ব্যাহত: গোলমালের জেরে উল্টে ফেলে দেওয়া হয়েছে ইভিএম, বন্ধ রয়েছে ভোটগ্রহণ। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
‘‘কলকাতার ভোটে কী হবে, বাদ দিন! উত্তরপ্রদেশের ভোটে কী হচ্ছে, বলতে পারেন?’’
কলাকার স্ট্রিট লাগোয়া একটি গলি থেকে প্রশ্নটা ছুটে এল। এবং মুহূর্তে পাড়া কাঁপিয়ে তৃণমূল বনাম বিজেপি-র তরজা শুরু। অধুনা বালিগঞ্জবাসী, বড়বাজারের ব্যবসায়ী গোপাল ব্যাস বা বাগুইআটির কপিলকুমার আচার্যের সঙ্গে ভোট উপলক্ষেই দেখা দুই পুরনো বন্ধু কিসান দাস ও মহেন্দ্র পুরোহিতের। কিন্তু কপিলকুমারের মুখে যোগী সরকারের কুম্ভমেলার প্রশংসা শুনেই বাকিরা ঝাঁঝিয়ে উঠে তাঁকে কোণঠাসা করলেন। ‘‘মোদী সরকার তো চাকরিতে ভরিয়ে দিয়েছে!’’ ‘‘ব্যবসা নষ্ট করে বিজেপি কি রামমন্দির গড়ে ভাত দেবে?’’— পরপর তির্যক খোঁচায় কপিলকুমারের তখন মুখ লাল। একটু বাদেই যোধপুর-কলকাতা টো টো করা ব্যবসায়ী গোপাল সহাস্যে বললেন, ‘‘আসলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রোড শোয়ের পরে বড়বাজারেও তৃণমূলের জোর বেড়ে গিয়েছে। দেখবেন, বিজেপি-র খাস তালুকেও শাসকদল এতটুকু জমি ছাড়ছে না।’’
এ কথার আক্ষরিক প্রমাণ মিলল অদূরেই, মহেশ্বরী ভবনের সামনে। কার্যত ‘পুলিশম্যান মার্কিং’-এ সেখানে কয়েক হাত দূরত্বে পরস্পরকে মাপছেন বিজেপি-র গত পাঁচ বারের জয়ী প্রার্থী, প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র মীনাদেবী পুরোহিত এবং তৃণমূলের প্রতিস্পর্ধী শ্যামপ্রকাশ পুরোহিত। সকালে ‘গোঁজ’ প্রার্থী (নির্দল) প্রিয়াঙ্কা দেবনাথের সঙ্গে তিনি বচসায় জড়িয়ে পড়েন। মীনাদেবীর ‘হেনস্থা’ হওয়ার অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে চাউর হয়ে যায়। নানা হিন্দি চ্যানেলে তৃণমূলের হয়ে বলিয়ে-কইয়ে বলে পরিচিত শ্যামপ্রকাশ সংবাদমাধ্যমের সামনে ‘‘এ সবই মীনাদেবীর নৌটঙ্কি’’ বলে তোপ দাগলেন। আর মীনাদেবী বুথের বাইরে তাঁর নাকের ডগায় বসে কার্যত নিজের ‘কন্ট্রোল রুম’ সামলালেন। ভোটারেরা অনেকেই তাঁকে আশ্বস্ত করলেও শ্যামপ্রকাশের অবশ্য দাবি, ‘‘এ বার কিছুতেই উনি জিতবেন না।’’
বিদায়ী পুরবোর্ডে বিজেপি-র সাকুল্যে পাঁচ জন প্রতিনিধির মধ্যে তিন জনই বড়বাজারের ওয়ার্ডের। ২২ নম্বরে মীনাদেবী ছাড়া ২৩ নম্বরে বিজয় ওঝা বা ৪২ নম্বরে সুনীতা ঝাওয়ারকেও দাপিয়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার, নন্দরাম মার্কেটের ডিজ়াস্টার ম্যানেজিং কমিটির কর্তা সুনীল আগরওয়ালের কথায়, ‘‘বিধানসভা ভোটের পরিবেশের সঙ্গে পুরভোটের তুলনাই হবে না! তখন সিআরপি-র ভয়ে বাড়ি থেকে কেউ বেরোচ্ছিল না। এ বার পাড়ায় পাড়ায় আড্ডা মেরে বেড়াতেও বাধা নেই।’’
তবে এই আপাত ফুরফুরে, শান্তিপূর্ণ মেজাজটাই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টাল খেয়েছে। রবীন্দ্র সরণির উপরে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডিডু মাহেশ্বরী স্কুল, কলাকার স্ট্রিটের মেধ ক্ষত্রিয় ধর্মশালায় ধাক্কাধাক্কি বা ভোটযন্ত্রের ক্ষতি করার চেষ্টা থেকে বুথের দরজা ভাঙচুর— সবই দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। কলাকার স্ট্রিটের বুথে ‘বিজেপি হায় হায়’ বলে চেঁচিয়ে, কার্যত বুথ দখল করে যথেচ্ছ ইভিএম টেপার অভিযোগও উঠেছে। তবে তৃণমূলের প্রবীণ প্রার্থী সাওয়ারমল আগরওয়াল থেকে ওয়ার্ড সভাপতি স্বপন বর্মণ, সব কিছুর জন্য অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বিজেপি-র দিকেই।
কিন্তু শেষ হাসিটা কে হাসবেন? বড়বাজারে বরাবরের রীতিমাফিক কম ভোট পড়াটাই ভাবাচ্ছে সবাইকে। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী রাজীব সিংহের দুশ্চিন্তা, ‘‘কলাবাগান, মেছুয়ার মুসলিম ভোট এবং অন্যত্র হিন্দু ভোট— সবই কম পড়েছে।’’ উত্তর কলকাতার তৃণমূল সভাপতি তাপস রায় অবশ্য আশাবাদী, ‘‘কাজের জন্যই মানুষ আমাদের জেতাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy