Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Bantala

KMC Election 2021: জলাভাব থেকে সাপের উপদ্রব, আঁধারেই বানতলা

কলকাতা পুরসভার সংযোজিত ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের বানতলা-নিউ বানতলা এলাকাটি ঘুরে দেখলে এমন দৃশ্যই চোখে পড়বে।

বেহাল: বানতলার কোথাও খাল পেরোনোর জন্য ভরসা নড়বড়ে সাঁকো। কোথাও আবার মাটির অপরিসর রাস্তায় ভোগান্তি।

বেহাল: বানতলার কোথাও খাল পেরোনোর জন্য ভরসা নড়বড়ে সাঁকো। কোথাও আবার মাটির অপরিসর রাস্তায় ভোগান্তি। নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:০৯
Share: Save:

যেন সুন্দরবনের কোনও প্রত্যন্ত গ্রাম!

বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে যাতায়াত। ঘন জঙ্গলে মাটির বাড়ির পিছনে চট দিয়ে ঘেরা শৌচালয়। সরু রাস্তায় সাইকেল ছাড়া অন্য যানবাহন চলাচলের পরিসরটুকু নেই। পরিস্রুত পানীয় জল তো দূরের কথা, এলাকায় একটি টিউবওয়েলও খুঁজে পাওয়া ভার। পুকুরের পচা জলে স্নান আর পানীয় জল কিনে খাওয়া ছাড়া উপায় নেই স্থানীয়দের।

কলকাতা পুরসভার সংযোজিত ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের বানতলা-নিউ বানতলা এলাকাটি ঘুরে দেখলে এমন দৃশ্যই চোখে পড়বে। এলাকার বাসিন্দা, বছর পঞ্চাশের নিমাই মণ্ডল জানালেন, সারা বছরই সন্ধ্যার পরে সাপের ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোন না অনেকে। রাস্তার আলো বলতে ছিল বাঁশের খুঁটিতে লাগানো বাল্ব। বছর দশেক আগে বাল্ব খারাপ হয়ে যাওয়ার পরে আর তা লাগানো হয়নি। ঝড়-জলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে বাঁশের খুঁটিও। নিমাইয়ের স্ত্রী অনু মণ্ডলের কথায়, ‘‘সন্ধ্যার পরে বাড়ির চার দিকে ঘুঁটে জ্বালাতে হয়। এখানে চন্দ্রবোড়া সাপ কিলবিল করে। ছোবল দিলে আর কিছু করার থাকবে না। তাড়াতাড়ি যে হাসপাতালে নিয়ে যাব, তা-ও সম্ভব নয়। রাস্তার যা অবস্থা! সাইকেল ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই তো সব শেষ হয়ে যাবে!’’

এলাকার অধিকাংশ মানুষ মৎস্যজীবী, স্থানীয় ভেড়িতে শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁদের এক জন, নিমাই সাঁপুই বলেন, ‘‘মাসে হাজার দশেক টাকা আয় হয়। আর প্রতিদিন জল কিনতেই খরচ ৪০ টাকা। জল কিনব, না সংসার চালাব!’’ পরিস্রুত পানীয় জলের জোগান না থাকায় বানতলা, নিউ বানতলা, মুন্ডাপাড়া, পূর্ব পঞ্চানন, চৌবাগা, পশ্চিম চৌবাগা, নোনাডাঙা এলাকায় জল কিনে খাওয়া ছাড়া উপায় নেই।

তবু উন্নয়ন বা পুর পরিষেবার প্রশ্নে মুখ খুলতে নারাজ স্থানীয়েরা। মুন্ডাপাড়ার এক মৎস্যজীবী সাফ বললেন, ‘‘অভিযোগ করলে রাতে হামলা হবে, শাসানি দেবে। কাজে যাওয়া বন্ধ করে দেবে।’’ মুন্ডাপাড়ায় ছোট ছোট ঝুপড়ি, অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তায় জমে জল। ওই মৎস্যজীবী আরও বললেন, ‘‘ঝড়বৃষ্টিতে ঝুপড়ি ভেঙে গেলে সাহায্য মেলে না। উল্টে নতুন ঝুপড়ি তৈরি করতে স্থানীয় নেতা-পুলিশকে টাকা দিতে হয়। বছর চারেক হল এই নিয়ম শুরু হয়েছে।’’ তবু কর্মসংস্থানের স্বার্থে কলকাতার কাছাকাছি থাকতে চান বলেই মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।

বাইপাস লাগোয়া ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডেই রয়েছে শহরের অন্যতম আকাশচুম্বী বহুতল। অথচ, সেই আবাসন থেকে মাত্র ২৫০-৩০০ মিটার দূরের এই এলাকাগুলিতে এখনও অন্ধকার, জলাজঙ্গল, সাপের রাজত্ব। ওয়ার্ডের ঘিঞ্জি মার্টিনপাড়া এলাকায় আবার রাস্তার পাশে আবর্জনার স্তূপ, একের পর এক অবৈধ নির্মাণ।

কলকাতা পুরসভার নথি অনুযায়ী, ১৯৮৪ সালে যাদবপুর পুরসভার বিলুপ্তি ঘটে এবং সেই ১৪টি ওয়ার্ড সংযোজিত হয় কলকাতা পুরসভার সঙ্গে। সেগুলির মধ্যেই রয়েছে ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডটি। ১৯৮৫ সালে সংযোজিত ওয়ার্ডগুলির প্রথম নির্বাচনে জিতে কাউন্সিলর হন প্রাক্তন পুরকর্তা ও মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। এর পরে কেটেছে প্রায় ৪৭ বছর। কিন্তু সংযোজিত ওয়ার্ডগুলির কোনও উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ। কান্তিবাবু বলেন, ‘‘ওই সব এলাকা আগে জঙ্গল ছিল। কিছু কিছু বসতি এলাকাও ছিল। নানা জায়গায় প্রথমে রাস্তা তৈরি করা হয়, কিছু পাকা রাস্তাও হয়। কিন্তু পরে ওই সব এলাকা নিয়ে আর হয়তো ভাবনাচিন্তা করা হয়নি, তাই এই অবস্থা।’’

ওই ওয়ার্ডে তৃণমূলের বিদায়ী কোঅর্ডিনেটর শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই এলাকাগুলি উন্নয়নের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু দু’বছর করোনার কারণে ঠিকমতো কাজ করা যায়নি।’’ কিন্তু পাঁচ বছরে উন্নয়নের পরিকল্পনা কেন নেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।

এ বারের নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী সুশান্ত ঘোষ (স্বরূপ) ইতিমধ্যেই প্রচার শুরু করেছেন। তাঁর আশ্বাস— এত দিন যে কাজ হয়নি, এ বার তা হবে। সিপিএম প্রার্থী তপন মালিক বলেন, ‘‘ওই সব এলাকায় যতটুকু উন্নয়ন, সব বাম আমলেই হয়েছে। গত দু’বছর আমাদের রেড ভলান্টিয়াররা মানুষের পাশে ছিলেন। এ বার ভোটে জিতলে ওই এলাকার উন্নয়ন হবে।’’ বিজেপি প্রার্থী মেঘনাথ সাহার মন্তব্য, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে ওই এলাকায় আমরাই এগিয়ে। মানুষ আমাদেরই পাশে রয়েছেন।’’

ভোটের আগে ফের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারা। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতিতে আর ভুলতে নারাজ ওই সব এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের কথায়, ‘‘কয়েক দশক ধরে নেতাদের আশ্বাস শুনতে শুনতে ক্লান্ত। এখন ও সব কথা শুনলেও হাসি পায়!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bantala
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE