Advertisement
E-Paper

যন্ত্র দিয়ে পুলিশি পরীক্ষা শুধু রাতে, দিনে কে রুখবে মত্ত চালকদের 

ফলে প্রশ্ন উঠছে, বর্ষশেষের উৎসব শেষ করে ভোরে বা সকালের দিকে বাড়ি ফেরা মত্ত চালকদের আটকাবে কে? সেই চালকদের দৌরাত্ম্যের জেরে দুর্ঘটনা হলে তার দায় কে নেবে?

মত্ত চালকদের আটকাবে কে?

মত্ত চালকদের আটকাবে কে? —প্রতীকী চিত্র।

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৪
Share
Save

রাতের বজ্র আঁটুনি দিনের আলোয় যেন ফস্কা গেরো! রাতপথে মত্ত চালকদের ধরতে ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার হাতে পুলিশি বন্দোবস্ত এই প্রবাদকেই মনে করাচ্ছে। রাতে মত্ত চালকদের চিহ্নিত করতে ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার নিয়ে পুলিশি পরীক্ষা চোখে পড়লেও দিনের ব্যস্ত সময়ে অথবা সকালে অন্তত তা চোখে পড়ে না বলেই অভিযোগ। ফলে প্রশ্ন উঠছে, বর্ষশেষের উৎসব শেষ করে ভোরে বা সকালের দিকে বাড়ি ফেরা মত্ত চালকদের আটকাবে কে? সেই চালকদের দৌরাত্ম্যের জেরে দুর্ঘটনা হলে তার দায় কে নেবে?

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ষশেষের উৎসবে রাস্তায় মত্ত চালকদের দৌরাত্ম্য আটকাতে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে শহরে। রাস্তায় অতিরিক্ত পুলিশ নামানোর পাশাপাশি, পার্ক স্ট্রিট-সহ শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গার জন্য পুলিশি বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও, শহরের ৫২টি মোড়ে চলছে নাকা তল্লাশি। তাতে গাড়ি থামিয়ে পরীক্ষার পাশাপাশি ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার দিয়ে চালকদের রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা পরীক্ষা করার পরে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, গোটা ডিসেম্বর জুড়ে পুলিশি এই নজরদারিতে প্রতিদিন ৬০-৭০ জন মত্ত চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মূলত সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এই বিধিভঙ্গ রুখতে পুলিশি নজরদারি সব থেকে বেশি নজরে পড়ছে।

বর্ষশেষের উৎসবকে কেন্দ্র করে এমনিতেই প্রতি বছর শহরের রাস্তায় ভিড় বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে জয়রাইডের প্রবণতাও। বাইক বা গাড়ি নিয়ে শহর দাপাতে দেখা যায় কমবয়সিদের। পার্ক স্ট্রিট সংলগ্ন রাস্তার পাশাপাশি ই এম বাইপাস, উল্টোডাঙা রোড, এ পি সি রোড-সহ একাধিক রাস্তায় গাড়ির দৌরাত্ম্য থাকে সব থেকে বেশি। রাত জেগে শহরের বিভিন্ন জায়গায় হুল্লোড়ের পরে ভোরে বা সকালের দিকে মত্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরতেও দেখা যায় অনেককে। শহরের সচেতন নাগরিকদের একাংশের যদিও অভিযোগ, রাতে মত্ত চালকদের ধরতে পুলিশি সক্রিয়তা দেখা গেলেও তা ভোরে বা সকালে সে ভাবে চোখে পড়ে না। দিনের বাকি সময়েও ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার হাতে পুলিশি সক্রিয়তা তুলনামূলক ভাবে কম থাকে। ফলে পুলিশের শুধু রাত-পাহারার নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। এক শহরবাসীর কথায়, ‘‘সারা রাত মত্ত অবস্থায় হুল্লোড়ের পরে সকালে বা ভোরে অনেককে বেপরোয়া গতিতে ফিরতে দেখা যায়। বছর শেষের এই সময়ে এমন প্রবণতা সব থেকে বেশি থাকে। ফলে প্রাতর্ভ্রমণ বা অন্যান্য কাজে রাস্তায় বার হওয়া দুষ্কর হয়।’’

২০২৩ সালের কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের বার্ষিক রিপোর্ট জানাচ্ছে, রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে শহরের রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটেছে সব থেকে বেশি। রাত ৯টা থেকে ১০টা— এই এক ঘণ্টাতেও দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রায় একই। দিনে বেলা ১২টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে সব থেকে বেশি পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ভোরে বা সকালের দিকে দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম হলেও তা আটকানো যায়নি। ফলে ওই সময়ে পুলিশের এই ‘গা-ছাড়া’ মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।

যদিও ট্র্যাফিক পুলিশের এক পদস্থ কর্তা ভোরে নজরদারিতে ঢিলেমির অভিযোগ মানতে চাননি। তবে দিনে নজরদারির ঢিলেমি কার্যত মেনে নিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘‘রাতে তো কড়া নজরদারি থাকে। ভোরেও একই ভাবে নজরদারি চলে। তবে মত্ত চালকদের ধরতে দিনেও যদি প্রয়োজন হয়, তা হলে ভেবে দেখা হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

police Lalbazar

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}