প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের ওপরেই কলকাতা পুরসভার জল দফতরের গাড়ি দাঁড়িয়ে পানীয় জল ভরা হয়। আর তাতেই আটকে থাকে রাস্তার এক দিকে অসংখ্য গাড়ি। রোজকার ঘটনা। বাধ্য হয়ে কলকাতা পুলিশ পুরসভাকে বছর দেড়েক আগেই ওই জায়গা পরিবর্তন করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা পুরসভাকে। পুলিশের নির্দেশ মেনেই পুরসভা গল্ফ গ্রিনে উদয়শঙ্কর সরণিতে ফাঁকা জায়গায় এই প্রকল্প স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও এখান থেকে পানীয় জল সমস্যার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েই গিয়েছে। ফলে, এই রাস্তায় ট্র্যাফিক সমস্যাও রয়েই গিয়েছে।
কলকাতা পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল বিভাস মাইতি বলেন, ‘‘আমরা ট্র্যাফিক পুলিশের কাছ থেকে এই ব্যাপারে চিঠি পেয়েছি। আনোয়ার শাহ রোডের জায়গা থেকে এই প্রকল্প সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কাজও প্রায় শেষ। তবে পানীয় জল সরবরাহের জন্য আরও কিছু দিন সময় লাগবে। কাজ চলছে।”
দক্ষিণ কলকাতায় বিভিন্ন জায়গায় যেখানে জলের চাপ অপেক্ষাকৃত কম বা কোনও প্রযুক্তিগত কারণে জল সরবরাহ স্বাভাবিক নয়, সেখানে জল সরবরাহ করার জন্য পুরসভা আনোয়ার শাহ রোডের ধারে একটি শপিং মলের পাশেই গভীর নলকূপ থেকে পুরসভার জল সরবরাহের গাড়িতে পানীয় জল তোলা হয়। জরুরি অবস্থা না থাকলেও রোজই সকালে এবং বিকেল বেলা গাড়িগুলিতে জল ভরা হয়। সেই সময়ে রাস্তার ধারে এই গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার ফলে সার সার গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। অসুবিধা হয় রাস্তা পারাপারেরও। রাস্তায় জল পড়ে রাস্তাও ভিজে যায়। ফলে, গাড়ি জোরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও মুশকিল হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা শান্তনু মন্ডল বলেন, “এই রাস্তার ওপরেই একটি শপিং মলের সামনে থেকে লর্ডসের মোড় পর্যন্ত যেতে এই সময় সময় লাগে প্রায় আধঘন্টা। এমনিতেই এই রাস্তা জনবহুল। যানজটও প্রচুর হয়। তারপর পুরসভার এই গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাস্তায় জল তোলার ফলে অবস্থা সঙ্গীন হয়।”
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক আধিকারিক জানান, “ এই রাস্তায় যানজটের সমস্যা খুবই রয়েছে। এই ব্যাপারে পুরসভাকে জানানো হয়েছিল অনেক দিন আগেই। এখনও পুরোপুরি সমস্যার সমাধান হয়নি। পুরসভা থেকে এই বিষয়ে কিছু সমস্যা চেয়েছে।”
কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত বলেন, “জল তোলার জায়গা স্থানান্তরিত করার ব্যাপারে বরোতে আলোচনা হয়েছিল অনেক দিন আগেই। জায়গা না ঠিক করে এখান থেকে গাড়িগুলি সরানো সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে, গল্ফ গ্রিনের কাছে জায়গা পাওয়া যায়। সেখানে কাজও প্রায় শেষ। কিন্তু নতুন জায়গা থেকে যে জল তোলা হচ্ছে, তা পানীয় জলের জন্য ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তবে, প্রয়োজনে অন্যান্য কাজে জল নেওয়ার জন্য উদয়শঙ্কর রোডের এই নলকুপ ইতিমধ্যেই ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রযুক্তিগত কিছু কাজ বাকি আছে। সেই কাজ শেষ হলেই আনোয়ার শাহ রোড থেকে প্রকল্প পুরোপুরি সরিয়ে আনা হবে।’’
ট্র্যাফিক দফতরের এক আধিকারিক জানান, আনোয়ার শাহ রোডে ট্র্যাফিক দফতর একটি সমীক্ষা করে দেখেছে, এই রাস্তার ওপরে একটি শপিং মল হওয়ার পরেই এলাকায় যানজট বেড়েছে। প্রচুর মানুষ এই শপিং মলে গাড়ি নিয়ে আসেন। এ ছাড়াও, আনোয়ার শাহ রোডের ওপরেই অনেক অফিস হয়েছে। আনোয়ার শাহ রোড কানেক্টর খুলে যাওয়ার ফলেও এই রাস্তায় চলা গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। তার ফলে যানজটও অনেক বেড়ে গিয়েছে।
বামফ্রন্ট বোর্ডের আমলেই কলকাতা পুরসভা আনোয়ার শাহ রোডের ওপরে শপিং মলের কাছেই একটি উড়ালপুল নির্মাণের পরিকল্পনা করে। পরে অবশ্য এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে রাস্তার যানজট থেকেই গিয়েছে।
বিভাসবাবু জানান, ‘‘যত দিন না পানীয় জল নেওয়া পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে, তত দিন পুরসভা বেশি জলের গাড়ি এখানে আনছে না। শহরের অন্যান্য জায়গা থেকেও পানীয় জল ভরে তা সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে, কিছু জলের গাড়ি সকাল, বিকেল সব সময়ই থাকছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy