Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Dilapidated House

KMC: পুর ওয়েবসাইটে উঠতে পারে বিপজ্জনক  বাড়ির তালিকা

সেই সংশয় দূর করতেই এই পরিকল্পনা বলে পুরসভা সূত্রের খবর। এর ফলে একাধিক উদ্দেশ্য সফল হবে বলে মনে করছেন পুরকর্তারা।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২১ ০৫:১২
Share: Save:

সংখ্যা নিয়ে ‘ধন্দ’ মেটাতে বিপজ্জনক বাড়ির তালিকা পুরসভার ওয়েবসাইটে দেওয়া যায় কি না, তা পুর প্রশাসনের অভ্যন্তরে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর। সব কিছু ঠিক থাকলে খুব দ্রুত শহরের বিপজ্জনক বাড়ির পূর্ণাঙ্গ তালিকা ওয়েবসাইটে দেওয়া হতে পারে। শেষ পর্যন্ত ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এই প্রথম শহরে কত বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে তা জানতে পারবেন শহরবাসী।

এর ফলে কোন ওয়ার্ড, বরোয় কতগুলি বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে বা তার ঠিকানা যেমন বিস্তারিত জানা যাবে, তেমনই কোনও পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়লে সেটি বিপজ্জনক বাড়ির তালিকাভুক্ত ছিল কি না, তা জানতে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে পুরকর্তাদের তথ্য হাতড়াতে হবে না। কারণ পুরকর্তাদের অভিজ্ঞতা বলছে, বিপজ্জনক বাড়ির বোর্ড লাগানো হলেও বাড়ির মালিক বা ভাড়াটেরা তা খুলে ফেলে দেন। ফলে দুর্ঘটনার সময়ে সেই বাড়িটি সম্পর্কে তাৎক্ষণিক ভাবে প্রয়োজনীয় তথ্য জোগাড় করাটা মুশকিল হয়ে যায়। কিন্তু সেই তালিকা ‘ডিজিটাইজড’ আকারে থাকলে তা দ্রুত জানা সম্ভব হবে। পুর প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘আমরা সর্বতোভাবে চেষ্টা করছি ওয়েবসাইটে তালিকাটি তুলে দেওয়ার জন্য। কারণ, সমস্ত ক্ষেত্রেই তথ্যে স্বচ্ছতার উপরে জোর দিচ্ছেন পুর কর্তৃপক্ষ। বিপজ্জনক বাড়িও তার ব্যতিক্রম নয়।’’

তবে একই সঙ্গে সেই পুরনো প্রশ্নই ফের মাথাচাড়া দিয়েছে যে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বিপজ্জনক বাড়ির তালিকা জানা যাবে ঠিকই, কিন্তু অতর্কিতে বাড়ি ভেঙে পড়ার সমাধান করা যাবে কি? বিপজ্জনক বাড়ি সংক্রান্ত আইনগুলি কি পুরসভা এ বার থেকে যথাযথ প্রয়োগ করবে? যার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে বলছেন— আসলে আইন থাকে আইনের বইয়ে, বৃষ্টি আসে নিয়ম করে, পুরনো বাড়ি ভাঙে আর বাড়ি ভেঙে নিহত হওয়া মৃতের তালিকায় আরও কিছু নাম যুক্ত হয় শুধু! পুরনো বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে থাকে নিথর দেহ।

এক নগর পরিকল্পকের কথায়, ‘‘এটা যেন একটা অন্ধ গলি তৈরি হয়েছে! এখান থেকে মুক্তির দিশা প্রশাসনের কাছে না থাকলে কার কাছে থাকবে?’’ শহরের এক স্থপতির আবার বক্তব্য, ‘‘প্রতি বছর এরকম বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনায় প্রাণহানি হয়। কিন্তু ভয় লাগছে এটা ভেবে যে, অন্য সব কিছুর মতো এ বিষয়েও আমরা ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি না তো! না হলে কী ভাবে বছরের পর বছর এই ঘটনা ঘটতে পারে?’’

এমনিতে শহরে বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা কত?— এই প্রশ্নের ক্ষেত্রে পাঁচ-ছ’বছর আগে পুরসভার উত্তর ছিল তিন-সাড়ে তিন হাজার। আবার সাম্প্রতিক সময়ে লাগাতার পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুরসভা সূত্রের খবর, এখনও বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজারই! ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ক্যালেন্ডারে বছর পাল্টায়, তারিখ পাল্টায়, পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়ার ঠিকানার বদল হয়, বদলে যায় বাড়ি ভেঙে মৃত ব্যক্তিদের পরিচয়ও। কিন্তু তার পরেও শহরে বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা কী ভাবে প্রায় একই থেকে যায়?

পুরকর্তাদের একাংশের অবশ্য যুক্তি, শহরের বয়স বৃদ্ধির পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নগরকেন্দ্রিক বৃষ্টির চরিত্রে আমূল পরিবর্তনের কারণে পাঁচ বছর আগেও বিপজ্জনক ছিল না, এমন বাড়িও বৃষ্টির জল শুষে এবং প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিপজ্জনক বাড়ির তালিকায় ঢুকে গিয়েছে। সে কারণে তালিকায় বড়সড় তেমন পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু তাই বলে সংখ্যাটা সেই তিন-সাড়ে তিন হাজারের মধ্যেই ঘোরাফেরা করে কী ভাবে? সংশয় তৈরি হয়েছে তা নিয়েই!

সেই সংশয় দূর করতেই এই পরিকল্পনা বলে পুরসভা সূত্রের খবর। এর ফলে একাধিক উদ্দেশ্য সফল হবে বলে মনে করছেন পুরকর্তারা। বিপজ্জনক বাড়িগুলির ঠিকানা উল্লিখিত থাকার ফলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড, বরোর বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকবেন। সেক্ষেত্রে বাড়ির অবস্থা বুঝে তা খালি করার প্রয়োজন হলে বা বিপজ্জনক অংশ ভাঙার প্রয়োজন হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় পুলিশ-প্রশাসনের কাজ সহজ হয়ে যাবে। কারণ পুরকর্তাদের আশা, বাড়ি ভেঙে ক্রমাগত প্রাণহানির ঘটনায় কোনও দায়িত্ববান, সংবেদনশীল নাগরিকই নিষ্ক্রিয় থাকবেন না। অর্থাৎ বিপর্যয় সামলানোর ক্ষেত্রে যে জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের উপরে জোর দেওয়া হয়, সেই একই ভাবে বিপজ্জনক বাড়ির ক্ষেত্রেও জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণকেই নিশ্চিত করতে চাইছেন পুর কর্তৃপক্ষ।

তবে শুধু বিপজ্জনক বাড়ির তালিকা ওয়েবসাইটে থাকবে নাকি বাড়িতে বর্তমানে কত বাসিন্দা রয়েছেন, তালিকায় সেই তথ্যও থাকবে— সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে পুরসভা সূত্রের খবর।

অন্য বিষয়গুলি:

Dilapidated House KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy