Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

এন আর এসে ডেঙ্গি, কড়া চিঠি পুরসভার

চিঠিতে বলা হয়েছে, বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও হাসপাতালের চিকিৎসক এবং পড়ুয়াদের হস্টেলের জঞ্জাল পরিষ্কার করা হয়নি। যার জেরে হস্টেল চত্বর এবং সংলগ্ন এলাকায় ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে।

এন আর এসের পড়ুয়াদের হস্টেলের সামনে জমেছে আবর্জনা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

এন আর এসের পড়ুয়াদের হস্টেলের সামনে জমেছে আবর্জনা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৩৬
Share: Save:

রোগীর পরিজনেদের সতর্ক করছে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম’। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সচেতন করবে কে? ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ে এনআরএস কর্তৃপক্ষকে দেওয়া কলকাতা পুরসভার পত্রাঘাত এই প্রশ্নই তুলে দিল। চিঠিতে বলা হয়েছে, বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও হাসপাতালের চিকিৎসক এবং পড়ুয়াদের হস্টেলের জঞ্জাল পরিষ্কার করা হয়নি। যার জেরে হস্টেল চত্বর এবং সংলগ্ন এলাকায় ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে।

চিঠিতে ভুল কিছু বলা হয়নি বলেই দাবি হস্টেলের আবাসিকদের। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এনআরএসের ‘বয়েজ হস্টেলে’ এক জন ছাত্রের ডেঙ্গি এবং আরও এক ছাত্রের ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া হয়েছে। ম্যালেরিয়ার যে গোত্র সম্পর্কে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলেন, ‘‘ভাইভ্যাক্স ও ফ্যালসিপেরামের মধ্যে ফ্যালসিপেরাম সব থেকে বিপজ্জনক। এতে মারাত্মক জটিলতা দেখা দেয়। সে জন্য ফ্যালসিপেরামকে মালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া বলা হয়।’’ ছাত্রীদের হস্টেল ‘লেডি এলিয়টে’ দু’জন ছাত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড় খেয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের অবশ্য ফ্যালসিপেরাম নয়, ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। দু’জনের মধ্যে এক জন আবার ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি টাইফয়েডেরও শিকার।

আগামিকাল, সোমবার দ্বিতীয় বর্ষ এবং বৃহস্পতিবার তৃতীয় বর্ষের চিকিৎসক ছাত্রদের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর থেকে চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা শুরু। এই অবস্থায় মশাবাহিত রোগের আক্রমণে আতঙ্কিত পড়ুয়ারা। জুনিয়র চিকিৎসকদের কয়েক জন বলেন, ‘‘এ বছর নতুন নয়। প্রতি বছর জঞ্জাল ঠিক মতো পরিষ্কার না হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের ভুগতে হয়।’’
শনিবার হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, লেডি এলিয়ট এবং কলেজ অব নার্সিংয়ের মাঝের গলিতে মশারি টাঙিয়ে শুয়ে রয়েছেন বছর পঞ্চাশের এক মহিলা। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে তাঁর। সানিশ্রী দেবী নামে মহিলার পায়ের কাছে বসে রয়েছেন স্বামী টিঙ্কা রাম। শুক্রবার থেকে স্ত্রী জ্বরে আক্রান্ত বলে জানান তিনি। এ দিন দুপুর পর্যন্ত মহিলার রক্তপরীক্ষা করাননি পরিবারের সদস্যেরা। এই ছবির কাছেই তখন ‘পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে’ ঘোষণা হচ্ছে, সচেতনতা মূলক কিছু পদক্ষেপ করলেই ডেঙ্গি রোধ সম্ভব। সবুজ ও স্বচ্ছ হাসপাতাল রাখতে রোগীর পরিজনেদের প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সচেতনতা বার্তা, আবর্জনা-জঞ্জালে যেন কেউ জল জমতে না দেন।

এই ঘোষণার উল্টো দিকে রয়েছে কলকাতা পুরসভার ছ’নম্বর বরোর একটি চিঠি। সেই চিঠি অনুযায়ী, এলিয়ট ও বয়েজ হস্টেলে জঞ্জাল, আবর্জনা সাফাই না হওয়ায় হাসপাতাল চত্বরে যে মশাবাহিত রোগ ছড়াচ্ছে তা নিয়ে গত অগস্টে এনআরএস কর্তৃপক্ষকে সচেতন করেছিল পুরসভা। কিন্তু তার পরেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। যার ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। সেই সঙ্গে হাসপাতাল চত্বরে প্রকোপ বেড়েছে ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গির।

স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার মতো রোগ যেহেতু দ্রুত ছড়ায় সে জন্য সব সময়ে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। সেখানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে বারবার চিঠি দিয়েও সচেতন করা যাচ্ছে না, এটা কাম্য নয়।’’

সব শুনে হাসপাতাল সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলকাতা পুরসভার চিঠি পেয়েছি। আমরা নিয়মিত পরিষ্কার করছি। এখন সব জায়াগাতেই মশাবাহিত রোগ হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা খুব সমস্যায় পড়ছেন বলে তেমন কিছু শুনিনি। ওয়ার্ডেও নিয়মিত সাফাই হয়। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

NRS KMC Dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy