Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

‘চাপে’ পড়ে নির্মাণস্থলের দূষণে নজর পুরসভার

সম্প্রতি পুরসভায় এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, রাস্তায় বেআইনি ভাবে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখলে সংশ্লিষ্ট নির্মাতা সংস্থা বা বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

রাস্তার একাংশ দখল করে ফেলে রাখা হয়েছে পাথরকুচি। সোমবার, দমদমের রটকলে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

রাস্তার একাংশ দখল করে ফেলে রাখা হয়েছে পাথরকুচি। সোমবার, দমদমের রটকলে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৯ ০২:০৪
Share: Save:

নির্মাণ সামগ্রী থেকে দূষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কথা হচ্ছে। এমনকি বায়ু দূষণের পিছনেও অন্যতম কারণ যে এই নির্মাণ সামগ্রীর দূষণ, একাধিক রিপোর্টে ইতিমধ্যেই তা প্রমাণিত। কিন্তু সব জানা সত্ত্বেও এত দিন কলকাতা পুরসভা চোখ বুজে ছিল বলে অভিযোগ। জাতীয় পরিবেশ আদালতের ‘চাপে’ পড়ে শেষ পর্যন্ত নির্মাণস্থলের দূষণ ঠেকাতে তৎপর হলেন পুর কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি পুরসভায় এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, রাস্তায় বেআইনি ভাবে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখলে সংশ্লিষ্ট নির্মাতা সংস্থা বা বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আইনি ঝামেলার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট নির্মাতাকে পুলিশের জেরার মুখেও পড়তে হতে পারে। কারণ, শহরের কোথায় কোথায় রাস্তা জুড়ে নির্মাণ সামগ্রী পড়ে রয়েছে, তা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা হবে। সমীক্ষা দলে থাকবেন পুরসভার বিল্ডিং দফতর, লাইসেন্স দফতর, জঞ্জাল সাফাই দফতরের প্রতিনিধিরা এবং স্থানীয় থানার পুলিশ।

পুর কর্তৃপক্ষের তরফে বিল্ডিং দফতরের ডিরেক্টর জেনারেলকে নির্মাণস্থলের দূষণ ঠেকাতে নিয়মিত নজরদারি চালানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোথাও অনিয়ম চোখে পড়লে তা বন্ধ করতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, পুর কমিশনার ও মেয়রের কাছে সেই সংক্রান্ত রিপোর্টও (অ্যাকশন টেক্‌ন রিপোর্ট) জমা দিতে হবে। যদিও সংশয় তৈরি হয়েছে নিয়মিত নজরদারি চালানোর প্রক্রিয়া নিয়েই। কারণ পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এটা নতুন নয়। এর আগেও নির্মাণের কাজ চলাকালীন নির্মাণস্থল পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা, ইমারতি দ্রব্য ঢেকে রাখা, সেই জিনিসপত্র লরিতে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার সময়ে ঢেকে রাখা-সহ একগুচ্ছ নিদান দিয়েছিল পুরসভা। কিন্তু কোনওটিই বাস্তবায়িত হয়নি। এর কারণ ব্যাখ্যা করে পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, শহর ঘুরে কোন কোন রাস্তায় নির্মাণ সামগ্রী ডাঁই হয়ে পড়ে আছে, তা দেখার পরিকাঠামো পুরসভার নেই। এক পুরকর্তা বলেন, ‘‘অত লোক কোথায় পুরসভার? তা ছাড়া পুরসভার শুধু তো এই একটা কাজ নয়। রোজ আরও অজস্র কাজ থাকে।’’

বায়ুদূষণ রোধে ব্যর্থ হওয়ার জন্য গত নভেম্বরেই রাজ্যকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে নির্মাণস্থলে পরিবেশ-বিধি না মানাকেও দায়ী করা হয়েছিল। তার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ‘চাপে’ থাকা শুরু হয় পুরসভার। ফের যাতে জাতীয় পরিবেশ আদালতের আতসকাচের তলায় পড়তে না হয়, তাই নড়চড়ে বসেছেন পুরকর্তারা।

প্রসঙ্গত, নির্মাণস্থলের দূষণ শুধু কলকাতাতেই নয়, সারা দেশেই অন্যতম উদ্বেগের কারণ বলে রাজ্য পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর। কারণ নির্মাণকাজ চলার সময়ে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম ১০) পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর সারা দেশে প্রায় আড়াই কোটি টন নির্মাণ-বর্জ্য তৈরি হয়। সেই বর্জ্য থেকে দূষণ কমানোর জন্য ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ‘কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেমোলিশন ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুল্‌স, ২০১৬’ জারি করা হয়। তার পরে বছরখানেক আগে ‘ডাস্ট মিটিগেশন’ নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্র। সেখানেও নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণের কাজ এবং ভাঙাভাঙির কাজের সময়ে কী কী নিয়ম মানতে হবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক। এত কিছু সত্ত্বেও বহু জায়গায় সেই সব নিয়ম মানা হয় না বলে অভিযোগ।

যদিও পরিবেশ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দারের দাবি, ‘‘নির্মাণস্থলের দূষণের বিষয়টি বিল্ডিং দফতর ও জঞ্জাল সাফাই দফতর যৌথ ভাবে দেখছে। কোনও বাড়ির একটি তল তৈরি হয়ে গেলে আর রাস্তার উপরে ইমারতি দ্রব্য ফেলে রাখা যাবে না। সেগুলি বাড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে নিতে হবে। তার পরেও রাস্তায় ইমারতি দ্রব্য ফেলে রাখলে সংশ্লিষ্ট নির্মাতা সংস্থাকে নোটিস দেওয়া হবে। প্রয়োজনে কাজও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Environment Court KMC Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy