরা তাই জোর দিয়েই বলতে পারেন, প্রযুক্তি বদলাতে পারে কিন্তু বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’-র মতোই, আমাদের জীবন থেকে রেডিয়োও একেবারে হারিয়ে যাবে না। কাল মহালয়া, পুজো এসে গেল... ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ে যাবে রেডিয়োর কথা। ছবি: অমিতাভ পুরকায়স্থ
আলোর বেণু
গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনের উল্টো দিকে দুই মিষ্টির দোকান, মাঝের রাস্তার এক কোণের বাড়িতে থাকতেন তিনি। কাল মহালয়া, রেডিয়োয় বেজে উঠবে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র গান ‘বাজল তোমার আলোর বেণু’, গেয়েছিলেন সুপ্রীতি ঘোষ (ছবিতে)। মূলত রবীন্দ্রনাথের গানে নাম পেলেও জনপ্রিয়তায় সব-ছাপানো গান ওঁর এটিই, গাইতে হয়েছে ভরা গ্রীষ্ম বা শীতেও। কাকা নৃপেন্দ্রনাথ মজুমদার বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ, বাড়ির ঘরোয়া আসরে সুপ্রীতি পরিচিত হতে পেরেছিলেন পঙ্কজকুমার বা হেমন্তবাবুর মতো শিল্পীর সঙ্গে। সেই সূত্রেই আকাশবাণীতে পা রাখা, অগ্রযাত্রারও শুরু। প্লেব্যাক, বেসিক গানে তিনশোরও বেশি রেকর্ড। প্রয়াত ২০০৯ সালে, গত ২৮ অগস্ট শতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে এই শিল্পীর। গ্যালারি গোল্ডের এক অনুষ্ঠানে স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত ও শকুন্তলা বড়ুয়া স্মরণ করলেন তাঁকে। শ্রদ্ধা এই শহরেরও।
স্বীকৃতি
জীবনপথে মানুষকে সবচেয়ে বেশি প্রাণিত করে এসেছে স্বাধীনতার বোধ। সেই বোধেরই এক স্বতন্ত্র আয়োজন হিসেবে ‘মধ্যরাত্রে স্বাধীনতা দিবস’ পালনকে আপন করে নিচ্ছে কলকাতা। এই ধারা শুরু হয়েছিল উত্তর কলকাতায় ১৯৮৩ সালে, পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের হাতিবাগানে, স্থানীয় কাউন্সিলর অতীন ঘোষের পরিকল্পনায়। সবিতাব্রত দত্তের ‘বন্দে মাতরম্’ সঙ্গীত দিয়ে সে বছর যাত্রা শুরু, নিরবচ্ছিন্ন চলতে চলতে এ বার চল্লিশে পা। স্বাধীনতার পঁচাত্তর পূর্তির বছরে ভারতীয় ডাক বিভাগ ওই অনুষ্ঠানকে বিশেষ স্বীকৃতি দিয়ে প্রকাশ করেছে স্মারক কভার। সেই উপলক্ষে সম্প্রতি জিপিও-র রোটান্ডায় হয়ে গেল একটি অনুষ্ঠান, ছিলেন কলকাতার পোস্টমাস্টার জেনারেল শশী কুজুর, দুই সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুখেন্দুশেখর রায়, কলকাতার বর্তমান ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ-সহ বিশিষ্টজন।
শেষ বিচার
নুরেমবার্গে মিত্র শক্তির ট্রাইবুনাল। ‘প্যালেস অব জাস্টিস’-এ নাৎসি নেতাদের বিচার হল, পরে আমেরিকার মিলিটারি কোর্ট বসাল বিচার— নাৎসি বিচারকদের। এমিল হান, হফস্টেটার ও আর্নেস্ট জেনিং, তিন বিচারক কাঠগড়ায়; শেষোক্ত জন আলোচনার কেন্দ্রে: বিরাট পণ্ডিত, বিবেকবান অথচ হিটলারের আদৃত, সাক্ষী নাৎসি কুকীর্তির, এখন বুঝেছেন জীবনের ভুল। তবু, ভুল কি শুধুই বিজিতের? স্বৈরাচারীর ক্ষমতা দখলে মিশে থাকে দেশের বাইরেরও দেশ, লাভ-ক্ষতির বিস্তর সমীকরণ। এই নিয়েই বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘প্রাচ্য’-র নতুন নাটক দায় আমাদেরও, সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায়ের রচনায়, দেবশঙ্কর হালদার সুপ্রিয় দত্ত বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী ও বিপ্লবেরও অভিনয়ে— ৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়, অ্যাকাডেমি মঞ্চে।
সুরমগন
‘ত্রিবেণী তীর্থপথে কে গাহিল গান’, মনে করিয়ে দেয় পণ্ডিত চিন্ময় লাহিড়ীকে। খেয়াল গানে তো বটেই, বাংলা রাগপ্রধান গানেও ছিলেন নক্ষত্রসম। এই ধারায় বহু বাংলা গান তৈরি তাঁর হাত ধরে, শ্যামল গুপ্ত গোপাল দাশগুপ্ত কমলেশ বসু নারায়ণ সেন অনিল ভট্টাচার্য থেকে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়। রাগ যোগিয়াতে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় গীত ‘যামিনী হল যে ভোর’, বাগেশ্রীেত সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ‘কথা না বলে’, মারুবেহাগে শ্যামল মিত্রের ‘ফাগুন এল তুমি এলে না’, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ‘ফুলের দোলায় দোলে শ্যামরাই’, এমন বহু গানের সুরস্রষ্টা তিনি। সেই ধারাকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে ‘মগন মন্দির’, শিল্পী-পুত্র শ্যামল লাহিড়ী ও পুত্রবধূ মন্দিরা লাহিড়ীর উদ্যোগে। আগামী কাল, ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় রবীন্দ্র সদনে অনুষ্ঠান ‘চিন্ময় লাহিড়ী ও বাংলা রাগপ্রধান গান’, মগন মন্দিরের প্রবীণ নবীন শিল্পী-নিবেদনে।
প্রকৃতিপ্রেমী
প্রকৃতিকে ভালবেসে সম্প্রতি আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল পার্ক সিরিজ়ে ভাষ্য দিয়েছেন বারাক ওবামা। প্রকৃতি, বন্যপ্রাণের টানে পাগল হওয়া এমন মানুষ কম নন— এই বাংলায়, এ শহরেও। মুখ্যত অভিনেতা হিসেবে সবাই চেনেন সব্যসাচী চক্রবর্তীকে— তিনি, পুত্র গৌরব ও বিভিন্ন বয়স ও পেশার এক বন্ধু-দল দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় গিয়েছেন বার বার— আদিম অরণ্যে, বরফঢাকা পাহাড়ে; নীল সমুদ্রে দেখেছেন ঝড়ের তাণ্ডব, পা পুড়েছে তপ্ত মরুভূমিতে। নানা মুহূর্ত ধরে রেখেছেন ক্যামেরায়, তারই বাছাই কিছু ছবি নিয়ে প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর স্থিরচিত্র প্রদর্শনী চলছে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সাউথ গ্যালারিতে, ২১ সেপ্টেম্বর থেকে। ‘এক দল প্রকৃতিপ্রেমীর উপস্থাপনা’ চলবে ২৬ তারিখ পর্যন্ত, দুপুর ৩টে থেকে রাত ৮টা।
ঐতিহ্য স্মরণে
সপ্তদশ শতকের শেষ থেকেই বাংলায় ডেনিশ এশিয়াটিক কোম্পানির স্থায়ী বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা সফল হয় ১৭৫৫ সালে। উপনিবেশের নাম রাখা নয় ফ্রেডরিকনগর, রাজা পঞ্চম ফ্রেডরিকের সম্মানে। পরবর্তী ৯০ বছরের মধ্যে এই কেন্দ্র প্রথমে সরাসরি ডেনমার্কের রাজার, পরে আসে ইংরেজদের নিয়ন্ত্রণে। সে-ই আজকের শ্রীরামপুর। শিল্প বাণিজ্য ছাড়াও, শিক্ষা, সংস্কৃতিতে দেশ গড়ায় শ্রীরামপুরের উল্লেখযোগ্য অবদান নিয়ে কাজ করছেন অনেকে, এ বছরের শেষে শ্রীরামপুরের ইতিহাস-ভিত্তিক একটি বই প্রকাশের পরিকল্পনা করেছে গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারি। তারই নান্দীমুখ শ্রীরামপুর: অব হিস্ট্রি অ্যান্ড হেরিটেজ নামের প্রদর্শনী, ঔপনিবেশিক বিভিন্ন ছবিতে (সঙ্গে একটি) শ্রীরামপুরের সমৃদ্ধ ইতিহাস। চলছে গ্যালারির ৩৩এ যতীন দাস রোডের ঠিকানায়। ১৬ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করেছেন ভারতে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত, চলবে ৩০ তারিখ অবধি, রবি ও ছুটির দিন বাদে সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা।
১৭৫ বছরে
ছাত্রজীবনেই তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে তুখোড় ফল, প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক তাঁকে এনে দেয় প্রথম ভারতীয় ‘র্যাংলার’ সম্মান। বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে মিলন মন্দির (ফেডারেশন হল)-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অন্তিমশয্যায় শায়িত আনন্দমোহন বসুর (১৮৪৭-১৯০৬)অভিভাষণ স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গযুবকদের প্রেরণা জুগিয়েছিল। কৃতী ব্যারিস্টার, সমাজসংস্কারক ও দেশনেতা আনন্দমোহন বসুর জন্মদিন ছিল গতকাল ২৩ সেপ্টেম্বর, তাঁর জন্মের ১৭৫ বছর পূর্ণ হল। জন্মদিনে আনন্দমোহন বসু: জীবন ও কর্ম স্মারকগ্রন্থ (ছবিতে প্রচ্ছদ) প্রকাশ করল সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ। শিবনাথ শাস্ত্রী, দ্বারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ও আনন্দমোহনের পরিবারের সদস্যদেরও লেখায় সমৃদ্ধ গ্রন্থটি, লিখেছেন এ কালের গবেষক ও প্রাবন্ধিকরাও। অভ্র বসু ও মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় আলোচনা করলেন সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের অনুষ্ঠানে।
স্মৃতিমেদুর
রাতে ঘুম না এলে খাটে শুয়ে ভাবতেন গতায়ু পরিচিতজনের কথা। কলমে তা-ই হয়ে উঠেছিল যাপিত জীবনের উন্মোচন, ঠিকানা: খাট নামে সম্প্রতি প্রকাশিত গ্রন্থাকারে (একুশ শতক)। ঠিকানা তো তাঁর রবীন্দ্রনাথও, নিজের লেখা ও সম্পাদিত বইয়ের অধিকাংশই রবীন্দ্রবিষয়ক; উচ্ছ্বসিত, বিশ্বস্ত রবীন্দ্রভক্তকে দাঁড় করিয়ে দিতেন সত্য ও তথ্যের আয়নার সামনে। অধ্যাপক, কেন্দ্রীয় সরকারি বা জনসংযোগ আধিকারিকের পরিচয় পেরিয়ে বহুবিস্তারী লেখকসত্তাই স্বতন্ত্র করেছিল নিত্যপ্রিয় ঘোষকে (১৯৩৪-২০০২)। প্রয়াত হলেন ৭ সেপ্টেম্বর, রবীন্দ্রতীর্থে গত ১৬ সেপ্টেম্বর তাঁকে স্মরণ করলেন আশীষ লাহিড়ী চিন্ময় গুহ পঙ্কজ সাহা জ্যোতির্ময় পালচৌধুরী-সহ কাছের মানুষেরা। তাঁর প্রিয় কয়েকটি গানে, কবিতায় মেদুর হয়ে উঠেছিল বিধুর সন্ধ্যা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy